৫ কোটি চাঁদা চাওয়ায় যাত্রাবাড়ী-শরীয়তপুর রুটে বন্ধ বাস চলাচল

ঢাকার যাত্রাবাড়ী এলাকায় শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস নামের একটি পরিবহনের একাধিক বাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগ উঠেছে। বাস মালিকদের দাবি চাঁদার ৫ কোটি টাকা না পেয়ে যাত্রাবাড়ী এলাকার সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার অনুসারীরা এ ঘটনা ঘটিয়েছে।
এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি, অন্যদিকে ব্যবসায় লোকসান গুনতে হচ্ছে বাস মালিকদের।
আরও পড়ুন: একাধিক চাঁদাবাজি মামলার পরও আশুলিয়া বিএনপি নেতা হুমকি-ধমকি
শ্রমিকনেতারা জানান, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর যাত্রাবাড়ীতে শরীয়তপুরের বিভিন্ন পরিবহন থেকে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করে আসছেন স্থানীয় যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম। সম্প্রতি তিনি শরীয়তপুরের পরিবহন থেকে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে যাত্রাবাড়ীতে শরীয়তপুরের কোনো পরিবহন ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে জানান যুবদলের সাবেক এই নেতা।
এই বিপুল পরিমাণ চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৯ জুলাই থেকে যাত্রাবাড়ী থেকে শরীয়তপুরের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেন যুবদল নেতা ফাহিম ও তাঁর লোকজন। এখন পর্যন্ত দোলাইপাড় ও যাত্রাবাড়ী এলাকায় ফাহিম ও তাঁর লোকজন শরীয়তপুরের প্রায় ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর এবং ১০ জন শ্রমিককে আহত করে বলে অভিযোগ করেন পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ।
আরও পড়ুন: বিশেষজ্ঞ দলের চট্টগ্রাম কাস্টমসের রাসায়নিক ল্যাব বিষয়ক প্রশিক্ষণ
এ ঘটনায় শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের পক্ষ থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি, র্যাব ও সেনাবাহিনী বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মো. ফারুক আহমেদ তালুকদার বলেন, ‘আমাদের শরীয়তপুর সুপার সার্ভিস লিমিটেড পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর থেকে শরীয়তপুর-ঢাকা রুটে সুনামের সঙ্গে যাত্রীসেবা দিয়ে আসছি। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে যাত্রাবাড়ী থানা যুবদলের সাবেক সহসভাপতি মুশফিকুর রহমান ফাহিম আমাদের শরীয়তপুরের প্রতিটি গাড়ি থেকে ৫০০ থেকে এক হাজার করে টাকা করে চাঁদা নিচ্ছে।
‘সে হিসাবে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ হাজার, মাসে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা চাঁদা নিচ্ছে ফাহিম। সম্প্রতি সে আমাদের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করে। আমরা চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে ৯ জুলাই থেকে যাত্রাবাড়ী থেকে শরীয়তপুরের গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেয়। ফাহিম ও তার লোকজন এ পর্যন্ত আমাদের ২৫টি গাড়ি ভাঙচুর করেছে এবং আমাদের ১০ জন শ্রমিককে মারধর কর আহত করেছে। ভয়ে আতঙ্কে আমাদের গাড়ি এখন যাত্রাবাড়ী ঢুকতে পারছে না।
‘এ ঘটনায় আমরা পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এবং বিএনপির হাইকমান্ডকে বিষয়টি জানিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে আমাদের কিছু পরিবহন এখনো চালু রেখেছি। কিন্তু আমরা যাত্রাবাড়ী ঢুকতে পারছি না। পোস্তগোলা-দোলাইপাড় থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে ফেলতে হচ্ছে। আমরা এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।’
আন্তজেলা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ চৌকিদার বলেন, ‘শরীয়তপুরের বিভিন্ন পরিবহন থেকে সাবেক যুবদল নেতা মুশফিকুর রহমান ফাহিম ও তার লোকজনের চাঁদাবাজি সীমা ছাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি তাঁরা শরীয়তপুর জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের কাছে পাঁচ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছে।
‘চাঁদা দিতে না পারায় তারা যাত্রাবাড়ীতে গাড়ি ঢুকতে দিচ্ছে না। তারা আমাদের ১৫টি গাড়ি ভাঙচুর এবং অনেক শ্রমিককে মারধর করছে। এ কারণে অনেক গাড়ি বন্ধ হয়ে গেছে। যাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে কিছু গাড়ি চালু রয়েছে। তা-ও আবার যাত্রাবাড়ী ঢুকতে পারছে না। এতে শরীয়তপুরের ২০ লাখ যাত্রী দুর্ভোগে পড়েছে এবং আমাদের পরিবহনশ্রমিকেরা বেকার হয়ে পড়েছে। প্রশাসনের কাছে আমি এর দ্রুত সমাধান চাই। তা না হলে আমরা শ্রমিকেরা শরীয়তপুরের জনগণকে সড়ক অবরোধ করে পদ্মা সেতু বন্ধ করে দেব।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক তাহসিনা বেগম বলেন, ‘আমি শরীয়তপুরে নতুন যোগদান করেছি। মিডিয়ার মাধ্যমে আমি বিষয়টি আজকেই জানলাম। আমি খোঁজখবর নিয়ে দেখছি। এ বিষয়ে আমার আইনগতভাবে যা করণীয় আমি তা-ই করব।’