বর্বর ফ্যাসিবাদকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছে একটি দল, জনগণ তাদের পুনজাগরণ হতে দেবে না: রিজভী

জামায়াতে ইসলামী ‘পতিত ফ্যাসিস্টদের সাথে কাজ করছে’ বলে মন্তব্য করেছেন রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব এই মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, ‘‘ অনেকে যারা বলেন, ফ্যাসিস্টদের প্রত্যাবর্তন ঘটানোর জন্য চিন্তা করছেন, তাদের সাথে বন্ধুত্ব করার জন্য চিন্তা করছেন তারা কী ইতিহাস থেকে কোনো শিক্ষা নেননি? আমাদের দেশে ইসলামপন্থি একটি রাজনৈতিক দল বরাবরই আমার মনে হয়েছে আওয়ামী লীগকে সন্তুষ্ট করার জন্য কাজ করছে…. তারা এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ পেয়েছেন শহীদ জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে… তারা(জামায়াতে ইসলামী) নিষিদ্ধ দল ছিলো… শহীদ জিয়া তাদেরকে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছেন।”
আরও পড়ুন: জোটে না এককভাবে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি: সারজিস আলম
‘‘ কিন্তু এমন কোনো তাদের মিটিং নাই, এমন কোনো তাদের কর্মসূচি নাই যে, তারা স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমানকে সমর্থন করেননি এবং তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন নাই। এরপরে আমরা দেখেছি, প্রতিটি ঘটনায় তারা আওয়ামী লীগের সাথে, আওয়ামী লীগের সিদ্ধান্তের সাথে এক হয়ে কাজ করেছেন।”
উদাহরণ তুলে ধরে রিজভী বলেন, ‘‘ ’৮৬ সালে নির্বাচন যাওয়া সেটাও তারা আওয়ামী লীগ নির্বাচনে গেছে.. মানুষকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে এক আর কাজ করেছে আারেক।ঠিক একই ভাবে তারা(জামায়াতে ইসলামী)ও করেছে। এরপরে আমরা দেখেছি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগ যে আন্দোলন করল সেই আন্দোলনেও তারা জ্বালাও-পোড়াও যে আন্দোলন হয়েছিলো সেই আন্দোলনেও আওয়ামী লীগের সাথে তারাও করেছে।”
আরও পড়ুন: দেশে ফিরে নির্বাচনী প্রচারণায় নেতৃত্ব দেবেন তারেক রহমান: আমান উল্লাহ আমান
‘‘বিভিন্ন জায়গায় ওই সময়ে তারা হত্যাও করেছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র টিটোকে শিবির (ইসলামী ছাত্র শিবির) গুলি করে হত্যা করেছিলো ১৯৯৫-৯৬ সালে যে আন্দোলন হয়েছিলো.. এটা তো কারো ভুলে যাওয়ার কথা নয়। ২০০৮ সালের নির্বাচনে যাওয়া… ম্যাডাম(খালেদা জিয়া)যেতে চাননি…তাদেরই নেতারা বাধ্য করেছিলো, না হলে তারা স্বতন্ত্রভাবে করবে। এখন আবার তারা স্বরুপে বেরিয়েছেন এবং আওয়ামী লীগের পূনর্বাসন চাচ্ছেন, ভারতের সাথে ভালো সম্পর্ক চাচ্ছেন। কিন্তু এটাও আমাদের মনে রাখতে হবে এই দেশটি শেখ হাসিনার মতো রক্ত পিপাসু দানবকে প্রশ্রয় দিয়েছে নিজ দেশের মানুষকে হত্যা করার জন্য।”
তিনি বলেন, ‘‘ কখনোই কোনো রক্ত পিপাসু, গণতন্ত্র ধ্বংসকারী এবং নিজের দেশের যে হত্যা করে ক্ষমতাকে চিরতরে আঁখড়ে রাখার যার ভাসনা ছিলো এরকম বাংলাদেশী মডেলে যে ফ্যাসিবাদ কায়েম করেছিলেন শেখ হাসিনা সেই ফ্যাসিবাদের পূনরুত্থান বা পুনর্জাগরণের কোনো সুযোগ বাংলাদেশে নাই।”
‘‘ এদেশের মানুষ মধ্যপন্থি, এদেশের মানুষ ধর্মভীরু কিন্তু গণতন্ত্র প্রিয়। তারা কথা বলতে চায় নির্ভয়ে, তারা এক-দুই বেলা কম খেলেও তাদের কন্ঠের আওয়াজ তীব্র করতে চায়। সেদেশের মানুষকে জোর করে ফ্যাসিবাদের নতুন ধারায় কেউ মনে করে যে নিয়ে আসতে চাইবে এটা জনগণ হতে দেবে না।”
‘সাবেক প্রধানমন্ত্রীর টেলি সংলাপ ভয়ংকর’
