দরগাহপুর-বাঁকা বাজার ব্রিজ ধসে পড়ার পথে, সাতক্ষীরা-খুলনাবাসীর যোগাযোগ হুমকিতে

Sanchoy Biswas
সৈয়দ আব্দুস সালাম পান্না, সাতক্ষীরা
প্রকাশিত: ৪:৫৩ অপরাহ্ন, ২০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৬:২৩ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সাতক্ষীরা ও খুলনা জেলার মধ্যে সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হলো দরগাহপুর-বাঁকা বাজার সড়ক। এই সড়কে অবস্থিত ব্রিজটি শুধু দুই জেলার মধ্যে যোগাযোগই সহজ করে না, বরং কৃষিপণ্য পরিবহন, চিকিৎসা, শিক্ষা ও সাধারণ যাতায়াতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তবে বর্তমানে ব্রিজটি ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে।

ব্রিজের দুই প্রান্তে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ ভাঙন। ইতোমধ্যে সেখানে সৃষ্টি হয়েছে গভীর গর্ত, যা প্রতিনিয়ত বড় থেকে বড়তর হচ্ছে। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, কিছুদিন আগেই যশোর পানি উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে বিপুল অর্থ ব্যয়ে জিও ব্যাগ বসিয়ে ব্রিজের দুই পাশ রক্ষার কাজ করা হয়। কিন্তু বাস্তবে কাজটি ছিল তড়িঘড়ি ও অদক্ষতার পরিচায়ক।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গলাকেটে ও গুলি করে সাবেক ছাত্রদলকর্মীকে হত্যা

কোনো দীর্ঘমেয়াদি প্রকৌশলগত পরিকল্পনা ছাড়াই, দায়সারা মানসিকতায় এ কাজটি সম্পন্ন করা হয়। ফলস্বরূপ, অল্প কিছুদিনের মধ্যেই জিও ব্যাগগুলো সরে পড়ে এবং ভাঙন আরও ভয়াবহ রূপ নেয়। এখনকার বাস্তবতা হলো, প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ এই ব্রিজ দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন। ব্রিজের মুখে তৈরি হওয়া গর্ত যেন একেকটি মৃত্যু ফাঁদ।

সম্প্রতি এক মোটরসাইকেল আরোহী ওই গর্তে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। সেখানে নেই কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থা, নেই কোনো সতর্কীকরণ চিহ্ন। রাতের বেলায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা আরও বেড়ে যায়। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ছেন শিক্ষার্থী, কর্মজীবী মানুষ, কৃষক, এবং রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স।

আরও পড়ুন: কৃষক দল নেতা খন্দকার নাসিরের অপকর্মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তারেক রহমানের কাছে মহিলা দলনেত্রীর আবেদন

স্থানীয় কলেজের প্রভাষক আশিক আহমেদ বলেন, “আমরা বহুবার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের অবহিত করেছি, কিন্তু এখনো কেউ সরেজমিনে এসে পরিস্থিতি দেখেননি। একটি ব্রিজ ভেঙে গেলে শুধু রাস্তা নয়, দুই জেলার মানুষের জীবন ও ভবিষ্যৎ ভেঙে পড়ে।”

উন্নয়নের এত বুলি, এত বাজেট ও প্রকল্প যদি মাঠপর্যায়ে গিয়ে এমনভাবে ব্যর্থ হয়, তবে প্রশ্ন উঠবে এসব কাজ কার জন্য? জনগণের জীবনের নিরাপত্তা কি কেবলই কাগজে-কলমে থাকবে? এখানে দায় শুধু একটি দপ্তরের নয় এ দায় রাজনৈতিক প্রতিনিধি, প্রকৌশলী, প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সবার।

এখন সময় দ্রুত, কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার। জরুরি ভিত্তিতে ব্রিজটির পূর্ণাঙ্গ টেকনিক্যাল মূল্যায়ন করে দ্রুত পুনর্নির্মাণ এবং ভাঙন প্রতিরোধে টেকসই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল ইউনিট কিংবা নির্ভরযোগ্য কোনো জাতীয় নির্মাণ প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজ করানো যেতে পারে।

এই ব্রিজ যদি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়ে, তাহলে শুধু সাতক্ষীরা ও খুলনা নয়, বরং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি বড় অংশের মানুষের জীবন ও জীবিকাও একরকম থমকে যাবে।

সরকারের কাছে আমাদের আবেদন আর দেরি নয়। দরগাহপুর-বাঁকা বাজার ব্রিজ যেন দ্বিতীয় পদ্মা নদীর ফেরিঘাট না হয়ে ওঠে, যেখানে প্রতিদিন কেউ না কেউ প্রাণ হারায়।

সেতু হোক, টেকসই পরিকল্পনায় জনগণের কল্যাণে। শুধু টেন্ডার আর ঘুষের হিসাবেই নয়।