গাজা পুনর্গঠন নিয়ে সৌদি আরবের একগুচ্ছ পরিকল্পনা

Any Akter
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৫৭ পূর্বাহ্ন, ২৫ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ১২:৩৬ অপরাহ্ন, ২৫ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গাজা যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতিতে নেতৃত্বমূলক ভূমিকা নিতে চায় সৌদি আরব। দেশটি হামাসকে নিরস্ত্র ও প্রভাবহীন করে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে (পিএ) আর্থিক ও লজিস্টিক সহায়তা দিয়ে পুনরায় শক্তিশালী করার পরিকল্পনা নিয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম মিডল ইস্ট আই-এর হাতে আসা সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি গোপন প্রতিবেদনে এই পরিকল্পনার তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌদি আরব গাজায় একটি আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের উদ্যোগকে সমর্থন করবে। এতে সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ অংশ নিতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ডের সাবেক রানি সিরিকিত মারা গেছে

দলিলটিতে বলা হয়, রাজত্বটি গাজা ও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে একটি সমন্বিত দৃষ্টিভঙ্গি উপস্থাপন করতে চায়। এর আওতায় গাজার শাসন ব্যবস্থায় হামাসের ভূমিকা প্রান্তিক করা এবং ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষকে সংস্কার ও পুনর্গঠনের মাধ্যমে শক্তিশালী করা হবে, যাতে ১৯৬৭ সালের সীমানার ভিত্তিতে জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠন” সম্ভব হয়।

সৌদি আরব মনে করে, হামাস বর্তমানে শান্তি প্রচেষ্টার অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে এবং তাকে নিরস্ত্র করা দরকার। পরিকল্পনাটি ধাপে ধাপে আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক চুক্তির মাধ্যমে বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়েছে, যাতে নিরপেক্ষতা বজায় থাকে।

আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক চাপ বাড়াতে হবে: এরদোয়ান

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ধীরে ধীরে গাজায় প্রশাসনিক দায়িত্ব ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের হাতে হস্তান্তর করলে হামাসের প্রভাব কমবে। পাশাপাশি, এই উদ্যোগকে দুই রাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।

দলিল অনুসারে, পুরো পরিকল্পনাটি মিসর, জর্ডান ও ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের পরামর্শে বাস্তবায়িত হবে। সৌদি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রভাবশালী কর্মকর্তা মানাল বিনতে হাসান রাদওয়ান এই প্রক্রিয়া তত্ত্বাবধানের নির্দেশ দিয়েছেন।

২০০৭ সালের পর থেকে গাজায় ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের উপস্থিতি না থাকলেও, সৌদি আরব পিএকে সংস্কার করে দুর্নীতি মোকাবিলা, দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সব গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করতে চায়। এই সংস্কারকে “জাতীয় ঐক্যের মৌলিক ভিত্তি” হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সৌদি আরব ফিলিস্তিনি জনগণের মৌলিক সেবা নিশ্চিতে আর্থিক ও কারিগরি সহায়তা দেবে। পাশাপাশি, ফিলিস্তিনি জাতীয় সংলাপের আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে বিভিন্ন গোষ্ঠী ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের ছাতার নিচে ঐক্যবদ্ধ হতে পারে।

তবে হামাসকে এই সংলাপে অন্তর্ভুক্ত করা হবে কি না, সে বিষয়ে প্রতিবেদনে কিছু উল্লেখ নেই। পুরো প্রতিবেদনে ইসরায়েলের নামও উল্লেখ করা হয়নি।

প্রতিবেদনটি তারিখিত ২৯ সেপ্টেম্বর—এর আগের দিন জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান গাজায় ইসরায়েলের “গণহত্যা বন্ধে অবিলম্বে আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের” আহ্বান জানান।

এর আগে সৌদি আরব ও ফ্রান্স যৌথভাবে গাজার জন্য একটি শান্তি পরিকল্পনা প্রস্তাব করেছিল, যাতে যুদ্ধবিরতি, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েন এবং ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংলাপ পুনরায় শুরু করার আহ্বান জানানো হয়।

পরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হয়, যেখানে সৌদি-ফরাসি প্রস্তাবের অনেক অংশ অন্তর্ভুক্ত হয়। ওই চুক্তি অনুযায়ী, বন্দি বিনিময়, আংশিক ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহার এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণের প্রস্তাব ছিল — যদিও হামাস তা প্রত্যাখ্যান করে জানায়, ইসরায়েলি দখল শেষ না হওয়া পর্যন্ত নিরস্ত্রীকরণ সম্ভব নয়।

জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে ট্রাম্প বিভিন্ন আরব ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং গাজায় শান্তিরক্ষী বাহিনীতে অংশগ্রহণের আহ্বান জানান।

তবে মিসরের শারম আল শেখে অনুষ্ঠিত গাজার ভবিষ্যৎ নিয়ে শীর্ষ বৈঠকে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান অংশ নেননি। সূত্রগুলো জানায়, এতে প্রত্যাশিত প্রভাব না পাওয়ায় তারা অসন্তুষ্ট ছিলেন।

ইসরায়েলের অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোটরিচ বলেন, যদি সৌদি আরব ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিনিময়ে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়, তাহলে আমরা তা প্রত্যাখ্যান করব। তোমরা তোমাদের মরুভূমিতে উট নিয়ে ঘুরো, আমরা আমাদের রাষ্ট্র আরও উন্নত করব।

অঞ্চলের পর্যবেক্ষকদের মতে, গাজার পুনর্গঠন ও মানবিক সহায়তার মূল দায়িত্ব সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের ওপরই পড়বে।