রিজভী বলেন, ‘‘ যে প্রধান মন্ত্রী সরাসরি গুলির জন্য নির্দেশ দিচ্ছেন এবং গতকালকে যে আলাতগুলো আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়েছে ডকুমেন্ট ও টেলিফোন কথোপকথনের ক্লিফসহ এসব যে কেউ শুনলে শিহরিত হয়ে উঠবে। আমরা যারা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, আন্দোলন করেছি, রাজনীতি করেছি আমরা প্রত্যেকে মৃত্যুর মুখোমুখি ছিলাম। শেখ হাসিনার বর্বরতা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি, নিজেরা উপীড়নের শিকার হয়েছি, দিনের পর দিন রিমান্ডে থেকেছি, মাসের পর মাস জেলখানায় থেকেছি… তার ভয়াবহতা আমরা দেখেছি। কিন্তু এর গভীরে যে আরও ভয়াবহতা ছিলো.. তারা একটি আন্দোলনকে দমানোর জন্য কী ভয়ংকর পরিণতির দিকে নিয়ে গিয়েছিলো সেটা এখন প্রতিদিনকার যে আলামতগুলো আদালতে জমা হচ্ছে, সেখানে উপস্থাপন করা হচ্ছে তা থেকে বুঝা যায়।”
‘‘ সাবেক প্রধান মন্ত্রীর টেলিফোন কথোপকথনের যে বিষয়গুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে তাতেই আমাদের মধ্যে উদ্বেগ-শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। যদি এই ফ্যাসিবাদী শক্তির আবার পুনরুত্থান ঘটে তাহলে ৫ আগস্টের আন্দোলনকামী মানুষ, গণতন্ত্রকামী মানুষের কী ভয়ংকর পরিণতি ভোগ করতে হবে সেটা চিন্তা করে শরীরের লোম শিহরে উঠে। হেলিকপ্টার থেকে গুলি করার নির্দেশ দিচ্ছেন, যত সরকারি ভবনে আগুন জ্বালিয়েছে, মেট্রোরেলের স্টেশনে যে আগুন লাগানো হলো সব শেখ হাসিনার নির্দেশে হয়েছে সেটা আজ সেই টেলিফোনের কথোপকথনে থেকে বেরিয়ে আসছে, সত্য বেরিয়ে আসছে। অথচ ওই সমস্ত নাশকতার ঘটনায় তখন আন্দোলনকারী মানুষদের ওপরে চাপানো হয়েছে। আমারকে ওই সময়ে মেট্রোরেল স্টেশনের পুড়ানোর মামলায় আসামী করা হয়েছিলো, নজরুল ইসলাম খানসহ আরও অনেকে সময়ে যারা গ্রেফতার হয়েছেন। অথচ এখন আমরা প্রমাণ পাচ্ছি এইসব ঘটনার সব নির্দেশনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজেই। নাশকতার যে অভিযোগ ওই সময় করা হয়েছে সেই নাশকতা তিনি(শেখ হাসিনা) নিজে সৃষ্টি করেছেন….। তিনি (শেখ হাসিনা) এমন এক সর্বনাশা খেলায় মেতেছিলেন যার ফলে দেশ, জাতি এবং মানুষের জানমাল বিপন্ন হয়েছিল ওইসময়ে।”
‘কতিপয় উপদেষ্টা-আমলারা কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন’
রিজভী বলেন, ‘‘ এই অন্তবর্তীকালীন সরকারের কিছু উপদেষ্টার কর্মকান্ডে সরকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন উঠছে।আজকের গণমাধ্যমে এসেছে, উপদেষ্টা সজীব ভূঁইয়া তার নিজ এলাকায় সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ নিয়েছেন….প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। এটা এক ধরনের বৈষম্য এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কাজ। তিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুযোগ কাজে লাগিয়ে নিজের এলাকা উন্নয়নের নামে ভবিষ্যতে এমপি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সাধারণ মানুষ।”
‘‘ একজন উপদেষ্টা কিংবা একজন সরকারি উচ্চ পর্যায়ের আমলা কী নিজের এলাকায় হাজার হাজার কোটি টাকার সরকারি বরাদ্দ নিয়ে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চালাতে পারেন? সারা দেশকে বঞ্চিত রেখে এটি করা সম্পূর্ণরূপে অনৈতিক এবং নীতিবিরোধী। আমরা শুনেছি, কেবিনেট সচিব একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের প্রতি অনুগত। তিনি হয়তো অবসরের পরে নির্বাচনেও অংশ নিতে পারেন। এটি দুঃখজনক এবং সরকারি শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার পরিপন্থী।”