জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক বলতে এত সংকোচ কেন গণমাধ্যমকে রিজভী

যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদেরকেও আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়—বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভীর মন্তব্য।
মঙ্গলবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের অডিটোরিয়ামে উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের উদ্যোগে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারামুক্তি দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।
আরও পড়ুন: নির্বাচনে বাধা দেওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে, আরও আসবে: প্রধান উপদেষ্টা
গণমাধ্যমের উদ্দেশে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এড. রুহুল কবির রিজভী বলেন, যিনি দেশে বহু দলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তে শহীদ হয়েছেন, সেই জিয়াউর রহমানের নামের আগে আজও অনেক গণমাধ্যমে “প্রয়াত” শব্দটি ব্যবহার করা হয়। অথচ স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবেও তাঁকে স্বীকৃতি দেওয়া হয় না। আমি সেই সব গণমাধ্যমকে বলতে চাই—আপনারা কি শেখ হাসিনার আমলে বঙ্গবন্ধু শেখ হাসিনা ছাড়া অন্য কারও কথা বলতে পেরেছেন? জাতির পিতা ছাড়া অন্য কোনো প্রসঙ্গ তুলতে পেরেছেন? যদি তুলতেন, তাহলে কি আপনাদের অস্তিত্ব থাকত? আপনারা ১৫ আগস্ট নিয়ে বড় বড় শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু জিয়াউর রহমানকে শহীদ বলা বা স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে উল্লেখ করতে গিয়ে আপনাদের এত সংকোচ কেন?
তিনি বলেন, তারপরও আমরা দেখি, গণতন্ত্রে মত প্রকাশের কিছুটা স্বাধীনতা এখনও আছে। কিন্তু আপনাদের এই আচরণে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের হৃদয়ে যে আঘাত দিচ্ছেন, সেই আঘাত কোনো দিন ভোলা যাবে না।
আরও পড়ুন: নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করতে যা যা দরকার সব পদক্ষেপ নিচ্ছে সরকার: প্রেস সচিব
রিজভী বলেন, আমরা প্রত্যেকে ভুক্তভোগী। সবাই সর্বনিম্ন ৫০০ মামলায় আক্রান্ত। আমরা যারা আক্রান্ত, কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কেউ লাঞ্ছিত হোক, সেটা চাই না। কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।
জাতীয় পার্টির মহাসচিবের এক বক্তব্যকে উল্লেখ করে রিজভী বলেন, জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেছেন যে, জাতীয় পার্টির দায় এখন বিএনপিকে নিতে হবে। বিএনপি তো এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় নেই। এখনো তো অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন হয়নি। তাহলে আপনি (জাতীয় পার্টির মহাসচিব) কিসের দায়ের কথা বলছেন! নুরুল হক নুর ডাকসুর সাবেক ভিপি। তাকে একটি কার্যালয়ের মধ্যে আক্রমণ করা হলো। আমরা প্রথমে শুনেছিলাম জাতীয় পার্টির সাথে গোলমাল। কিন্তু তাকে (নুর) যে আঘাত করছে, সেই লাল শার্ট পরা লোকটা কে? যে কেউ কারও বিরুদ্ধে কথা বলতে পারে, এটা গণতন্ত্রের স্বীকৃত একটা পন্থা।
যারা রাজনীতির কথা বলছেন, তারা বিএনপির বিরুদ্ধে কথা বলতে পারেন। বিএনপির যদি কোথাও সমালোচনা করার থাকে, তাহলে বিএনপি সেখানে সমালোচনা করবে। আপনি (জাতীয় পার্টির মহাসচিব) আবার দায়িত্ব নেয়ার কথা বলছেন কেন যে, বিএনপি পার্টির দায়িত্ব নেবে। আপনারা কারা? যখন ইলিয়াস আলী গুম হয়, তখন কোথায় ছিলেন? যখন চৌধুরী আলম, সাইফুল ইসলাম হিরু গুম হয়, তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল? যখন ছাত্র নেতা এবং যুব নেতারা গুম হয়, তখন জাতীয় পার্টি কোথায় ছিল?—তিনি বলেন।
তিনি আরও বলেন, যখন ২০১৪ সালের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রে কোনো ভোটার নেই, সেখানে কুকুর-বিড়াল এবং গরু-ছাগল ঘুরে বেড়াচ্ছে, সেই নির্বাচনে যাবো না যাবো না করতে করতে আপনারা (জাতীয় পার্টি) গেলেন। ২০১৮ সালে বিএনপি নির্বাচনে যাওয়ার ঘোষণা দেয়ার পর প্রায় ৪৫ জন প্রার্থীকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হলো। বিএনপি নির্বাচনে আসুক, সেটা শেখ হাসিনা চায়নি। সেদিন জাতীয় পার্টি কী ভূমিকা রেখেছে?
