সুপ্রীম কোর্টের স্টে থাকা সত্বেও রেজিস্ট্রেশন বিভাগ নিয়ে ক্যাবিনেটের সিদ্ধান্তে নানা প্রশ্ন

Any Akter
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩:০৩ অপরাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৩:০৬ অপরাহ্ন, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সুপ্রিম কোর্ট দেশের সর্বোচ্চ আদালত হিসাবে স্বাধীন বিচার বিভাগের সিদ্ধান্ত সরকারের সর্ব পর্যায়ে মানতে বাধ্যবাধকতা রয়েছে।  কিন্তু বিচারাধীন এবং আদালতের স্পষ্ট স্থগিতাদেশ (স্টে) থাকা সত্ত্বেও নির্বাহী বিভাগ একই বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া শুধু সাংবিধানিক ভারসাম্যই নয়—আইনের শাসনকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে। এমনই এক গুরুতর অভিযোগ উঠেছে ভূমি প্রশাসন সংক্রান্ত একটি সিদ্ধান্তকে কেন্দ্র করে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলেছেন এতে বিচার বিভাগের উপর নির্বাহী বিভাগের কর্তৃত্ব চ্যালেঞ্জ করার মত। 

রেজিস্ট্রেশন বিভাগকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে নেওয়ার প্রস্তাব আগামী ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিতব্য ক্যাবিনেট বৈঠকের ৩ নম্বর এজেন্ডায় তোলা হচ্ছে বলে জানা গেছে। অথচ এই বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে আদালতে বিচারাধীন এবং এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে রুল ও স্টে জারি রয়েছে।

আরও পড়ুন: ২৫ ডিসেম্বর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত

নিবন্ধন নিয়ে  ভূমি ও আইন মন্ত্রণালয়ের দ্বন্দ্ব:

ভূমি মন্ত্রণালয়ের দাবি, এসিল্যান্ড অফিসের সঙ্গে রেজিস্ট্রেশন বিভাগ একই জায়গায় থাকলে জনগণ এক স্থান থেকেই ভূমি সংক্রান্ত সব সেবা পাবে, সময় ও ভোগান্তি কমবে। তবে আইন মন্ত্রণালয় এই প্রস্তাবের ঘোর বিরোধিতা করে আসছে। তাদের মতে, ভূমি রেজিস্ট্রেশন একটি কোয়াসি-জুডিসিয়াল কার্যক্রম, যা সরাসরি আইন প্রয়োগ ও ব্যাখ্যার সঙ্গে জড়িত। ভূমি আইন, নন-এগ্রিকালচার টেন্যান্সি অ্যাক্ট, স্টেট একুইজিশন অ্যান্ড টেন্যান্সি অ্যাক্টসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ আইনের আওতায় এসব কার্যক্রম পরিচালিত হয়।

আরও পড়ুন: এভারকার হাসপাতাল ও সংলগ্ন এলাকায় ড্রোন উড্ডয়ন নিষিদ্ধ ঘোষণা

আইন মন্ত্রণালয়ের যুক্তি আরও স্পষ্ট—আইন বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়াই বিসিএস প্রশাসন ক্যাডার থেকে এসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা বিচারিক প্রকৃতির সিদ্ধান্ত দেন, যার ফলে অনেক ক্ষেত্রে সেবার মান কমে গিয়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়ে।

আদালতের আদেশ ও বিচারাধীন মামলা

এই বিরোধের সূত্রপাত হয় অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ (অর্থ ও ঋণ ব্যবস্থাপনা শাখা) কর্তৃক জারি করা স্মারক নং অম/অবি/সঋব্যশা-২/২০০৭/১৩০, তারিখ ৩১ জুলাই ২০০৭ থেকে।

উক্ত পত্রের বিরুদ্ধে গোলাম মাওলা নামের এক ব্যক্তি বাদী হয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট-এ রিট পিটিশন নং ২৫১/২০০৮ দায়ের করেন। মামলায় ক্যাবিনেট বিভাগ, আইন মন্ত্রণালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়সহ মোট ১৭ জনকে বিবাদী করা হয়।

২০০৮ সালের ১৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট ওই রিটে রুল জারি ও স্থগিতাদেশ (স্টে) প্রদান করেন, যা আজও বহাল রয়েছে বলে আইন সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়।

ক্যাবিনেটে প্রস্তাব: আইনজীবীদের উদ্বেগ

আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং স্টে বহাল থাকা অবস্থায় একই বিষয়ে ক্যাবিনেট বৈঠকে প্রস্তাব উত্থাপন করা স্পষ্টতই এখতিয়ার বহির্ভূত এবং তা আদালত অবমাননার শামিল হতে পারে।

তাদের ভাষ্য, আদালতের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রবণতা চলতে থাকলে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি জনগণের আস্থা ক্ষুণ্ন হবে এবং আইনের শাসন চরমভাবে ব্যাহত হবে।

এখন দেখার বিষয়—এই পরিস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্ট কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন এবং নির্বাহী বিভাগ শেষ পর্যন্ত আদালতের আদেশকে কতটা শ্রদ্ধা জানায়।