সাপাহারের আমের বিশ্বমঞ্চে পরিচিতি ও সম্ভাবনা

Any Akter
আব্দুল আলিম, সাপাহার
প্রকাশিত: ১:৪৮ অপরাহ্ন, ০১ মে ২০২৫ | আপডেট: ৬:৩৬ অপরাহ্ন, ১০ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি ঐতিহ্যবাহী আম উৎপাদন অঞ্চল নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলা। বর্তমানে এ এলাকায় প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে রুপালি, বারি-৪, হিমসাগার (খিরসাপাত), ল্যাংড়া, ব্যানানাসহ বিভিন্ন জাতের আম চাষ হয়ে থাকে। শুধু উৎপাদনের দিক থেকেই নয়, ব্যবসায়িক এবং রপ্তানির ক্ষেত্রেও সাপাহার আজ দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নাম। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের ভিন্নপ্রান্তে পৌঁছে এ অঞ্চলের বিশ্বমানের আম হারিয়ে ফেলে তার নিজস্ব পরিচয়। এই প্রেক্ষাপটে “ব্যান্ডিং” বা ব্র্যান্ডিং হয়ে উঠতে পারে সাপাহারের আমকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিষ্ঠিত করার অন্যতম কৌশল।

ব্যান্ডিং হলো কোনো পণ্যকে একটি নির্দিষ্ট পরিচয়, নাম এবং গুণগত বৈশিষ্ট্যসহ বাজারজাত করার কৌশল। এর মাধ্যমে পণ্যটি ভোক্তাদের কাছে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বা গুণগত মানের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত হয়। ঠিক তেমনিভাবে সাপাহারের আমকেও ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করা যেতে পারে।

আরও পড়ুন: ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে: প্রেস সচিব

ব্যান্ডং কি

সাপাহারে ব্যান্ডিংয়ের প্রয়োজনীয়তা

আরও পড়ুন: ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মানববন্ধন

সাপাহারের আম শুধু দেশেই নয়, বিগত কয়েক বছর ধরে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হয়ে আসছে। এবছর রপ্তানির সম্ভাবনা আরও বড় পরিসরে ধরা দিয়েছে। কিন্তু প্রযুক্তিনির্ভর প্যাকেজিং, উৎসভিত্তিক পরিচয় ও সনদীকরণের অভাবে এই আম বিদেশে গিয়ে হয় “বাংলাদেশি আম” হিসেবে পরিচিত হলেও “সাপাহার আম” নামে স্বীকৃতি পায় না। ফলে এর স্থানীয় পরিচয় হারিয়ে যায়, যার ফলে সঠিক মূল্যায়ন এবং স্থানীয় অর্থনীতিতে এর স্বতন্ত্র ভূমিকা পূর্ণরূপে প্রতিফলিত হয় না।

ব্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে কীভাবে সাপাহারের আম লাভবান হতে পারে?

১. ভৌগলিক নির্দেশক (এও) পণ্যের স্বীকৃতি:

সাপাহার আমকে এও পণ্য হিসেবে নিবন্ধন করালে এটি আইনি সুরক্ষা পাবে এবং নির্দিষ্ট গুণগত মানের একটি প্রতীক হয়ে উঠবে।

২. প্যাকেজিং ও লেবেলিং:

প্রতিটি আমের কার্টনে ‘সাপাহার আম’ এর লোগো, উৎপাদন এলাকা, জাত, চাষ পদ্ধতি ও রপ্তানির মানদণ্ড মুদ্রণ করলে পরিচয় বজায় থাকবে।

৩. ডিজিটাল মার্কেটিং ও ই-কমার্স:

স্থানীয় উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ওয়েবসাইট, সোশ্যাল মিডিয়া এবং ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মে ‘ঝড়ঢ়ধযধৎ গধহমড়’ নামে ব্যান্ড তৈরি করে সারাবিশ্বে বিপণন করা যেতে পারে।

৪. স্থানীয় উৎসব ও প্রদর্শনী:

প্রতি বছর আম মৌসুমে ‘সাপাহার আম উৎসব’ আয়োজন করে দেশি-বিদেশি ক্রেতা ও বিনিয়োগকারীদের আমন্ত্রণ জানানো যেতে পারে।

অর্থনৈতিক প্রভাব

সাপাহারে আম মৌসুমে শুধু চাষি বা ব্যবসায়ী নয়, এ পণ্যকে ঘিরে হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়।  বাগান পরিচর্যা, সংগ্রহ, পরিবহন, সংরক্ষণ ও বিক্রয়—প্রতিটি স্তরেই শ্রমনির্ভর বিশাল এক অর্থনীতি গড়ে উঠেছে। সারা বছরজুড়ে বাগান পরিচর্যার সঙ্গে যুক্ত থেকেও মানুষ এখন কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির মাধ্যমে সাবলম্বী হয়ে উঠছে। ব্যান্ডিং হলে এই অর্থনীতি আরও শক্তিশালী হবে এবং বিদেশি মুদ্রা অর্জনের পথও প্রশস্ত হবে।

উপসংহার

সাপাহারের  আম শুধু একটি কৃষিপণ্য নয়, এটি এ অঞ্চলের অর্থনীতির চালিকাশক্তি, সংস্কৃতির পরিচায়ক। তাই সময় এসেছে এই বিশ্বমানের পণ্যটিকে বিশ্ববাজারে ‘সাপাহার আম’ নামে পরিচিত করানোর। এর জন্য প্রয়োজন সরকারি-বেসরকারি সমন্বিত উদ্যোগ, ব্র্যান্ড উন্নয়ন পরিকল্পনা এবং কৃষক থেকে রপ্তানিকারক—সব পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ।

সঠিক ব্যান্ডিংয়ের মাধ্যমে “সাপাহার আম” হয়ে উঠতে পারে বাংলাদেশের গর্ব এবং বিশ্ববাজারের একটি প্রিমিয়াম পণ্য।