জীবননগরে সাথী ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের
চুয়াডাঙ্গার জীবননগরে একই জমিতে একাধিক ফসল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা। এক খরচে দুই ধরনের ফসল চাষ করে বাড়তি আয়ের সুবিধা পাচ্ছেন তারা। যার কারণে এ উপজেলায় সাথী ফসল চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। সাথী ফসল চাষ করে একই জমিতে দুই ধরনের ফসল পেয়ে খুশি তারা।
জীবননগর উপজেলার উথলী, মনোহরপুর, আন্দুলবাড়িয়া, কাশিপুর, রায়পুর, হাসাদাহ, বাঁকা ও সীমান্ত এলাকার বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ জুড়ে সাথী ফসলের চাষ দেখা গেছে। আখ, কলা, পেয়ারা, ড্রাগন, মাল্টা, পেঁপে ইত্যাদি চাষের মধ্যে বাঁধাকপি, ফুলকপি, মিষ্টি কুমড়া, মুলা, গাজর, বেগুন, ধনিয়া, বরবটি, টমেটো, পেঁয়াজ, রসুন, লালশাক, পালং শাকসহ নানা শীতকালীন সবজি ও ডালজাতীয় ফসল চাষ করা হয়েছে। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি ফসলগুলো সাথী ফসল হিসেবে চাষ করা হয়। একই জমিতে একাধিক ফসল বাজারজাত করতে পেরে খুশি চাষিরা। একই সঙ্গে বাড়তি আয়ের সুবিধা পাওয়ায় উপজেলায় দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে সাথী ফসল চাষ।
আরও পড়ুন: নেত্রকোনা-৩ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পরিবর্তনের দাবি
জীবননগর উপজেলার উথলী গ্রামের চাষি আব্দুল মালেক বলেন, “৩ বিঘা জমিতে পেয়ারা চাষের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে ১ বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছি। বাকি জমিতে ফুলকপি ও বেগুন চাষ করেছি। পেয়ারা গাছে যে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও সেচ দেওয়া হয়, সেটাতেই সাথী ফসল চাষ হয়ে যায়। সাথী ফসলের জন্য আলাদা খরচ করতে হয় না। ইতিমধ্যেই বেগুন বিক্রি করা শুরু হয়ে গেছে। সাথী ফসল থেকে বাড়তি টাকাটা বোনাস হিসেবে পাবো।”
হাসাদাহ গ্রামের শফিকুল ইসলাম নামের এক চাষি জানান, “কোন ফসল চাষ করলে লাভ হবে আর কোনটিতে লোকসান হবে এটা বলা মুশকিল। আমার মাল্টা বাগানের সারির মধ্যে বেড পদ্ধতিতে পেঁয়াজ, রসুন ও ধনিয়া পাতা চাষ করেছি। একটি ফসলে লোকসান হলে আরেকটি ফসলে ভালো দাম পাওয়া যায়। একটি ফসলে লোকসান হলে আরেকটি ফসলের লাভের টাকা দিয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যায়। যার কারণে সাথী ফসল চাষ করা। সাথী ফসল চাষ করলে কখনো লোকসান হয় না।”
আরও পড়ুন: ঢাকায় আবারও বাসে আগুন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানা যায়নি
শামিম হোসেন নামের আরেক চাষি বলেন, “২ বিঘা জমির আখের মধ্যে সরিষা ও মসুর চাষ করেছি। অন্য একটি জমিতে আখের মধ্যে সাথী ফসল হিসেবে মাসকলাইয়ের বীজ বুনেছি। আখ দীর্ঘমেয়াদি ফসল। আখের চারা বের হওয়ার পর সাথী ফসল তুলে নেওয়া হয়। আখ চাষে জমিতে যে পরিমাণ কেরুর জৈব সার দেওয়া হয়েছে, তাতেই সাথী ফসল উঠে যাবে। সাথী ফসল চাষ করে বাড়তি যে আয়ের সুযোগ পাওয়া যায়, সেটা দিয়ে জমি লিজের টাকা ও আখের উৎপাদন খরচ পুষিয়ে নেওয়া যাবে। সাথী ফসল চাষ করলে অন্যান্য ফসলে তেমন ক্ষতি হয় না।”
জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, “বাড়তি আয়ের সুযোগ থাকায় এ উপজেলায় কৃষকদের মধ্যে সাথী ফসল চাষ করার আগ্রহ বেড়েছে। সাথী ফসল চাষ করলে ফসলে রোগবালাই কম হয় ও একই জমিতে একই খরচে একাধিক ফসল পাওয়া যায়। সাথী ফসলের যে কান্ড ও পাতা মাটিতে পড়ে, সেটা উৎকৃষ্ট মানের সবুজ সার তৈরি করে। সাথী ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ ও সহযোগিতা প্রদান করা হচ্ছে।”





