বউ পেটানোর শীর্ষে বরিশাল

দেশে নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার চিত্র ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ঘর, যেখানে একজন নারী নিরাপত্তা ও ভালোবাসার আশ্রয় খোঁজেন, সেই ঘরই অনেক সময় পরিণত হচ্ছে নির্যাতনের নীরব কারাগারে। সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA)-এর যৌথভাবে পরিচালিত ২০২৪ সালের এক জরিপে উঠে এসেছে এমনই উদ্বেগজনক তথ্য।
জরিপ অনুযায়ী, দেশের প্রতিটি বিভাগেই নারীর প্রতি ঘরোয়া সহিংসতার হার ৭০ শতাংশের ওপরে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সহিংসতার শিকার হন বরিশাল বিভাগের নারীরা। এখানে জীবদ্দশায় স্বামী বা ঘনিষ্ঠ সঙ্গীর হাতে সহিংসতার শিকার হয়েছেন ৮২ শতাংশ নারী। এরপর রয়েছে খুলনা বিভাগ (৮১%), চট্টগ্রাম (৭৬%), ময়মনসিংহ (৭৫%), রাজশাহী (প্রায় ৭৫%) এবং রংপুর (৭৪%)। এমনকি তুলনামূলকভাবে ‘শান্তিপূর্ণ’ বিবেচিত সিলেট ও ঢাকাতেও সহিংসতার হার যথাক্রমে ৭৩ শতাংশ।
আরও পড়ুন: আজ বিশ্ব মা দিবস
জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী, বাংলাদেশের নারীদের জীবদ্দশায় সহিংসতার গড় হার ৭০ শতাংশ। কিন্তু দেশের সামাজিক বাস্তবতায় সংজ্ঞাটি বিস্তৃত করলে দেখা যায়, অন্তত ৭৬ শতাংশ নারী তাদের জীবদ্দশায় পারিবারিক সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন, আর গত এক বছরে এই হার ৪৯ শতাংশ।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকাগুলিতে নারীর প্রতি সহিংসতার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। দুর্যোগে ঘর ভাঙার পাশাপাশি ভাঙে নারীর নিরাপত্তা, সম্মান এবং জীবনের অধিকার। একদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়, অন্যদিকে ঘরের ভেতরের অমানবিকতা, দারিদ্র্য ও পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতার সঙ্গে লড়াই করতে হয় তাদের।
আরও পড়ুন: গরবিনী মা সম্মাননার ১ যুগ
এই চিত্র কেবল সহিংসতার পরিসংখ্যান নয়, এটি একটি সমাজব্যবস্থার আর্তনাদ যেখানে নারী এখনো নিজ ঘরে নিজ অধিকার থেকে বঞ্চিত, শিকার হচ্ছেন নির্যাতনের, আর সমাজ প্রহরীর ভূমিকা পালনে বারবার ব্যর্থ হচ্ছে।