রূপগঞ্জে বেড়েছে চুরি–ডাকাতি ও ছিনতাই, আতঙ্কে সাধারণ মানুষ

Sanchoy Biswas
শ্রী দিপু চন্দ্র গোপ, রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)
প্রকাশিত: ১০:৪৫ অপরাহ্ন, ১৪ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৬:৫২ অপরাহ্ন, ২৮ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

রূপগঞ্জের চুরি ডাকাতির উৎপাত বৃদ্ধি পেয়েছে। কখনো বাড়িঘরে, আবার কখনো দোকানপাট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চুরি-ডাকাতির ঘটনা প্রতিনিয়ত ঘটছে। এসব চোর-ডাকাতের আতঙ্কে রূপগঞ্জবাসী এখন নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন। সম্প্রতি ৮-১০টি চুরি-ডাকাতির ঘটনা ঘটলেও প্রতিকার মিলছে না।

হঠাৎ করেই রূপগঞ্জে ছিনতাই, ডাকাতি ও চোরের উপদ্রব বৃদ্ধি পেয়েছে। একের পর এক চুরির ঘটনা ঘটছে বিভিন্ন এলাকায় । অতিসম্প্রতি পরপর তিন দিনে ১০ টি বাড়িতে, মসজিদ মহাসড়কে ছিণতাই, ডাকাতি ও চুরির ঘটনা ঘটেছে।এছাড়াও গ্রামাঞ্চলে গরু চুরির ঘটনা ঘটছে বলে একাধিক সূত্রে জানাগেছে। এসব ঘটনায় থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশের টনক নড়েনি। লাগাতার চুরির ঘটনায় স্থানীয় মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

আরও পড়ুন: রূপগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী বাঁচাতে ছয় দফা অঙ্গীকার বাস্তবায়নে জামায়াতের র‌্যালি

১২ নভেম্বর বৈরাগ বাড়ীর টেক থেকে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ২ জনকে আটক করে উত্তম মাধ্যম দিয়ে স্থানীয় জনতা পুলিশে দেয়। একই দিনে গোলাকান্দাইল এলাকা থেকে এক অটো চোরকে আটক করে জনগণ। এভাবে প্রতি রাতেই ঘটছে চুরি ডাকাতির ঘটনা। পুলিশের নীরব ভূমিকায় জনমনে আতঙ্ক নেমে আসছে। মহাসড়কে ঘটছে ছিনতাইয়ের ঘটনা। দেখার কেউ নেই। কারো গোয়ালের গরু নেই। ঘরের আসবারপত্র নেই। নেই স্বর্ণালঙ্কার। টাকা পয়সা যা পাচ্ছে তাই হাতিয়ে নিচ্ছে। অসহায় জনগণ নিরুপায় হয়ে নিজেরাই রাত জেগে নিজেদের সম্পদ পাহারা দিচ্ছেন‘। এমনি করে কথাগুলো বলছিলেন রূপগঞ্জের আব্দুল মতিন মিয়া।

এ নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে নারায়ণগঞ্জ জেলার গোটা রূপগঞ্জের মানুষ। ২৮ অক্টোবর কায়েতপাড়া এলাকা থেকে ৪ টি গরু নিয়ে গেছে ও আরো গোয়ালের ২ টি গরু ছেড়ে দেয় চোরের দল। কায়েতপাড়ার তরিকুলের বাড়ি থেকে তিনটি মোবাইল ফোনসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকা চুরি করে নিয়ে যায় চোরের দল। ২২ আক্টোবর ফয়সালে ঘরের টিন কেটে ইলেকট্রিক ফ্যান, আলমারি চুরি কওে নেয় , আলী আহম্মদেও গ্যাসের চুলা ও কাহারের ঘর থেকে চাউলের বস্তা এবং রান্নার হাড়ি পাতিল নিয়ে নেয় চোরের দল।

আরও পড়ুন: দেবীদ্বারের কৃষিতে ফিরেছে সবুজ হাসি

সচেতন মহল মনে করেন, রূপগঞ্জে মাদকের প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধি পাওয়ায় চুরি ডাকাতি আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে গেছে। মাদক বিক্রিতে কোনো প্রকার বাধা না থাকায় এবং দ্রুত অনেক টাকার মালিক হওয়ার লোভে রূপগঞ্জে আজ ঘরে ঘরে মাদক ব্যবসায়ী তৈরি হচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এ বিষয়ে প্রশাসন একেবারেই নির্বিকার।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, পত্রিকার নাম আসলে আমাকেই মাদক ব্যবসায়ীরা মেরে ফেলবে। পুলিশ দিয়ে হয়রানি করবে। পুলিশ মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসে মাসে মাসোয়ারা নিয়ে যায়। আবার অনেক সময় মাদকসেবীদের ধরলেও অদূরে গিয়ে ওই মাদকসেবীকে দিয়ে বাসায় ফোন করে টাকা নিয়ে আসতে বলে। টাকার বিনিময়ে পুলিশ মাদকসেবীদের ছেড়ে দেয়। আর মাদক সেবনের টাকা জোগার করতেই এলাকার চুরি ডাকাতি করে নেশাখোররা।

