চুয়াডাঙ্গায় শরতের শুভ্রতায় ব্যস্ত দুর্গা প্রতিমা শিল্পীরা, দুর্গোৎসব উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের ব্যাপক নিরাপত্তা

Sanchoy Biswas
সনজিত কর্মকার, চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:১১ অপরাহ্ন, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৫:৩৬ পূর্বাহ্ন, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

প্রকৃতিতে শরতের শুভ্রতার সাথে আসছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। শিশির ভেজা ভোর আর শরতের কাশফুল জানাচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসবের আগমনী বার্তা। হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় এ উৎসব ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় প্রতিমা তৈরিতে কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন।

মৃৎশিল্পীদের নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় প্রতিমাগুলো হয়ে উঠছে অপরূপ। খড় আর কাদা মাটি দিয়ে প্রতিমা তৈরি শেষে এখন চলছে প্রলেপ ও রঙের কাজ। একই সঙ্গে শরতের দুর্গোৎসবকে পরিপূর্ণভাবে সাজাতে দিনরাত মন্দিরগুলোতে চলছে ব্যাপক প্রস্তুতি।

আরও পড়ুন: নাজিরপুরে শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা

চুয়াডাঙ্গায় বেশ কয়েকটি পূজামণ্ডপ ঘুরে দেখা গেছে, কাদা-মাটি, বাঁশ, খড়, সুতলি দিয়ে শৈল্পিক ছোঁয়ায় তিলতিল করে গড়ে তোলা হয়েছে দেবীদুর্গার প্রতিমা। কারিগররা এ কাজে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। নিপুণ হাতের ছোঁয়ায় তৈরি করা হয়েছে দেবীদুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, অসুরসহ বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতিমা।

বাঙালি হিন্দুর উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয় ষষ্ঠীর আগে থেকেই। এবারের দুর্গাপূজা ২৭ সেপ্টেম্বর (১৪ আশ্বিন) ষষ্ঠী পূজা দিয়ে শুরু করে ২ অক্টোবর (১৫ আশ্বিন) বিজয়া দশমী দিয়ে শেষ হবে। এর আগে পঞ্চমী থেকেই শুরু হয় উৎসবের আমেজ। তবে ষষ্ঠী থেকেই কার্যত উৎসবের ঢাকে কাঠি পড়া শুরু হয়। শাস্ত্রমতে দুর্গাপুজোর মহাষষ্ঠীর দিন বোধন হয়।

আরও পড়ুন: পিরোজপুর জেলা বিএনপির নতুন কমিটিকে জামায়াতের শুভেচ্ছা

এ বছর চুয়াডাঙ্গা শহরের বড় বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, দাসপাড়া সত্যনারায়ণ দুর্গা মন্দির, তালতলা দুর্গা মন্দির, বেলগাছী দুর্গা মন্দির, মালোপাড়া দুর্গা মন্দির ও শহরতলী দৌলাতদিয়াড় দুর্গা মন্দিরে পূজার আয়োজন করা হয়েছে। ছোট-বড় বিভিন্ন মণ্ডপে শুরু হয়েছে প্যান্ডেল।

মৃৎশিল্পীরা জানান, প্রতিবছরই অধীর আগ্রহে দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরির কাজের অপেক্ষায় থাকেন। শুধু জীবিকার জন্যই নয়, দেবীদুর্গার প্রতিমা তৈরির সাথে জড়িয়ে রয়েছে তাদের ধর্মীয় অনুভূতি, ভক্তি আর ভালোবাসা। দুর্গা মাকে মায়ের মতোই তৈরি করা হচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা শহরতলী দৌলাতদিয়াড় দুর্গা মন্দিরে দুর্গার প্রতিমা তৈরি করছেন উত্তম পাল। তিনি জানান, পূজার আর মাত্র কয়েকটা দিন বাকি। তাই দম ফেলার সময়ও নেই। এর মধ্যেই দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরির সব কাজ শেষ করতে হবে।

কাজ শেষে বিশ্রামের ফাঁকে প্রতিমা শিল্পী আনন্দ পাল বলেন, “যত কষ্টই করি না কেন, যখন দেবীকে তার স্বরূপে মণ্ডপে বসানো হবে তখন সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে। আমাদের কাছে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে যখন আমাদের তৈরি প্রতিমাকে সবাই পূজা করে। তখন নিজেকে সফল, সার্থক মনে হয়।”

চুয়াডাঙ্গা জেলায় এবার ১১২টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপিত হবে। এর মধ্যে আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩৫টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ২১টি, জীবননগর উপজেলায় ২৫টি এবং সদর উপজেলায় ৩১টি। দুর্গাপূজা উপলক্ষে ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জামাল আল নাসের বলেন, “জেলা পুলিশের শতকরা ৮০ ভাগ জনবল দুর্গাপূজায় নিরাপত্তা ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবে। প্রায় ৭৯০ জন ফোর্স জেলাব্যাপী কয়েকটি স্তরে মোতায়েন থাকবে। জেলায় ১১২টি পূজা মণ্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, গুরুত্বপূর্ণ এবং সাধারণ এই তিন স্তরে ভাগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৮টি মণ্ডপকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ, ৪১টি মণ্ডপকে গুরুত্বপূর্ণ এবং ৫৩টি মণ্ডপকে সাধারণ হিসেবে ধরা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “অধিক গুরুত্বপূর্ণ এবং গুরুত্বপূর্ণ স্তরে যে মণ্ডপগুলোকে ধরা হয়েছে সেগুলোতে স্থায়ীভাবে দুইজন করে পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। সাধারণ স্তরের আওতায় মণ্ডপগুলোতে একটি করে পুলিশ সদস্য স্থায়ীভাবে মোতায়েন থাকবে। ১৫টি স্ট্রাইকিং থাকবে। পূজা মণ্ডপে যে কোনো অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ বাহিনীর সাথে সিভিল পোশাকে ডিএসবি ও আনসার সদস্যরা সহায়তা করবে।”

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক নয়ন কুমার রাজবংশী বলেন, “প্রতিটি পূজা মণ্ডপে নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, র‌্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনী সর্বদা টহল মোতায়েন থাকবে। প্রতিমা বিসর্জন সন্ধ্যা ৭টার মধ্যেই সম্পন্ন করতে হবে। আজান ও নামাজের সময় ঢাক-ঢোল ও শব্দ সৃষ্টিকারী মাইক বাজানো যাবে না। শারদীয় দুর্গাপূজা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের লক্ষ্যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ ও আলোকসজ্জা, মণ্ডপ ব্যবস্থাপনা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও সার্বিক সহযোগিতা নিশ্চিত করা হয়েছে।”