ওসি সাথে ডিআইজির এ ধরনের আচরণ ঠিক হয়নি- হাইওয়ে প্রধান

ডিআইজি রেজাউলের বিরুদ্ধে ওসির দাড়ি কটাক্ষ করে অপদস্তের অভিযোগ

Any Akter
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৩:২০ অপরাহ্ন, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৭:০৭ অপরাহ্ন, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের ডিআইজি অপারেশনস রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে দাড়ি কটাক্ষ করে শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্ত করার অভিযোগ করেছেন হাসারা হাইওয়ে ওসি আবু নাঈম সিদ্দিকী। আইজিপি বরাবরে আবেদনে ডিআইজির বিচার চেয়ে তিনি বলেন, বেপরোয়া গাড়ি ঢাকা-মাওয়া রোডে এক্সিডেন্ট করে তিনজন নিহতের ঘটনায় তদন্ত করতে গিয়ে এক ব্যক্তিকে ফোন করায় ডিআইজি ক্ষেপে গিয়ে তাকে অফিসে ডেকে নিয়ে আসামীর সামনে ধর্মীয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে অপদস্থ করেন। আসামীর সামনেই তাকে অপমান করে প্রশাসনিক কারণে তাকে বদলির সেন্ড রিলিজ করার নির্দেশ দেন।

বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর পুলিশ সদস্যদের মধ্যে অসন্তোষ লক্ষ্য করা গেছে। তবে এই ঘটনার বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেন বলেন, হাসার থানার ওসি নাঈম সিদ্দিকী একজন সৎ ও দক্ষ কর্মকর্তা। তাকে এই কায়দায় অফিসে ডেকে নিয়ে আসামীর সামনে অপদস্থ করা ঠিক হয়নি। একজন ডিআইজির কাছে এ ধরনের আচরণ কাম্য নয়। ডিআইজির কোন অভিযোগ থাকলে বিভাগীয় প্রধান হিসেবে আমাকে বলতে পারতেন। একজন সৎ অফিসারকে এভাবে বদলি বা হয়রানি করা উচিত ছিল না। যেহেতু আইজিপি বরাবরে আবেদন করা হয়েছে, বিষয়টি তারাই দেখবেন।

আরও পড়ুন: ইন্দো প্যাসিফিক আর্মি চিফ সম্মেলনে যোগ দিতে সেনাপ্রধানের মালয়েশিয়া গমন

ডিআইজি অপারেশন (পুঃ হেঃ কোঃ) ঢাকা কর্তৃক অপমান, অপদস্থ, মানসিক পীড়া ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত প্রদানের আইনানুগ প্রতিকার চেয়ে আবেদনে ওসি বলেন, আমি পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যান) মোঃ আবু নাঈম সিদ্দিকী, বিপি-৮৩১১১৪১১২৩, অফিসার ইনচার্জ হাঁসাড়া হাইওয়ে থানা, গত ইং-২১/০৮/২০২৫ খ্রিঃ তারিখ রাত অনুমানিক ২২.৩০ ঘটিকার সময় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান থানাধীন দি মর্ডান সিটির সামনে মাওয়াগামী সার্ভিস লেনে একটি প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে একটি মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনা ঘটে।

উক্ত দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলে থাকা চালকসহ ০৩ (তিন) জন নিহত ও অপর একজন গুরুতর আহত হন। সিরাজদিখান থানার মামলা নং-২৮, তারিখ-২২/০৮/২০১৫ খ্রিঃ। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এর মাধ্যমে জানতে পারি, গাড়িটির শেষ ডিজিটের সংখ্যা-৬৯৩৯ বা ৩৯২৯ হবে। উক্ত দুর্ঘটনার তথ্য অনুসন্ধানকল্পে আমি এবং উক্ত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা এসআই (নিঃ) নূর মোহাম্মদসহ দুর্ঘটনার স্থান এবং আশপাশের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করি। কিন্তু ফুটেজে গাড়িটি রেজিঃ নং প্রদর্শিত হয়নি।

