একজন সন্ত্রাসী থাকা পর্যন্ত চিরুনি অভিযান চলবে: রেঞ্জ ডিআইজি

গোপালগঞ্জ ঘিরে যৌথ বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান আটক দুই শতাধিক, ঘরে ঘরে তল্লাশি

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৮:১৮ অপরাহ্ন, ১৮ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৭:২২ পূর্বাহ্ন, ১৯ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গোপালগঞ্জের সহিংস ঘটনায় আসামিদের ধরতে ঘরে ঘরে তল্লাশি শুরু করেছে যৌথ বাহিনী। দুই দিনে দুই শতাধিক ব্যক্তি গ্রেফতার করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। গ্রেফতার আতঙ্কে বাড়িঘর ছাড়া হাজার হাজার মানুষ। সংশ্লিষ্ট ঘটনায় এ পর্যন্ত দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আরও মামলার প্রস্তুতি চলছে।

পুলিশের ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি রেজাউল করিম মল্লিক জানান, “আমি এখনো পুলিশ লাইনে মিটিং করছি। জেলার স্বাভাবিক আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে।” শুধু পুলিশ নয়, অন্যান্য বাহিনী মিলে যৌথ বাহিনীর চিরুনি অভিযান চলছে জেলাজুড়ে। “একটা সন্ত্রাসী বাকি থাকতে আমরা অভিযান পরিচালনা করব। কোনো সন্ত্রাসীকে নিরাপদে থাকতে দেওয়া হবে না।” এ পর্যন্ত দুই শতাধিক গ্রেফতারের খবর পাওয়া গেছে, আরও গ্রেফতার চলছে। এ পর্যন্ত দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে, আরও মামলার প্রস্তুতি চলছে।

আরও পড়ুন: সাদা পাথর রক্ষায় প্রশাসনের ৫ দফা সিদ্ধান্ত

গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মো. সাজেদুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এদিন দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে মির মো. সাজেদুর রহমান বলেন, আসামিদের গ্রেফতার করে বিভিন্ন থানায় রাখা হয়েছে। এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত যৌথ বাহিনীর অভিযানে ২৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। অন্য ২০ জনকে গতকাল রাতে যৌথ বাহিনী গোপালগঞ্জের বিভিন্ন স্থান থেকে আটক করে থানায় হস্তান্তর করেছে।

আরও পড়ুন: ‎পাবনায় অনির্দিষ্টকালের জন্য ডাকা পরিবহণ ধর্মঘট প্রত্যাহার

ওসি আরও বলেন, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উলপুর ইউনিয়নের খাটিয়াগড় চরপাড়া এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা, গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় গোপীনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আহমদ বিশ্বাস বাদী হয়ে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ওই মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের গোপালগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ৭৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করা হবে।

আটকের ২৪ ঘণ্টা পার হলেও আদালতে কেন তোলা হয়নি—এ প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এ বিষয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আইনি প্রক্রিয়ায় আদালতে তোলা হবে।

এদিকে পাঁচজন নিহত ও সংঘর্ষের ঘটনায় এখনো মামলা না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত বুধবার এনসিপির পদযাত্রা ঘিরে দিনভর গোপালগঞ্জে দফায় দফায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা এ হামলায় অংশ নেন। তাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংঘর্ষে পাঁচজন নিহত হন। অন্তত আটজন গুলিবিদ্ধসহ অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হন।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ওই রাতেই গোপালগঞ্জে কারফিউ জারি করে প্রশাসন। গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার সরফ উদ্দিন আহমদ চৌধুরী গোপালগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক করেন। পরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলনকক্ষে এক ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, কারফিউয়ের সময় দ্বিতীয় দফায় বাড়িয়ে আজ বেলা ১১টা পর্যন্ত এবং আংশিক শিথিল করে বেলা ২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত বলবৎ রাখা হয়েছে।

শুক্রবার সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত গোপালগঞ্জ জেলা জুড়ে কারফিউ বাড়ানো হয়েছে। চারদিক থেকে গোপালগঞ্জ জেলাকে ঘিরে রেখেছে সেনা, পুলিশ, নৌ, বিজিবি, আনসার ও র‌্যাব সদস্যরা। নদীতে, খালে-বিলে, কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনী অস্ত্র নিয়ে প্যাট্রোল বোটে টহল দিচ্ছে।

এদিকে যৌথ বাহিনীর অভিযানের মুখে বিভিন্ন চোরাই পথে গোপালগঞ্জ ছাড়ছে মানুষ। অনেক বাড়িঘর এখন পুরুষশূন্য। ঘরে ঘরে তল্লাশি অভিযানে চারদিকে আতঙ্ক বিরাজ করছে।