লিচু বিক্রি করে কোটি টাকা আয় করছেন সুনামগঞ্জের ব্যবসায়ীরা

সুনামগঞ্জের ছাতকে ডালে ডালে ঝুলছে রঙ্গিন রসালো লিচু। উপজেলার নোয়ারাই ইউনিয়নের মানিকপুর, কচুদাইর, বড়গল্লা, চানপুর, রাজারগাঁও ও গোদাবাড়ি গ্রামে দেশী, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু উৎপন্ন হয়। ইউনিয়নের ৬টি গ্রামের মধ্যে লিচুগাছের বাগান বেশি রয়েছে মানিকপুরে। দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলায় এ লিচু বিক্রি করে কয়েক কোটি টাকা আয় করছেন এসব ব্যবসায়ীরা।
সরজমিন ঘুরে আলাপ করে জানা যায়, ব্রিটিশ আমলে মানিকপুর গ্রামটি দোয়ারাবাজার স্টেটের অধিনে থাকলেও বর্তমানে এটি ছাতক উপজেলার অন্তরর্গত। এক সময় জমিদার নায়েবদের আকৃষ্টতায় কিশোরগঞ্জ থেকে ৩০টি লিচুর চারা এনে রোপন করা হয়েছিল মানিকপুর গ্রামের একটি টিলায়। ওই টিলাটিতে এখন জামে মসজিদ নির্মিত আছে। মসজিদের চার পাশেও আছে লিচুর গাছ। পুরো গ্রাম জুড়েই রয়েছে লিচুর বাগান। প্রতিটি বাড়ির আঙিনাসহ বসতবাড়ির চার পাশে গাছে গাছে ঝুলছে রঙ্গিন রসালো লিচু। এই দৃশ্যটি উঁচুনিচু টিলা বেষ্টিত মানিকপুরে।
আরও পড়ুন: আসামির স্থলে ছবি প্রকাশে ছাত্রদল নেতার সংবাদ সম্মেলন
ছাতক পৌর শহর থেকে প্রায় ১৩ কি: মি: দুরে অবস্থিত চৌমুনি বাজার। এ বাজারের চার পাশে উচুঁনিচু টিলা বেষ্টিত গ্রামটির নাম মানিকপুর। গ্রামে প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার বসবাস করছেন। মৌসুমে ধান থেকে শুরু করে প্রায় বারো মাস বিভিন্ন ধরণের শাক সবজি চাষাবাদ হয় গ্রামের আশপাশ জমিতে। এক সময় দরিদ্রতায় সাথে যুদ্ধ করে জীবন নির্বাহ করলেও তাদের পরিশ্রমের ফলে গ্রামের মানুষ এখন স্বাবলম্বী ও সুখি। গ্রামের অনেকেই এখন ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি করছেন। অনেকেই আছেন মধ্যপ্রাচ্যসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে। কিছু কিছু বাড়িরঘর জরাজীর্ণ মাটির দালান হলেও বাকিগুলো সেমিপাকা, আধাপাকা ও দালান রয়েছে। গ্রামের প্রায় প্রতিটি রাস্তাঘাট কাঁচা। দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে তারা সরকারের প্রতিনিধিদের কাছে রাস্তা পাকাকরণসহ বিভিন্ন উন্নয়নের জন্য আবেদন করে আসলেও কোন উন্নয়ন হয়নি। এমন ক্ষোভ প্রকাশ করেন গ্রামের প্রবীন মুরব্বি আবু তাহের। তিনি বলেন, দীর্ঘ ত্রিশ বছর ধরে বক্তব্য দিয়ে আসলেও রাস্তার উন্নয়ন কেউ করেনি। উপজেলা কৃষি অফিস তাদেরকে কোন ধরণের সহায়তা দিচ্ছেনা।
তিনি আরও বলেন, দোয়ারাবাজারের সেই জমিদারের কাছ থেকে তার দাদা টিলাটি কিনেছিলেন। মুলত ওই জমিদারের টিলায় প্রায় ৩০টি লিচুগাছ ছিল। ১৬টি পুরনো গাছ এখনও দৃশ্যমান। প্রতিটি গাছের বয়স প্রায় দেড়শ বছর। পুরনো গাছ থেকে মানিকপুরসহ ছাতক-দোয়ারার সীমান্তের বিভিন্ন গ্রামে লিচুর বাগান হয়েছে। অন্যান্য বাগানগুলোর চেয়ে মানিকপুর গ্রামের লিচুর বাগানটি আলোচিত। চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে লিচু বিক্রি শুরু হয়। এ মাসেই শেষ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফল কাঁচা থাকা অবস্থায় বাগানের গাছগুলো কিনে নেন বেপারিরা। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও ফলন ভাল হওয়ায় প্রতিটি লিচু গাছ থেকে চাষিরা পাচ্ছেন ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা। লিচু পাকা শুরু হলে লিচুর বাগানগুলোতে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসেন। পর্যটক কিংবা সংবাদকর্মীরা তাদের কাছ থেকে একশ লিচু ৩শ টাকায় ক্রয় করতে হচ্ছে।
আরও পড়ুন: সাংবাদিক তুহিন হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবিতে কাপাসিয়ায় সাংবাদিকদের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ
লিচু চাষিদের সাথে আলাপ করে আরো জানা গেছে, ফল ধরার পর থেকে বাদুরের উপদ্রব শুরু হয়। রাত জেগে পাহারা, আর জাল দিয়ে ফল ঢেকে রাখাসহ বিভিন্ন পদ্ধতি ব্যবহার করতে হয়। প্রতিদিন বিকেলে গাছ থেকে লিচু সংগ্রহ করে ভোর বেলায় স্থানীয় চৌমুনি বাজারে লিচুর হাটে নিয়ে যাওয়া হয়। ছাতক, দোয়ারাসহ আশপাশ এলাকার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে লিচু কিনে নিয়ে যান। স্থানীয় বাজরগুলোতে এইসব লিচুর ব্যাপক চাহিদা থাকায় লিচুর ফসল দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। যাতায়াতের রাস্তা উন্নত হলে চাষিরা বেশি দামে লিচু বিক্রি করতো এবং পর্যটকরা ও ব্যবসায়ীরা নিরাপদে বাগানে আসতে পারতেন এমনটাই মনে করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
ছাতক উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান বলেন, নোয়ারাই ইউনিয়নের ৬ হাজার ৫শ দেশী, বোম্বাই ও চায়না-৩ জাতের লিচু রয়েছে। আড়াইশ জন চাষি রয়েছেন। এ জন্য বনজ বৃক্ষ কমিয়ে ফলদ বৃক্ষ রোপনে তিনি সকলকের প্রতি আহবান জানান।