হাসিনার পিয়ন

পানি জাহাঙ্গীরের ৩০০ কোটি টাকা গেল কোথায়, ১০০ কোটি পাচারে মামলা

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:২৯ অপরাহ্ন, ৩১ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৮:২২ অপরাহ্ন, ৩১ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দপ্তরের প্রাক্তন পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম ওরফে পানি জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে একশ কোটি টাকার অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করেছে সিআইডি।

প্রশ্ন উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তার প্রিয় পানি জাহাঙ্গীরের ৪০০ কোটি টাকার মালিকানা রয়েছে এবং তিনি নিজস্ব হেলিকপ্টার নিয়ে চলাফেরা করেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী যেহেতু তার পিয়নের টাকার উৎস জানেন, তাই পিয়নের অবৈধ উপার্জিত সম্পদের বিষয়ে তার বক্তব্যের পর সরকারের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্ত শুরু করে।

আরও পড়ুন: একইদিনে নির্বাচন ও গণভোটে ৩ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয়ের চিন্তা

তদন্তকালীন সময়ে জাহাঙ্গীর আলমকে নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার সুযোগ দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী নিজেই গোয়েন্দা সংস্থার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পিয়ন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে চারশ কোটি টাকা অবৈধ উপার্জনের অভিযোগ তুলে তদন্ত নির্দেশ দিয়েছিলেন।

গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে গোয়েন্দা ও তদন্ত সংস্থাগুলো আরও নিবিড়ভাবে অনুসন্ধান চালাতে পেরেছে। সরকারের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) পানির জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে ১০০ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগে মামলা করেছে। প্রশ্ন উঠেছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে উল্লেখিত ৩০০ কোটি টাকা গেল কোথায়।

আরও পড়ুন: বর্তমান সংকট থেকে উত্তরণের পথ সরকারকেই খুঁজে বের করতে হবে: মির্জা ফখরুল

সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিটের প্রাথমিক অনুসন্ধানে উল্লেখযোগ্য প্রমাণাদি পাওয়ায় নোয়াখালীর চাটখিল থানায় মামলা নং–১১, তাং–৩১/১০/২০২৫ খ্রি. দায়ের করা হয়েছে। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ (সংশোধনী ২০১৫)-এর ধারা ৪(২)(৪) অনুযায়ী মামলাটি দায়ের করা হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার এক নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জাহাঙ্গীর আলম জাতীয় সংসদ সচিবালয়ে দৈনিক মজুরিভিত্তিক কর্মচারী হিসেবে কাজ করতেন। পরে ২০০৯ সালে আওয়ামী সরকার গঠনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে স্বল্প সময়ের জন্য ‘ব্যক্তিগত সহকারী’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই দায়িত্বই তাকে আর্থিকভাবে লাভবান করেছে বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে উঠে এসেছে।

২০১০ সালে তিনি ‘স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড’ নামে একটি কোম্পানি গঠন করে বিকাশের ডিস্ট্রিবিউশন ব্যবসা নেন। তবে এর আড়ালে তিনি অসংখ্য সন্দেহজনক ব্যাংকিং কার্যক্রম করেন। কোম্পানির নামে একাধিক ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অস্বাভাবিক অঙ্কের টাকা জমা হয়, যার বৈধ উৎস পাওয়া যায়নি এবং ব্যবসার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটির অ্যাকাউন্টগুলোতে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে বিভিন্ন ব্যাংকে মোট ৫৬৫ কোটিরও বেশি টাকা লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশ নগদে জমা হয়েছে দেশের নানা স্থান থেকে। এসব অর্থের উৎস অজানা এবং হুন্ডি ও মানিলন্ডারিং কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত বলে প্রাথমিক প্রমাণ মেলে।

জাহাঙ্গীর আলম তার স্ত্রী কামরুন নাহার ও ভাই মনির হোসেনের সহায়তায় দীর্ঘদিন ধরে অবৈধ অর্থ লেনদেন চালাচ্ছিলেন। জাহাঙ্গীর আলম ও তার স্ত্রী ২০২৪ সালের জুনে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান এবং বর্তমানে ভার্জিনিয়ায় অবস্থান করছেন। বিদেশে বিনিয়োগ বা সম্পদ ক্রয়ের সরকারি অনুমোদন না থাকা সত্ত্বেও তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছেন বলে প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণ পাওয়া গেছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম, তার স্ত্রী কামরুন নাহার, ভাই মনির হোসেন এবং প্রতিষ্ঠান স্কাই রি অ্যারেঞ্জ লিমিটেড যৌথভাবে ২০১০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন।

অপরাধের পূর্ণাঙ্গ তথ্য উদঘাটন, অপর সদস্যদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করার স্বার্থে সিআইডির তদন্ত ও অভিযান অব্যাহত রয়েছে।