ফেসবুকে স্ট্যাটাস নিয়ে রহস্য

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সাঞ্জু বারাইকের লাশ নিজ বাড়িতে, শোকে স্তব্ধ পরিবার

Sadek Ali
আব্দুল জাহির মিয়া ,চুনারুঘাট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১০:৩৩ পূর্বাহ্ন, ১৫ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ১১:১৮ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

ছেলের বিসিএস ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হল না গ্রাম পুলিশ বাবার। স্বজনদের আহাজারী। মৃত্যুর আগে ফেসবুকে স্ট্যাটাস নিয়ে রহস্য।

সুষ্ঠু তদন্তের দাবী পরিবারের, আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের আমু চা-বাগানের অনিরুদ্ধ বাড়াইকের ছেলে সঞ্জু বারাইক। চা-শ্রমিকের সন্তান হলেও পরিবারের স্বপ্ন ছিল অনেক বড়। ছেলে বড় হয়ে একদিন বিসিএস ক্যাডার হয়ে করবে সরকারের উচ্চ পদস্থ চাকুরি। এমন প্রত্যাশা ছিলো গ্রাম পুলিশ বাবার।

আরও পড়ুন: ভোলায় শুল্ক ফাঁকি দেওয়া অবৈধ সিগারেটসহ আটক ৩

২০২০-২১ সেশনে চান্স পেয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নৃবিজ্ঞান বিভাগে। কিন্তু হঠাৎ করেই যেন সবকিছু তচনচ হয়ে গেল। গতকাল সোমবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাদ থেকে পড়ে সঞ্জুর মৃত্যুর সংবাদ যেন সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে। সঞ্জয়ের এমন মৃত্যু যেন মেনে নিতে পারছে না তার পরিবার ও স্বজনরা। পরে রাত ১ টার তার লাশ বাড়িতে পৌছলে সৎকার কাজ সম্পন্ন করেন পরিবারের লোকজন।

এদিকে, মৃত্যুর পূর্বে নিজের ফেসবুকে একটি স্ট্যাটার্স লিখেন সঞ্জু। এতে তিনি লিখেন ‘আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি, আমি দিনের পর দিন কাউকে ডিস্টার্ব করে গেছি, উল্টো মানুষকে দোষারুপ করা আমার একদম ঠিক হয়নি। আমি সকলের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আমি দিনের পর দিন অন্যায় করেছি। নিজের দোষ ঢেকে অপরজনকে দোষ দেয়া আমার ঠিক হয়নি। আমি সকলের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি, আমার কারণে কারো কোন ক্ষতি হলে সে দায় একান্তই আমার, আমি ক্ষমা চাচ্ছি।’ তার এমন স্ট্যাটার্সে এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। অনেকেই বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের জন্য প্রশাসনের নিকট দাবী জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন: ভারতীয় চোরাচালান ধরতে গিয়ে নৌকা ডুবে বিজিবি সদস্য নিখোঁজ

গতকাল সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সঞ্জুর বাড়িতে কান্নার রোল। পরিবারসহ স্বজনদের কান্নায় ভারি হয়ে উঠছে ওই এলাকার চারপাশ। মা অনিমা বড়াইক তো কিছুক্ষণ পরপরই হারিয়ে ফেলেন জ্ঞান। সঞ্জু সঞ্জু বলে মুর্চা যাচ্ছিলেন বার বার। যদিও প্রতিবেশীরা এসে তাকে শান্তনা দেয়ার চেষ্টা করেন। কিন্তু বাবা মা ও ভাইদের কান্না যেন থামছিল না।

স্থানীয়রা জানান, বাবা অনিরুদ্ধ বাড়াইক আহম্মদাবাদ ইউনিয়নে চাকুরি করেন গ্রাম পুলিশে। আর মা অনিমা বাড়াইক চা শ্রমিক। চার ভাইয়ের মধ্যে ২য় ছিল সঞ্জয়। ছোট বেলা থেকেই মেধাবী ছিলেন সঞ্জয়। প্রথম শ্রেণী থেকে ৫ম শ্রেণী পর্যন্ত তার রোল নং ছিল এক। এছাড়া সে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সহযোগিতা নিয়ে তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করে পরিবার। সবকিছুই ছিল ঠিকঠাক। নৃবিজ্ঞান বিভাগে ৩য় বর্ষে অধ্যায়নরত ছিলেন সঞ্জু। গতকাল সোমবার ভোরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের ছাদ থেকে পড়ে সঞ্জয় গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। সবশেষে সঞ্জয় বড়াইকের সঙ্গে কথা হয় তার চাচাত ভাই দিরাজ বাড়াইকের। তিনি বলেন, ‘সঞ্জু আমার বন্ধু। একসঙ্গে পড়াশুনা করেছি। প্রায় সময়ই তার সঙ্গে আমার কথা হয়। গতকাল তার ফেসবুকে স্ট্যাটার্স দেখে ফোন করে সবকিছু ঠিকঠাক আছে কি না জানতে চাই। উত্তরে সে বলে আমার কোন সমস্যা হয়নি, সব কিছু ঠিকঠাক আছে। আজকে (গতকাল) তার মৃত্যুর খবর পেয়েছি হতবাক হয়েছি’।

সঞ্জুর বাবা গ্রাম পুলিশ অনিরুদ্ধ বাড়াইক কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন-’আমাদের স্বপ্ন ছিল সঞ্জয় বড় হয়ে একদিন বিসিএস ক্যাডার হয়ে সরকারের উচ্চ পদস্থ পদে চাকুরি করবে। সে দেশের জন্য ভালো কিছু করবে। কিন্তু কি হয়ে গেলে বুঝে উঠতে পারছি না। আমার সোনার মানিক আমাদেরকে এভাবে ছেড়ে চলে গেল। আমরা কি দোষ করেছিলাম তার কাছে, কেন সে এভাবে চলে গেল’।

সঞ্জুর চাচা মুকুল বাড়াইক বলেন, ‘সঞ্জয় শান্ত ও নম্র ভদ্র ছেলে ছিল। কারো সাথে তার কোন ঝামেলা নেই। কিন্তু কিভাবে কি হয়ে গেলে তা বুঝে উঠতে পারছি না’। আমরা তার মৃত্যুর বিষয়টি প্রশাসনের নিকট তদন্তের দাবী জানাচ্ছি’।

এ বিষয়ে আহম্মদাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন পলাশ বলেন- তার বাবা আমার ইউনিয়ন পরিষদে গ্রাম পুলিশে চাকুরি করে। আমরা সবসময় তার পরিবারকে সাহায্য সহযোগীতা করেছি। তার বাবার মতো আমাদেরও ধারণা ছিল সঞ্জু ছেলেটি একদিন আমাদের চুনারুঘাটসহ দেশের জন্য কিছু করবে। তার আকষ্মিক মৃত্যুতে আমরা শোকাহত’।

চুনারুঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুর আলম বলেন, ‘থানার এসআই মামুনসহ পুলিশের একটি টিম রাতে তার বাড়িতে লাশ পৌছিয়ে দেয়। আমরা তার মৃত্যুর বিষয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি