স্বৈরাচার হাসিনার ছেলে জয় স্বীকার করলেন ভুল, তবে অভিযোগ প্রত্যাখ্যান
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে বাংলাদেশ থেকে পলাতক থাকা সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় স্বীকার করেছেন, তার মায়ের সরকারের সময়ে কিছু ভুল হয়েছে। তবে তিনি জাতিসংঘের সেই প্রতিবেদনের দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন, যেখানে বলা হয়—ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনে সরকারের সময় ১,৪০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
ওয়াশিংটন ডিসি থেকে এসোসিয়েটেড প্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার যদি আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা না তুলে নেয় এবং সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচন না করে, তাহলে বাংলাদেশ রাজনৈতিকভাবে অস্থিতিশীল থাকবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, "নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে, নির্বাচন হতে হবে অন্তর্ভুক্তিমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু। এখন যা হচ্ছে, তা আসলে আমার মা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণ থেকে দূরে রাখার রাজনৈতিক কৌশল।"
আরও পড়ুন: বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ‘রেইনবো নেশন’ গড়বে: মির্জা ফখরুল
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশের জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এটি হবে গণঅভ্যুত্থানের পর প্রথম নির্বাচন, যা শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের সমাপ্তি ঘটায় এবং তাকে ভারতে পালাতে বাধ্য করে। ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার তিন দিন পর ড. ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। তবে মে মাসে তার সরকার আওয়ামী লীগের সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে এবং দলের শীর্ষ নেতাদের গ্রেফতার করে। বহু নেতা দেশ ছাড়ে ভারতে ও অন্যত্র।
জয় বলেন, যদি আওয়ামী লীগকে প্রস্তুতির যথেষ্ট সময় না দেওয়া হয়, তাহলে নির্বাচন জনগণ ও আন্তর্জাতিক মহলে গ্রহণযোগ্য হবে না। "এখনই আমাদের নির্বাচনী প্রস্তুতি নিতে দেওয়া হচ্ছে না—শেষ মুহূর্তে নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও নির্বাচন হবে এক প্রহসন," যোগ করেন তিনি।
আরও পড়ুন: নভেম্বরের মধ্যেই দেশে ফিরবেন তারেক রহমান
মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসসহ ছয়টি আন্তর্জাতিক সংস্থা সম্প্রতি ইউনূসের কাছে একটি যৌথ চিঠি পাঠিয়ে আওয়ামী লীগের ওপর ‘অতিরিক্ত নিষেধাজ্ঞা’ প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছে। তারা বলেছে, এটি মতপ্রকাশ ও সংগঠনের স্বাধীনতার পরিপন্থি এবং শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত মানুষদের গ্রেফতারের হাতিয়ার হয়ে উঠেছে।
জয় অভিযোগ করেন, ইউনূস সরকার অভ্যুত্থানকালে সহিংসতাকারীদের দায়মুক্তি দিয়েছে এবং শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‘ডাইনী শিকার অভিযান’ শুরু করেছে। এছাড়া গত সপ্তাহে বাংলাদেশের একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনালে একজন প্রসিকিউটর হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানিয়েছেন। তিনি এ বিচারকে “ক্যাঙ্গারু কোর্ট” হিসেবে অভিহিত করেছেন।
জয় আরও বলেন, ইউনূস সরকারের মানবাধিকার রেকর্ড ভয়াবহ। তার ভাষায়, আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা–কর্মী এক বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে, জামিন পাচ্ছেন না; প্রায় ৫০০ নেতা–কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে, ৩১ জন মারা গেছেন হেফাজতে। সংখ্যালঘুরাও এখন লক্ষ্যবস্তু, বিশেষ করে হিন্দুরা। তবে অন্তর্বর্তী সরকার এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।