আরও পড়ুন: ৩৯ পরিদর্শককে সহকারী পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি

পরবর্তীতে কলারের সূত্র ধরে পদ্মা সেতু টোল প্লাজার সিসিটিভির ফুটেজে দেখা যায়, ঢাকা মেট্রো-গ-২৯-৬৯৩৯ গাড়িটি ঘটনার দিন রাত ২৩.১৯ ঘটিকায় পদ্মা সেতু টোল প্লাজা অতিক্রম করেছেন। সন্দেহজনক হিসাবে পুলিশ সুপার হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়ন, গাজীপুর মহোদয়কে অবগত করে থানায় রক্ষিত পস মেশিনের মাধ্যমে বিআরটিএ সার্ভার থেকে মোবাইল নং সংগ্রহ করি। ইং-২৭/০৮/২০১৫ তারিখে ০১৭৩০-৭৮৪৮০১ ঘরে যখন কল করা হয়, তখন আমাকে জানতে চায়, ঢাকা মেট্রো-গ-২৯-৬৯৩৯ গাড়িটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল কিনা। প্রতি উত্তরে আমি তাকে গাড়িটির ছবি পাঠাই।

উল্লেখিত দিনে উক্ত গাড়ির চালক কে ছিলেন, তা জানতে চাইলে তিনি কিছুক্ষণের মধ্যে ফোন কেটে দেন। এরপরই পুলিশের বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্মকর্তা আমাকে ফোন দেন। ডিআইজি অপারেশন মহোদয়ের পিএ পরিচয় দিয়ে ল্যান্ড ফোন নং-০২২২৩৩৫৫২৮৮ হতে ইং-২৭/০৮/২০১৫ খ্রিঃ ফোন করে এমডি হাসিব সাহেবকে কেনো ফোন দিয়েছি জানতে চান এবং জানান, "আপনার উপর কিন্তু হয়েছে।" এমডি হাসিব সাহেবের কাছে ক্ষমা চাইতে বললে আমি দূর্ঘটনার কথা খুলে বলি এবং জানাই, কোনো অন্যায় কাজ করিনি; ন্যায়বিচারের স্বার্থে সন্দেহজনক কারণে শুধু গাড়িটি দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছে কিনা জানতে চেয়েছি।

পরের দিন, অর্থাৎ ২৮/০৮/২০২৫ খ্রিঃ, মোবাইল নং-০১৩১৬-১১৪৮০১ থেকে ডিআইজি অপারেশন মহোদয়ের অফিস থেকে অফিস স্টাফ পরিচয় দিয়ে আমাকে জরুরি ভিত্তিতে স্যারের অফিসে যেতে বলেন। আমি তাকে আমাদের অতিরিক্ত ডিআইজি উত্তর বিভাগে থানা পরিদর্শনে আসবেন বলে জানাই এবং পরিদর্শন শেষে ডিআইজি অপারেশন অফিস কক্ষে আসবো বলে জানাই। পুলিশ সুপার হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়ন মহোদয়কে মোবাইল ফোনে অবগত করি। পঃ হেঃ কোঃ ডিআইজি অপারেশন অফিস রুমে প্রবেশ করা মাত্রই আমার দাঁড়ি নিয়ে কটাক্ষ করেন এবং হাসিব নামের ব্যক্তিটি কিছুক্ষণের মধ্যে অফিস রুমে প্রবেশ করে স্যারের সামনে চেয়ারে বসে পড়েন।

হাসিব নামের ব্যক্তিকে ফোন দেওয়ার জন্য আমাকে ক্ষিপ্ত করেন এবং তার সামনে আমাকে অপমান অপদস্থ করেন। উক্ত ব্যক্তিকে প্রণোদিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে বলেন। স্যারকে মিথ্যা বানোয়াট তথ্য দিয়ে আমার ইউনিফর্মকে অপমান করেন। আমি পুঃ হেঃ কোয়ার্টার হতে বের হয়ে বিস্তারিত ঘটনা হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়ন পুলিশ সুপার মহোদয়কে ফোনে অবগত করি এবং থানায় হাজির হয়ে ডিউটি অফিসারের মাধ্যমে ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ অনলাইন জিডিতে লিপিবদ্ধ করি, যার জিডি নং-৭১২, তারিখ-২৮/০৮/২০২৫।

