এআই নিয়ন্ত্রণে অঙ্গরাজ্যের আইন ঠেকাতে ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ

Any Akter
প্রযুক্তি ডেস্ক
প্রকাশিত: ৪:৫৭ অপরাহ্ন, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ১১:৫৪ অপরাহ্ন, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের অঙ্গরাজ্যগুলোর নিজস্ব বিধিনিষেধ কার্যকর হওয়া ঠেকাতে নির্বাহী আদেশে সই করেছেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউসে এই আদেশে সই করা হয়।

নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এআই পরিচালনায় একটি ‘একক জাতীয় কাঠামো’ গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, অঙ্গরাজ্যভিত্তিক আলাদা আলাদা আইন এআই শিল্পের বিকাশে বাধা সৃষ্টি করছে এবং তা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি নেতৃত্বকে দুর্বল করতে পারে।

আরও পড়ুন: ফেসবুকে বড় পরিবর্তন

হোয়াইট হাউসের উপদেষ্টা উইল শার্ফ বলেন, অঙ্গরাজ্যের ভিন্ন ভিন্ন নিয়ম এআই শিল্পকে কার্যত পঙ্গু করে দিতে পারে। সে কারণে জাতীয় পর্যায়ে একটি সমন্বিত নীতিমালার প্রয়োজন রয়েছে।

নির্বাহী আদেশে কংগ্রেসের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি ফেডারেল কাঠামো তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের এআই ও ক্রিপ্টো বিষয়ক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ডেভিড স্যাকস জানান, আপাতত এই আদেশ প্রশাসনকে কঠোর অঙ্গরাজ্য আইন মোকাবিলার সুযোগ দেবে।

আরও পড়ুন: ডিসেম্বরের আগে সচল মোবাইল বন্ধ হবে না

এর আগে রিপাবলিকানরা অঙ্গরাজ্যগুলোকে এআই নিয়ন্ত্রণ থেকে বিরত রাখতে উদ্যোগ নিলেও জুলাই মাসে মার্কিন সিনেটে সেই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। জাতীয় প্রতিরক্ষা অনুমোদন আইনে এ ধরনের বিধিনিষেধ যুক্ত করার চেষ্টাও সফল হয়নি।

এআই প্রযুক্তি ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ও শেয়ারবাজারে বড় প্রভাব ফেলেছে। তবে প্রযুক্তিটি এখনো অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষাধীন থাকায় নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিতর্ক তীব্র হচ্ছে। সিলিকন ভ্যালির শীর্ষ প্রযুক্তি নেতারা অঙ্গরাজ্যভিত্তিক আইনকে উদ্ভাবনের পথে বড় বাধা বলে মনে করেন। ওপেনএআইয়ের প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যানসহ অনেকেই সতর্ক করেছেন, অতিরিক্ত বিধিনিষেধ চীনের সঙ্গে এআই প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রকে পিছিয়ে দিতে পারে।

অন্যদিকে সমালোচকেরা বলছেন, অতিরিক্ত শিথিল নীতি এআই কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহির বাইরে রেখে দিতে পারে। এতে ভোক্তাদের গোপনীয়তা, নিরাপত্তা ও অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে এআইয়ের ওপর সামগ্রিক ফেডারেল তদারকি খুবই সীমিত, যদিও স্বাস্থ্যসেবা, পুলিশিং ও চাকরিতে নিয়োগসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এর ব্যবহার দ্রুত বাড়ছে।

ফেডারেল আইন না থাকায় কিছু অঙ্গরাজ্য নিজ উদ্যোগে ডিপফেক, বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ও বৈষম্যমূলক অ্যালগরিদম ঠেকাতে আইন প্রণয়ন করেছে। এআই নিয়ন্ত্রণ ইস্যুতে রিপাবলিকান দলেও মতভেদ স্পষ্ট। ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্স ও ডেভিড স্যাকস হালকা নিয়ন্ত্রণের পক্ষে থাকলেও ফ্লোরিডার গভর্নর রন ডি স্যান্টিস ও রাজনৈতিক কৌশলবিদ স্টিভ ব্যানন অঙ্গরাজ্যের ভূমিকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।

এআই নিয়ন্ত্রণপন্থী সংগঠন আমেরিকানস ফর রেসপনসিবল ইনোভেশন–এর সভাপতি ব্র্যাড কারসন বলেন, এই নির্বাহী আদেশ আদালতে টিকবে না। তার মতে, জনপ্রিয় অঙ্গরাজ্য আইনগুলোকে আক্রমণ করা হয়েছে, কিন্তু বিকল্প কোনো শক্তিশালী ফেডারেল আইন প্রস্তাব করা হয়নি।

তবে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠান অ্যান্ড্রিসেন হোরোভিটজ–এর সরকারি বিষয়ক প্রধান কলিন ম্যাককিউন এই আদেশকে গুরুত্বপূর্ণ প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। তার মতে, দীর্ঘমেয়াদি ও কার্যকর দিকনির্দেশনা দিতে হলে শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসকেই মুখ্য ভূমিকা নিতে হবে।