পটুয়াখালীতে বিএনপি নেতার বাধায় কৃষকের জমিতে চাষাবাদ বন্ধ

Sanchoy Biswas
পটুয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৭:১৫ অপরাহ্ন, ১০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৩:৩৯ অপরাহ্ন, ১৩ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

পটুয়াখালীর গলাচিপায় কৃষকদের ২০০ একর জমিতে চাষাবাদ বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। জমিতে চাষাবাদ করতে প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা চেয়েছেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাতে পটুয়াখালী প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে এ সহযোগিতা চান চরবাংলা বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতি লিমিটেড–এর সদস্যরা।

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় মদপানে ৬ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে আরও ১

সংবাদ সম্মেলনে সমিতির সভাপতি সেরাজ খান বলেন, আমাদের কোনো পৈত্রিক জমি নেই। আমরা দীর্ঘ ৩০-৩৫ বছর ধরে গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরবাংলা এলাকায় সরকারি খাস জমি চাষাবাদ করে জীবিকা নির্বাহ করছি। প্রতি বছর উপজেলা ভূমি অফিস থেকে অনুমতি নিয়ে এসব সরকারি জমি আমরা চাষ করি।

মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশে গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমাদের সমিতির ভূমিহীন সদস্যদের নামে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী ডিসিআর প্রদান করেন। কিন্তু প্রতি বছরের মতো এবারও জমিতে চাষাবাদ করতে গেলে স্থানীয় ভূমিদস্যু ও চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বাকের বিশ্বাস, ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মতিন হাওলাদার ও চরবাংলা ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি মো. আনোয়ার হাওলাদারসহ ১৪-১৫ জন বিএনপি নেতা-কর্মী আমাদের বাধা দেন। তারা বলেন, সরকারি খাস জমি ৫ আগস্টের পর তারা ভোগদখল করবে, আমরা কেন ডিসিআর নিয়েছি।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে উৎপাদনশীল করতে হলে দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে: ড. মঈন খান

তিনি আরও বলেন, “আমরা উপায়ান্তর না দেখে গলাচিপা থানায় অভিযোগ করি। এরপর থানার এএসআই মো. জাকির হোসেন সরেজমিনে তদন্ত করে ১০৭/১১৭ ধারায় প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরে গলাচিপা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন। আসামিরা চলতি বছরের ৬ অক্টোবর আদালতে মুচলেকা দেন এবং ১৫ জন আসামি ২,০০০ টাকার বন্ডে অ্যাডভোকেট মো. মনিরুল ইসলামের জিম্মায় জামিন নেন।

সেরাজ খান অভিযোগ করেন, আসামিরা বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস ও সাংগঠনিক সম্পাদক মতিন হাওলাদারের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে পরিচিত। তারা আমাদের এলাকা ছাড়ার জন্য মারধর, হয়রানি ও প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে। তাদের আতঙ্কে আমরা এখন চরবাংলায় যেতে পারছি না। আমরা কৃষক মানুষ—এলাকা ছেড়ে কোথায় যাবো? তাই আমরা প্রশাসন ও সাংবাদিকদের সহযোগিতা কামনা করছি।

সমিতির সাধারণ সম্পাদক মজিবর হাওলাদার বলেন, আমাদের সমিতির প্রায় ৭০০ সদস্য রয়েছে। এর মধ্যে ১৫৫ জন ভূমিহীন সদস্যকে হাইকোর্টের নির্দেশে উপজেলা ভূমি অফিস থেকে ডিসিআর দেওয়া হয়েছে। বহু বছর ধরে আমরা এসব জমিতে চাষাবাদ করছি। বর্তমানে বিএনপি নেতা-কর্মীরা জোরপূর্বক জমি দখল করার চেষ্টা করছে এবং আমাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাচ্ছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. বাকের বিশ্বাস অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, চরবাংলায় একটি সমিতি আছে, ওই সমিতির আওতাধীন কিছু লোক দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে অবৈধভাবে জমি ভোগ করেছে। ৫ তারিখের পর কিছু লোক আমার সহযোগিতা চায়। আমি এসিল্যান্ডকে বলেছি—প্রকৃত ভূমিহীনদের জমি দিতে। পরে ওই জমির মধ্যে থেকে বৈশাখ মাসে ১২ জনকে এক বছরের জন্য প্রত্যায়ন দেন গলাচিপার সাবেক এসিল্যান্ড। এর বিরুদ্ধে ওই সমিতি হাইকোর্টে রিট করে এবং হাইকোর্ট সেই প্রত্যায়ন বাতিল করে সমিতিকে ডিসিআর দিতে বলেন। তবে যারা প্রত্যায়ন নিয়েছিল, তারা রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করেছে বলে শুনেছি। চরবাংলায় আমার কোনো জমি নেই; আমি ঘটনার সঙ্গে জড়িত নই।

গলাচিপা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, আমরা উভয় পক্ষের বিরোধ মীমাংসার চেষ্টা করছি। যদি বিএনপির কেউ অনিয়ম করে থাকে, তবে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুর রহমান বলেন, যেহেতু এটি খাস জমি সংক্রান্ত বিরোধ, বিষয়টি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আওতাধীন। তবে থানায় কেউ অভিযোগ দিলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।