ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প বাতিলের দাবিতে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জে মানববন্ধন

ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সম্ভাব্য রুট পরিবর্তনের দাবিতে কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কে আটকিয়ে বিক্ষোভ করেছে এলাকাবাসী। রোববার সকালে তেঘরিয়া ইউনিয়নের কয়েক হাজার গ্রামবাসী তাদের ভিটেমাটি রক্ষার দাবীতে এ বিক্ষোভ কর্মসূচী ও প্রতিবাদ মিছিলে অংশগ্রহন করে।
গ্রাম বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সরাও এবং জীবনের শেষ রক্তবিন্দু দিয়ে হলেও নিজেদের ভিটামাটি রক্ষা করব _এই স্লোগানে বিক্ষোভ মিছিলে অংশগ্রহণ করে একাত্মতা প্রকাশ করে হাজার হাজার নারী-পুরুষ, শিশু, স্কুল- কলেজ শিক্ষার্থী ও বৃদ্ধের অংশগ্রহণে বিক্ষোভ সমাবেশটি গণসমাবেশে পরিনত হয়।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের সবচেয়ে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হবে: প্রেস সচিব
আন্দোলনে অংশগ্রহনকারী কয়েকজন স্থানীয় বলেন, ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রস্তাবিত টার্নিং পয়েন্ট স্থাপনের লক্ষ্যে তেঘরিয়া ইউনিয়নের ১০টি গ্রাম নির্ধারণ করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে আমাদের পূর্বপুরুষদের বসতভিটা, মসজিদ-মন্দির-উপাসনালয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও খেলার মাঠসহ সর্বস্ব আমাদের হারাতে হবে। আমরা উন্নয়নের বিরুদ্ধে নই, কিন্তু উন্নয়ন হবে মানবিক ও পরিবেশসম্মত। মাত্র এক কিলোমিটার পূর্বদিকে সরিয়ে নিলেই গ্রাম রক্ষা পায়।
স্থানীয়রা আরো জানান, এই প্রকল্পটি করা হয়েছিলা আওয়ামী সরকারের আমলে, প্রকল্পটি যাওয়ার কথা ছিলো সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু প্রিয় প্রাঙ্গনের ওপর দিয়ে। কিন্তু বিপু তার প্রিয় প্রাঙ্গন আবাসন প্রকল্পটি বাচানোর জন্যই গ্রামবাসীর বসত ভিটার ওপর দিয়ে রাস্তার পরিকল্পনা করেন।
আরও পড়ুন: ফের ৪৮ ঘন্টার আল্টিমেটাম রবি শিক্ষার্থীদের
তারা আরো বলেন, গত ১৫ বছরে শুধুমাত্র একটি ইউনিয়ন থেকে (তেঘরিয়া) ১২০০ একর জমি অধিগ্রহন করা হয়েছে। তেঘরিয়া ইউনিয়নে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কেন্দ্রীয় কারাগার, প্রিয় প্রাঙ্গন, ঝিলমিল আবাসিক, সাউথ টাউন, RAB-10, মায়াকানন, আমর্ড পুলিশ—প্রতিটি প্রকল্পে তেঘরিয়াবাসীর ভিটেমাটি অধিগ্রহন করা হয়েছে। প্রস্তাবিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের বর্তমান নকশা বাস্তবায়িত হলে গ্রামটির শত শত বছরের ইতিহাস ও বসবাসযোগ্যতা ধ্বংস হয়ে যাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কেউই ঘরবাড়ি নিয়ে টিকে থাকতে পারবে না। তাই সরকারকের কাছে রুট পরিবর্তনের দাবী জানান তারা।
এদিকে স্থাণীয়রা মহাসড়ক অবরোধ করলে ঢাকা মাওয়া মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এক ঘন্টার বেশি সময় রাস্তা অবরোধ রেখে পরে প্রশাসনের আশ্বাসে অবরোধকারীরা রাস্তা ছেড়ে দেয়। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে ফোন দেওয়া হলে , তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।
জানা যায়, রাজধানীর পূর্বের সঙ্গে পশ্চিমের সংযোগ ঘটানোর উদ্দেশ্যে ঢাকা ইস্ট-ওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’ প্রকল্পটি নির্মান করা হবে। প্রকল্পটিতে ৩৯ কিলোমিটারের একটি উড়াল সড়ক নির্মান করা হবে এছাড়া ২৫ কিলোমিটারের দীর্ঘ র্যাম্প করা হবে। শহরের ভেতর চলাচল ছাড়াই এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে পাড়ি দেওয়ার পথ উন্মুক্ত হবে। এই উড়াল সড়কটি নির্মান করা হলে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন পদ্মা সেতু দিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ ছাড়াই দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এবং চট্টগ্রাম-সিলেটসহ পূর্বাঞ্চলে যাতায়াত করতে পারবে। ফলে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকাগুলোর যানজট অনেকটা কমে যাবে। এক্সপ্রেসওয়েটি জাতীয় মহাসড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-মাওয়া, ঢাকা-সিলেটের এবং ঢাকা-আরিচা সঙ্গে সংযুক্ত হবে।
এর আগে গত ২৫ জুলাই সাভারে এই এক্সপ্রেসওয়ের রুট পরিবর্তনের দাবীতে প্রতিবাদ সভা ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে সাভারবাসী।