দেবীদ্বারের কৃষিতে ফিরেছে সবুজ হাসি

Sanchoy Biswas
মো. মাসুদ রানা, কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:২৬ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৬:৫৮ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার গোমতী নদীর বিশাল চরে এখন জেগে উঠেছে এক অনন্য কৃষির বিস্ময়। শীতের শুরুতেই পলিমাটির উর্বর শক্তিতে ভর করে গড়ে ওঠে সবুজ শসার খেত। স্থানীয় চাহিদা পূরণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন বাজারেও এই চরের শসা পাঠানো হয়। দুই যুগের ঐতিহ্য আর অভিজ্ঞতায় গড়ে উঠেছে এই ‘শসা রাজ্য’, যা কৃষকদের মুখে এনেছে নতুন স্বপ্ন এবং হাসি।

চরের গ্রামগুলোতে শসা মৌসুম মানেই উৎসবের আবহ। ভোরের কুয়াশা ভেদ করে মাঠে নামেন কৃষকেরা, আর নদীর সবুজ পাড়জুড়ে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে তাদের শসাখেত। সূর্যের আলো পড়তেই ঝলমল করে ওঠে পাতার শিশির। এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য যেন নতুন দিনের শুভেচ্ছা জানায় চরবাসীকে।

আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী বাঁচাতে ছয় দফা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জামায়াতের র‌্যালি

শুধু কৃষি নয়, শসা মৌসুমে আশপাশের মানুষদের জীবনেও সোনালি ছোঁয়া লাগে। পরিবহন শ্রমিক, বাজারের পাইকার, ক্ষেতের দিনমজুর—সবাই ব্যস্ত হয়ে ওঠেন। ফলে গ্রামীণ অর্থনীতিতে ফেরে নতুন প্রাণ।

দেবীদ্বারের বারেরাচর, খলিলপুর, হামলাবাড়ি, বালিবাড়ি ও আশানপুর—এই পাঁচটি গ্রাম গোমতী তীরবর্তী সবচেয়ে বিখ্যাত শসা উৎপাদন কেন্দ্র। একসময়ের পাট ও মিষ্টি আলুর জমিতে এখন শুধু শসার সবুজ সমারোহ। পুরোনো দিনের সেই গল্প আজ রূপ নিয়েছে নতুন প্রজন্মের স্থায়ী জীবিকা ও কৃষি ঐতিহ্যে।

আরও পড়ুন: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় গলাকেটে ও গুলি করে সাবেক ছাত্রদলকর্মীকে হত্যা

চরে গেলে চোখে পড়ে সারি সারি শসার খেত। কেউ শসা তুলছেন, কেউ পরিচর্যা করছেন লতাগুল্ম, আবার কেউ ওজন করে পিকআপ ভ্যানে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। নারী-পুরুষ সবাই সমানভাবে কাজ করেন। শসা মৌসুমে প্রতিটি পরিবারই যেন ছোট একটি কৃষি প্রতিষ্ঠান।

এই চরের শসার বৈশিষ্ট্য হলো বড় মাপ, টাটকা স্বাদ এবং উন্নতমান। এখানে সাধারণ শসার পাশাপাশি পাওয়া যায় বড় বীজ শসা; যেগুলোর ওজন অনেক সময় ৪–৫ কেজি পর্যন্ত হয়। চলতি মৌসুমে খুচরা বাজারে প্রতি কেজি শসা বিক্রি হচ্ছে ৫০–৬০ টাকায়—যা কৃষকদের মুখে হাসি ফোটাচ্ছে।

কৃষক গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমাদের নদীর চরের শসা খুবই সুস্বাদু। তাই সারা দেশেই এখানকার শসার আলাদা চাহিদা রয়েছে।”

বারেরাচরের কৃষক আবুল হোসেন জানান, “বাপ-দাদারা পাট আর আলু চাষ করতেন, লাভ কম হতো। এখন শসাই আমাদের জীবিকার প্রধান ভরসা।”

দেবীদ্বার উপজেলা কৃষি অফিসের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এ টি এম রাশেদুজ্জামান সরকার বলেন, “চরের পলিমাটি ও স্বাভাবিক উর্বরতা শসার গুণগত মান শতভাগ নিশ্চিত করে। তাই বাজারে এখানকার শসার বিশেষ কদর আছে।”

শসার রাজ্য আজ শুধু দেবীদ্বারের কৃষি সম্ভাবনার গল্প নয়; এটি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের সবুজ কৃষি ঐতিহ্যের এক উজ্জ্বল প্রতীক। নদীর চরকেন্দ্রিক এই শসা চাষ আগামী দিনগুলোতেও হাজারো কৃষকের জীবনে আলো ছড়াবে—এমনটাই প্রত্যাশা স্থানীয়দের।