লিখিত অভিযোগ ছাড়া ব্যবস্থা নিব না: ডিসি

লক্ষ্মীপুর ডিসির ড্রাইভার নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পদধারী নেতা!

Sanchoy Biswas
লক্ষ্মীপুর সংবাদদাতা
প্রকাশিত: ৮:৫২ অপরাহ্ন, ২২ এপ্রিল ২০২৫ | আপডেট: ৩:২১ অপরাহ্ন, ২২ এপ্রিল ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পদধারী তারেক আজিজকে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসকের (ডিসি) গাড়িচালক হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, তারেক শুধু একা নন। পুরো পরিবারই আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। রাজনৈতিক বিতর্কিত তারেকের নিয়োগ ইস্যুটি লক্ষ্মীপুর জুড়ে টক অব দি কান্ট্রি। সূত্র মতে, ডিসির ড্রাইভার হওয়ার জন্য একজন ড্রাইভারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে ড্রাইভিং লাইসেন্সধারী হওয়া এবং গ্রেড-১৫ প্রয়োজন। এগুলোর কোনোটিই নেই তারেকের। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের আস্থাভাজন এমন বিতর্কিত চালককে পাশে রেখে রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম চালানোয় জেলা প্রশাসক নিজেই তার ভূমিকাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন বলে মনে করেন স্থানীয়রা। এ প্রসঙ্গে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক রাজিক কুমার সরকার গণমাধ্যমকে বলেন, তারেক আজিজ আমার ড্রাইভার, এটা সঠিক। কিন্তু সে ছাত্রলীগের পদধারী আমিই এই প্রথম জেনেছি। তবে, তার বিষয়ে কেউ লিখিত অভিযোগ না দেয়া পর্যন্ত আমি কোনো ব্যবস্থা নিব না। আমার জানার প্রয়োজন নেই সে কোন গ্রেডে চাকরি করে যোগ করেন মাঠ প্রশাসনের এই কর্মকর্তা। 

সচিবালয়ের পরিবহণ পুলে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সরকারি গাড়িচালক হিসেবে ৩১ মার্চ ’২৪ তারিখে চাকরিতে যোগদান করেন তারেক আজিজ। কয়েক মাসের ব্যবধানে এ বছরের ২৫ এপ্রিল লক্ষ্মীপুর ডিসি অফিসে পদায়ন করা হয় তাকে। আর চাকরির এক বছরের কম সময়ের ব্যবধানে ডিসির আস্থাভাজন তারেক (ড্রাইভার) এখন লক্ষ্মীপুর পৌরসভা ৬নং ওয়ার্ডের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। অথচ তার গ্রেড-১৬। এদিকে, আওয়ামী লীগ পরিবারের সদস্য ও দলটির পদধারী হওয়া সত্ত্বেও পদ-পদায়নে বঞ্চিত অনেককে পেছনে ফেলেছেন তারেক আজিজ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈকতের কাছের বন্ধু হিসেবে এলাকায় সবার কাছে পরিচিত তিনি। তার ভাই সাদ্দাম পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এবং গত পৌরসভা নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী ছিলেন। ডিসির চালক হওয়ার সুবাদে যুবলীগের পদধারী সাদ্দাম এখন স্থানীয় বিআরটিএ’র বড় দালাল। তার পিতা ছৈয়দ আহাম্মদ পৌর আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির সদস্য।

আরও পড়ুন: সাভারে পাচারকালে পিকআপসহ সাড়ে ৬ লাখ টাকার টিসিবি’র পণ্য জব্দ, আটক-১

শুধু তাই নয়, ডিসির প্রভাব খাটিয়ে ৬০ লাখ টাকা মূল্যের হাজিরহাট বাজারে একটা দোকান ভাইয়ের নামে একসনা বন্দোবস্ত নিয়েছেন তারেক। কমলনগর এসিল্যান্ড তার ভাইকে বন্দোবস্ত পেতে সহায়তা করেন বলে নথির তথ্য থেকে জানা যায়। এর আগে ২০১৪ সালে মাস্টার রোলে লক্ষ্মীপুর সদর ইউএনও’র গাড়িচালক হিসেবে তারেক আজিজের হাতেখড়ি। এসময় তার বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে ইউএনও তাকে সরিয়ে দেন। পরবর্তীতে মাস্টার রোলে কমলনগর এসিল্যান্ডের গাড়িচালক হন। অতীত অনিয়ম, আওয়ামী লীগ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং চাকরির শর্তের বেড়াজাল কোনোটিই লক্ষ্মীপুরের ডিসির চালক হওয়ার পথে অন্তরায় হয়নি। এমন বিতর্কিত ব্যক্তিকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের কাছাকাছি রাখায় এলাকায় নানা প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। অনিয়ম করার পরেও শাস্তির বদলে একটার পর একটা পুরস্কার পেয়ে যাচ্ছেন তারেক আজিজ। তবে  জেলা প্রশাসক এসব সমালোচনা গায়ে মাখছেন না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ। এ প্রসঙ্গে অতিরিক্ত সচিব ও পরিবহন কমিশনার খাইরুল কবির মোমেন গণমাধ্যমকে বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। এরকম বিতর্কিত ব্যক্তি ডিসির চালক হওয়া সমীচীন না। তবুও অভিযোগটি খতিয়ে দেখব। যদি অনিয়ম প্রতীয়মান হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে এবং অন্যত্র বদলি করা হবে।