নরসিংদীতে ভাসমান মাদকসেবীদের নিরাপদ আস্তানা

Sanchoy Biswas
আশিকুর রহমান, নরসিংদী
প্রকাশিত: ৫:০৮ অপরাহ্ন, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:৪২ অপরাহ্ন, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নরসিংদী শহরজুড়ে মাদক সেবন ভয়াবহ আকারে বিস্তার লাভ করেছে। পরিত্যক্ত বাসাবাড়ি-কলোনি, রাস্তাঘাট, পৌরপার্ক, তরোয়া কাবুল শাহ মাজার, রেলওয়ে স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডসহ যেখানে-সেখানে প্রকাশ্যে মাদক সেবন চলছে হরহামেশাই। আর এসব মাদক সেবনের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বেশিরভাগ উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী ও পথশিশুরা। অন্যদিকে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের মাদকসহ ধরা পড়ছে ব্যবসায়ী ও বহনকারীরা। মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতারে র‌্যাব-পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযান অব্যাহত থাকলেও কিছু স্পর্শকাতর এলাকায় দেখা যায় প্রকাশ্যে মাদক সেবন।

যেমন নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশনের ১ ও ২ নং প্লাটফর্ম, ফুটওভার ব্রিজ, পৌরপার্ক, সদর হাসপাতালের নার্স কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত ভবন, পুরাতন বাসস্ট্যান্ড, নতুন বাসস্ট্যান্ড, নরসিংদী বড়বাজার (মাছ বাজার), বেড়িবাঁধ, তরোয়া কাবুল শাহ মাজারসহ শহরের অলি-গলি এখন মাদকসেবীদের অভয়ারণ্য।

আরও পড়ুন: গ্রাম আদালত কার্যক্রমকে গতিশীল করতে সরকারের নানা উদ্যোগ

সরজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নরসিংদী রেলওয়ে স্টেশন: রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ি ও নিরাপত্তা বাহিনীর অফিস। স্টেশনের প্লাটফর্মে বহু লোকের সমাগম। এছাড়াও এসব স্থানে রয়েছে বহু সিসিটিভি। এতকিছুর পরও প্লাটফর্ম ও ফুটওভার ব্রিজে প্রকাশ্যে চলছে মাদকসেবীদের মাদক সেবন।

বাসাবাড়ি ও কলোনি: শহরের সদর হাসপাতালের নার্স কোয়ার্টারের পরিত্যক্ত ভবন ও বাসাবাড়ির পরিত্যক্ত ভবনে নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়েছে মাদকসেবীরা। কিন্তু পাশেই রয়েছে র‌্যাব-১১ নরসিংদীর ক্যাম্প। তারপরও এসব স্থানে বীরদর্পে মাদকসেবীরা কখনো একাকী, আবার কখনো দু’তিনজন জটলা বেঁধে করছে মাদক ও ইয়াবা সেবন।

আরও পড়ুন: রামগঞ্জে খানাখন্দে ভরা দুই কিলোমিটার রাস্তার বেহাল দশা, হাজার হাজার মানুষের দুর্ভোগ চরমে

পৌরপার্ক: এখানে প্রতিদিনই উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণী ও পথশিশুরা জটলা বেঁধে বিভিন্ন ধরনের মাদক সেবন করছেন।

কাবুল শাহ মাজার: মাজারে আসা এক শ্রেণির ভাসমান লোক মাজারের আশপাশ এলাকায় অবস্থান নিয়ে প্রকাশ্যে গাঁজা সেবন করছেন।

নতুন ও পুরাতন বাসস্ট্যান্ড: বখাটে মাদকসেবীদের সাথে স্ট্যান্ডের অনেক গাড়িচালক ও হেলপার মাদক সেবনে অংশ নেয়। শুধু মাদক সেবন নয়, ভাসমান মাদকব্যবসায়ী ও বিক্রেতারাও এ এলাকায় হকার বেশে মাদকের ফেরি করে থাকেন।

বড়বাজার (মাছ বাজার): বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মাদকসেবীরা স্থানীয় মাদকসেবীদের সাথে মিলে প্রকাশ্যে নির্বিঘ্নে চলছে মাদক সেবন। ফলে এইসব মাদকসেবনকারীরা মাতাল হয়ে প্রতিনিয়ত আক্রমণের শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।

পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা তৎপর না হওয়ায় মাদকের টাকা যোগান দিতে তারা ছিনিয়ে নিচ্ছে পথচারীদের মোবাইল ফোন, টাকা-পয়সা, স্বর্ণালংকারসহ মূল্যবান জিনিসপত্র। আর এসব ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটলেও এবং মাদকসেবীরা বেপরোয়া হয়ে মাদক সেবন করলেও তেমন কোনো প্রতিকার নেই।

প্লাটফর্মে অপেক্ষারত যাত্রী ও পথচারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আগে স্টেশন ও আশপাশে এরকম দৃশ্য কখনও ছিল না। দিন যত যাচ্ছে ততই মাদকসেবীদের পাবলিক প্লেসে মাদক সেবন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব ঘটনা প্রশাসনের নাকের ডগায় ঘটছে। প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করছেন।

তারা মাদক সেবনের পর প্লাটফর্মে অবস্থারত যাত্রী ও পথচারীদের সাথে উন্মাদ আচরণ করায় যাত্রী ও পথচারীরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে। পাশাপাশি শহরের চুরি-ডাকাতি, ছিনতাইয়ের মত ঘটনা ঘটছে এবং খুন-খারাবির মত ঘটনা আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এসব মাদকসেবীদের নিয়ন্ত্রণে আনতে স্থানীয় প্রশাসনকে আরও কঠোর হতে হবে।