হাসিব নামের ব্যক্তিটি অনেক ক্ষমতাধর এবং তার সাথে কমপক্ষে ১০০ পুলিশ অফিসারের সখ্যতা রয়েছে। তিনি আমার মতো একজন অফিসারকে বরনার বা তাত্ক্ষণিক বদলির ক্ষমতা রাখেন। কথাপোকথনের এক পর্যায়ে তিনি জানান, "তোমার মুখে দাঁড়ি দেখে মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছি," বলে কটাক্ষ করেন।

উল্লেখিত দিনের ঘটনার পর ডিআইজি (অপারেশন) পুঃ হো কোঃ জনাব রেজাউল করিম মহোদয় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ডিআইও-১ মুন্সিগঞ্জসহ বিভিন্ন জায়গায় আমার ব্যাপারে জানতে চান। আমি গত ০৫/০৮/২০১৫ খ্রিঃ তারিখ অত্র থানায় যোগদান করেছি। পূর্বে হাইওয়ে পুলিশে টিআই কাঁচপুর ইনচার্জ, শিমরাইল হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্প ইনচার্জ, কাল্গুন হাইওয়ে পুলিশ ক্যাম্পে অত্যন্ত সততা ও নিষ্ঠার সহিত আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছি।

সর্বশেষ, গত ১৬/০৯/২০২৫ খ্রিঃ, হঃ হেঃ কোঃ স্মারক নং-১৩০১/১(১৭) অনুযায়ী আমাকে হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুর রিজিয়ন হতে প্রশাসনিক কারণে সিলেট রেঞ্জে বদলী করা হয়। স্যার, ন্যায়সংগত কাজ করতে গিয়ে যদি অপমান অপদস্ত ও হেয় পতিপন্ন হতে হয়, তাহলে ভবিষ্যতে আইনানুগ কাজে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের মনোবল হারাবে।

এছাড়াও, উল্লেখিত ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সরকারি সহ সংশ্লিষ্টদের কাছে আবেদন জানান।

এদিকে, ডিআইজি রেজাউল করিম কর্তৃক হাসারা থানার ওসি নাঈমুল সিদ্দিকীকে ডেকে নিয়ে ধর্মীয়, শারীরিক ও মানসিকভাবে আসামের সামনে অপদস্থ করায় পুলিশ সদস্যদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। মাঠ পর্যায়ের একাধিক সদস্য জানান, এই ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। মাঠ পর্যায়ের পুলিশ সদস্যরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দায়িত্ব পালন করেন। সততার সাথে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এরকম অপমান, অপদস্থ ও বদলির হয়রানির বিরুদ্ধে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

প্রসঙ্গত, পুলিশ হেডকোয়ার্টার-এর অভিযুক্ত ডিআইজি অপারেশন রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে জনসাধারণ ও অধস্তনদের সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। প্রায় ২০ বছর ধরে একই ইউনিটে পুলিশ হেডকোয়ার্টার কর্মরত রয়েছেন। চোরে চোরে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় পুলিশ হেডকোয়ার্টারের প্রশাসন ও কেনাকাটা, লজিস্টিকসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। সাবেক আইজিপি শহিদুল হক ও সাবেক ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ হিসাবে তাদের পারিবারিক ব্যবসায়িক সুযোগ-সুবিধায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী এই সুবিধাভোগী কর্মকর্তা পদোন্নতি নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরে থেকে একজন সৎ পুলিশ কর্মকর্তাকে দাড়ি নিয়ে ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করায় অনেকেই হতবাক।