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের নির্বাচনের আগে জিএম কাদের ভারতে গেলেন। তখন সাংবাদিকরা তাকে (জিএম কাদের) প্রশ্ন করলেন যে, আপনার সাথে কী কথা হলো। তখন জিএম কাদের বলেছেন যে, ওদের (ভারত) পারমিশন ছাড়া কিছু বলতে পারবো না। এই হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আপনি কি ভারতের কোনো রাজনৈতিক দল? নাকি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দল? এই আপনাদের মেরুদণ্ড? এই আপনাদের নীতি এবং আদর্শ? এই আপনাদের চরিত্র?—রিজভী বলেন।
বিএনপির এই সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, আমরা কোনো মব সংস্কৃতিতে বিশ্বাস করি না। কে রাজনীতি করবে কি করবে না, সেটা আইনের ব্যাপার। এটা সরকারের ব্যাপার। বিএনপি কোথাও কোনো মব সংস্কৃতি তৈরি করেনি এবং বিএনপি উশৃঙ্খল জনতন্ত্রে বিশ্বাসী নয়। কিন্তু বিএনপির তো একটা অ্যানালাইসিস আছে যে, জাতীয় পার্টির ভূমিকা কী ছিল, আরও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ভূমিকা কী ছিল।
বিএনপি নেতা বলেন, ভয়ংকর রক্তপিপাসু শেখ হাসিনার আওয়ামী ফ্যাসিবাদকে কারা রক্ষা করেছে, কারা ১৬ বছর জনগণের লক্ষ কোটি টাকা পাচারের সুবিধা করে দিয়েছে, কারা এই দেশকে আওয়ামী ভয়ংকর স্বৈরতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব পালন করেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে জাতীয় পার্টি। আপনারা একটা কুলিং টাইম চান। ২০০৮-২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর শেখ হাসিনা ২ বছরের একটা কুলিং টাইম দিয়েছেন। তার পরে টর্চার করেছেন। বিএনপি কখনো টর্চারে বিশ্বাস করে না। কুলিং টাইম আবার কিসের? আর টর্চারই বা কিসের? বিএনপি তো ক্ষমতায় নেই। এখন তো নির্বাচনই হয়নি। বিএনপি কখনো কোনো অবস্থাতেই বেআইনি নির্যাতন, অত্যাচারে বিশ্বাসী নয়।—রিজভী বলেন।
রুহুল কবির রিজভী বলেন, আমরা প্রত্যেকে ভুক্তভোগী। সবাই সর্বনিম্ন ৫০০ মামলায় আক্রান্ত। আমরা যারা আক্রান্ত, কিন্তু আমাদের সামনে অন্য কেউ লাঞ্ছিত হোক, সেটা চাই না। কিন্তু যারা ফ্যাসিবাদকে সমর্থন ও ফ্যাসিবাদের বয়ানে সুর মিলিয়েছে, তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা উচিত। জনগণ তাদের বিচার দেখতে চায়।
উত্তরাঞ্চল ছাত্র ফোরামের প্রধান উপদেষ্টা আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. মওদুদ হোসেন আলমগীর পাভেল, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরীসহ আরও অনেক নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।