জঙ্গিবাদ নেই বলে থেমে থাকার সুযোগ নেই, সতর্ক থাকতে হবে: এটিইউ প্রধান
দেশের বিভিন্ন মহল থেকে বলা হলেও যে দেশে বর্তমানে কোনো ধরনের জঙ্গিবাদ নেই, তাতে পুলিশের এন্টি টেররিজম ইউনিট (এটিইউ) বা বিশেষায়িত নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন নেই কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এটিইউ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. রেজাউল করিম বলেছেন, “না, নেই বললে আগামীতে কেউ করবে না—এ নিশ্চয়তা কি আমরা দিতে পারি? সেই কারণে আমাদের থেমে থাকার সুযোগ নেই। আমাদের আরও সিরিয়াসলি কাজ করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর বারিধারা ডিপ্লোম্যাটিক জোনে এটিইউ সদর দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: মধ্যরাতে ঢাকাসহ ১৫ জেলা প্রশাসক রদবদল ও নিয়োগ
এটিইউ প্রধান বলেন, “বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় ও সহনশীল মুসলিম দেশ, যা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে বিশ্বাসী। জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ, উগ্রবাদ, মাদক এবং বিশেষ করে যুবকদের মধ্যে ক্রমবর্ধমান অনলাইন ও সাইবার অপরাধ থেকে দেশকে মুক্ত রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও বলেন, দেশের মাটি ও মানুষ সবার—সুতরাং এসব সমস্যা মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা অপরিহার্য। বিশেষায়িত ইউনিটের ভূমিকা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি জনসাধারণের সহযোগিতা ও গণমাধ্যমের ভূমিকা অনস্বীকার্য। সাধারণ মানুষকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করার জন্য ‘ইনফোমেট’ অ্যাপ ও একটি যোগাযোগ নম্বর চালু করা হয়েছে, যেখানে তথ্যদাতার গোপনীয়তা সর্বোচ্চ গুরুত্বে রাখা হবে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু
অতিরিক্ত আইজিপি রেজাউল করিম বলেন, “একটি মাত্র সন্ত্রাসী ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। স্বল্পশিক্ষিত ও বিভ্রান্ত মানুষ কীভাবে ভুল আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়—২০০৫ সালের সিরিজ বোমা হামলার উদাহরণ থেকে আমরা শিখতে পারি। সব ধর্মই শান্তির শিক্ষা দেয়; কোনো ধর্মই উগ্রবাদ বা সন্ত্রাসবাদকে সমর্থন করে না।”
তিনি গণমাধ্যমকে সঠিক বার্তা প্রচার এবং ধর্মকে অপব্যবহারকারী গোষ্ঠী চিহ্নিত করার আহ্বান জানান।
এক প্রশ্নের জবাবে এন্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান বলেন, “আমাদের দেশের মানুষ উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ বিশ্বাসী নয়। তবে কখনো কখনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কারণে বা দেশি-বিদেশি চক্রান্তে কেউ বিচ্যুত হতে পারে। সেই জন্যই আমাদের নজরদারি চলবে, যাতে ভবিষ্যতে কোনো ধরনের সন্ত্রাস বা উগ্রবাদের উদ্ভব না হয়।”
মালয়েশিয়ায় গ্রেফতার হওয়া ৩৬ জন নিয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, “তাদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। তারা সবাই শ্রমিক শ্রেণির মানুষ এবং তারা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিল না। তারা মনে করেছিল দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের সহায়তা করা হবে। মালয়েশিয়ার সরকারও তাদের ক্লিয়ার করেছে। তবে কারা এর পেছনে আছে তা জানার জন্য আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলমান রয়েছে।”
এটিইউ প্রধান বলেন, “আমি মনে করি বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় ও সম্প্রতির দেশ। এদেশে জঙ্গিবাদ বা উগ্রবাদের কোনো স্থান নেই। আমরা সতর্ক আছি যাতে কোথাও কোনো ঘটনার উদ্ভব না ঘটে। একটা ঘটনা দেশের ইমেজ ও জনসাধারণের নিরাপত্তার জন্য বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “এটিইউ শুধুমাত্র জঙ্গিবাদ দমনেই সীমাবদ্ধ নয়; ট্রান্সলেশনাল প্রাইম, সাইবার ক্রাইম ও হ্যাকিং-এর মতো সমস্যা মোকাবিলাতেও আমাদের শক্তিশালী হতে হবে। তাই থেমে থাকার সুযোগ নেই এবং আমাদের কাজ আরও জোরালোভাবে চালিয়ে যেতে হবে।”