রূপগঞ্জ উপজেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি দিন দিন অবনতি হচ্ছে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, চুরি-ডাকাতি রোধে পুলিশি তৎপরতা না থাকায় বেড়েছে এসব ঘটনা। প্রতি রাতেই উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজার ও বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে চলেছে। বেড়েছে চুরি ও ছিনতাই।

থানা সূত্রে জানা যায়, এ বছরের ১২ নভেম্বর উপজেলার গোলাকান্দাইল এলাকার যুবদল নেতা ইসমাইলের পায়ে গুলি ও পিটিয়ে জখম করে সাথে থাকা সাড়ে তিন লক্ষ টাকা ছিনিয়ে নেয় দুর্বৃত্তরা। ইসমাইলের মা বাদী হয়ে এ ব্যাপাওে থানায় মামলা রুজু করেছেন। কিন্তু আসামীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, ভয়ভ্রীতি ও প্রাণ নাশের হুমকী দিচ্ছে।

১৮ অক্টেবর রাতে কুশাব এলাকার আয়াত আলীর বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তিন লাখ টাকা ও ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার লুটে নেয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও তারা রয়ে যায় অধরা।

একইভাবে ১৬ অক্টোবর গভীর রাতে উপজেলার দক্ষিণ রূপসীর দেলোয়ারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতরা পরিবারের লোকজনকে মারধর করে স্বর্ণালঙ্কারসহ এক লাখ টাকার মালপত্র লুটে নেয়। এর আগে ২০ অক্টোবর উপজেলার ইকবাল হোসেন নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে ডাকাতরা ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও ৩০ হাজার টাকা লুটে নেয়। ২ নভেম্বর উপজেলার শামীম নামে এক কাপড় ব্যবসায়ীর বাড়িতে হানা দিয়ে অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে জিম্মি করে টাকা ও বিপুল পরিমাণ স্বর্ণালঙ্কার এবং একটি প্রাইভেটকার লুটে নেয় ডাকাতরা।

১ নভেম্বের রূপগঞ্জ উপজেলা সদরে নয়ন চন্দ্র দাস নামে এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ডাকাতি হয়। এ সময় ৯০ হাজার টাকা, স্বর্ণালঙ্কারসহ প্রায় পাঁচ লাখ টাকার মালপত্র লুট হয়।

১৫ অক্টেবর ঢাকা বাইপাস সড়কের পূর্বাচলে প্রাইভেটকারে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় ডাকাতরা ৪০ হাজার টাকাসহ প্রায় দুই লাখ টাকার মালপত্র লুটে নেয়। গত ৫ নভেম্বর রাতে উপজেলার মুড়াপাড়া বাজারে চারটি জুয়েলারি দোকানে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ সময় স্থানীয় বাজার কমিটি থানার নম্বরে ফোন দিয়ে সাড়া না পেয়ে ৯৯৯-এ কল দেন। ততক্ষণে চারটি দোকানের ৩০ ভরি স্বর্ণালঙ্কারসহ নগদ অর্থ লুটে নেয় ডাকাতরা।

একইভাবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাসুম মিয়া, ফকির চান, শাহাদাত, আসলাম মোল্লাসহ বিভিন্ন বাসাবাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া বেড়েছে সাধারণ কৃষক ও খামারির গোয়াল থেকে গরু চুরির ঘটনা।

২০ অক্টোবর নবী হোসেন নামে এক কৃষকের দুটি গরু, ৬ নভেম্বর আমানাউল্লাহ নামে এক কৃষকের দুধের গাভিসহ আটটি গরু, গত ২৩ অক্টোবর রাতে ছালেমের ৮টি গরু, ১৭ অক্টোবর চান মিয়ার ৫টি গরু, একই এলাকার বেলায়াতের তিনটি গাভি, ৩ নভেম্বর আলম হোসেনের চারটি গরু নিয়ে যায় চোররা। এসব বিষয়ে থানা পুলিশের কাছে মামলা দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেন তারা।

এ বিষয়ে রূপগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তরিকুল ইসলাম বলেন, প্রথমত আমাদের লোকবল কম। তারপরও আমরা সাধ্যমত চেষ্ঠা করে যাচ্ছি। চুরি ডাকাতি ছিনতাই প্রতিরোধে পুলিশ সক্রিয় রয়েছে। আমাদের টহল টিম প্রতি রাতেই টহল দিচ্ছে। পুলিশ সব সময় অপরাধ দমনে তৎপর রয়েছে।