রূপগঞ্জে মানবতার দেয়াল অসহায় মানুষের মুখে নতুন হাসি, মানবিকতার নতুন ইতিহাস

Sanchoy Biswas
শ্রী দিপু চন্দ্র গোপ, রূপগঞ্জ, (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ৭:৫৫ অপরাহ্ন, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৯:৪৫ অপরাহ্ন, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মানবিকতার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে রূপগঞ্জ সানফ্লাওয়ার স্পোর্টিং ক্লাব। সম্প্রতি ক্লাবটির উদ্যোগে তৈরি হয়েছে “মানবতার দেয়াল” – একটি দেয়াল, যেখানে যে কেউ তার অপ্রয়োজনীয় কাপড়-চোপড়, শীতবস্ত্র কিংবা প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র রেখে যেতে পারে, আর যাদের প্রয়োজন তারা তা নিয়ে যেতে পারে বিনা সংকোচে।

দেয়ালের একপাশে স্পষ্টভাবে লেখা রয়েছে – দেওয়ার সময় গর্ববোধ করবেন না এবং নেওয়ার সময় লজ্জাবোধ করবেন না। এই কয়েকটি বাক্য যেন মানুষের মনে নতুন আশা, নতুন সাহস জাগিয়ে তুলেছে। সমাজে প্রচলিত দান-খয়রাতের লজ্জা কাটিয়ে সাধারণ মানুষ স্বাচ্ছন্দ্যে এখানে তাদের প্রয়োজন মেটাচ্ছেন।

আরও পড়ুন: সেপটিক ট্যাংক ও স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নিশ্চিত করতে রাজউকের উদ্যোগ

স্থানীয়রা জানায়, প্রতিদিন ভোর থেকে রাত পর্যন্ত মানুষ এখানে আসে – কেউ কাপড় রেখে যায়, কেউ নিয়ে যায়। আশপাশের দোকানদাররা বলেন, এই দেয়াল তৈরি হওয়ার পর এলাকা এক ধরনের মানবিক সৌন্দর্যে ভরে গেছে।

শীতকালে এটি গরিব মানুষের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দাঁড়ায়। যেসব পরিবার আগে সন্তানদের শীতের কাপড় কিনতে পারত না, তারা এখন এখানে এসে কাপড় নিয়ে যাচ্ছে। আর যেসব সচ্ছল পরিবার বাড়তি কাপড় জমিয়ে রেখেছিল, তারা এখন গর্বের সাথে এখানে দিয়ে যাচ্ছে।

আরও পড়ুন: বাংলা প্রেসক্লাব অব মিশিগানে কোষাধ্যক্ষ নির্বাচিত কুলাউড়ার লিটু

বিএনপি নেতা মোস্তফা আহম্মেদ আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, “মানবতার দেয়াল শুধু একটি দেয়াল নয়, এটি সমাজে ভালোবাসা ও সহমর্মিতার প্রতীক। এখানে যে কেউ তার সামর্থ্য অনুযায়ী কাপড়, খাবার বা প্রয়োজনীয় জিনিস রেখে যাবে, আর যাদের প্রয়োজন তারা নিয়ে যাবে – এটাই প্রকৃত মানবতা।”

সেচ্ছাসেবক দলের নেতা এমদাদ হোসেন বলেন, “এলাকার গরিব ও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই দেয়াল একটি বড় সহায়তা হবে। আমরা চাই সবাই এগিয়ে আসুক এবং এই উদ্যোগটিকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দিক।”

যুবদল নেতা সোহেল মিয়া জানান, “আমরা চাই এই উদাহরণ দেখে অন্য এলাকাতেও মানবতার দেয়াল তৈরি হোক। সমাজে এমন মানবিক কর্মকাণ্ড যত বাড়বে, ততই আমাদের সামাজিক বন্ধন দৃঢ় হবে।”

বিএনপির নেতা আবু বক্কর মিন্টু বলেন, “এটি সময়োপযোগী এবং প্রশংসনীয় একটি পদক্ষেপ। সমাজের বিত্তশালীদের উচিত এ ধরনের উদ্যোগকে সহযোগিতা করা যাতে গরিব মানুষদের কষ্ট কিছুটা হলেও কমে।”

স্থানীয় সাংবাদিক শ্রী দিপু চন্দ্র গোপ বলেন, “আমি ব্যক্তিগতভাবে এই উদ্যোগের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরে গর্বিত। সমাজে যদি আমরা সবাই একটু একটু করে হাত বাড়াই, তবে কেউ না খেয়ে থাকবে না, কেউ শীতে কষ্ট পাবে না। মানবতার এই উদ্যোগ আমাদেরকে একত্রিত করবে এবং সমাজে আশার আলো জ্বালাবে।”

রূপগঞ্জের এই মানবতার দেয়াল ধীরে ধীরে এক আন্দোলনে রূপ নিচ্ছে। অনেকেই প্রস্তাব করেছেন যাতে প্রতিটি ইউনিয়নে অন্তত একটি করে মানবতার দেয়াল তৈরি করা হয়। স্থানীয় তরুণ-যুবকদের মধ্যে ইতিমধ্যে এই উদ্যোগ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি হয়েছে।

রূপগঞ্জবাসীর আশা, এই উদ্যোগের মাধ্যমে একদিন এমন সমাজ গড়ে উঠবে যেখানে কেউ আর কাপড়ের অভাবে কষ্ট পাবে না, যেখানে দেওয়ার আনন্দ আর নেওয়ার সম্মান একসাথে মিলেমিশে মানবিকতার এক নতুন ইতিহাস রচনা করবে।