বাণিজ্যিক পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন কৃষকেরা

Sadek Ali
মো. মাসুদ রানা, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১:০৭ অপরাহ্ন, ২৭ জুন ২০২৫ | আপডেট: ৯:২০ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

কুমিল্লায় দিন দিন কমছে বাণিজ্যিক পান চাষ। সম্ভাবনাময় অর্থকরী ফসল হওয়া সত্ত্বেও পান চাষে কৃষকেরা আগ্রহ হারাচ্ছেন। কারণ হিসেবে তারা বলছেন, পোকামাকড় ও রোগবালাইয়ের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এ ছাড়া কৃষি বিভাগও এ বিষয়ে কোনো তদারকি করছে না। ফলে লাভের পরিবর্তে গুনতে হচ্ছে লোকসান। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা না পেলে শত বছরের এই চাষাবাদ যে কোনো সময় বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে দেশের অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

কৃষি বিভাগের মতে, জেলার চান্দিনা, দেবিদ্বার, মুরাদনগর, বুড়িচং ও বরুড়াসহ অধিকাংশ উপজেলার প্রায় ১১৬ হেক্টর জমিতে পান হলেও গত এক বছরে তা ৮০ হেক্টরে নেমেছে।কুমিল্লার দেবিদ্বারের গুনাইঘর ও চান্দিনার হারং গ্রামে দেখা যায়, সড়কের পাশেই সারি সারি পানের বরজ। কেউ পান গাছ মুলি বাঁশের সঙ্গে সুতা দিয়ে বেঁধে দেওয়ার কাজ করছেন। কেউবা ক্ষেতে আগাছা পরিষ্কার করছেন। কেউ বিক্রির উদ্দেশ্যে তুলছেন পান। গাছে গাছে দোল খাচ্ছে সবুজ পান পাতা। তা দেখে যে কারোরই চোখ জুড়িয়ে যাবে।

আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

দেবিদ্বারের গুনাইঘরের পান চাষি অনিল চন্দ্র দত্ত বলেন, ‘আমাদের অনেক গাছ পচে যাচ্ছে, পাতাও পচে যায়। আমরা কোন ওষুধ ব্যবহার করবো? কোনো পরামর্শও কৃষি অফিস থেকে পাই না। তাছাড়া পান গাছ লাগানো থেকে শুরু করে বিক্রির উপযোগী হওয়া পর্যন্ত প্রচুর ব্যয় করতে হয়। বর্তমানে সে হারে ততটা লাভবান নই। কৃষি বিভাগ থেকে যদি প্রণোদনা এবং সঠিক পরামর্শ পেতাম, তাহলে লোকসান গুনতে হতো না।’পান চাষি নেপাল বলেন, ‘বাপ-দাদার হাত ধরে এ পেশায় যুক্ত হয়েছি। গত ৪০ বছর ধরে চাষাবাদ করছি। আগে প্রচুর আয় হলেও এখন সেভাবে হয় না। সার ও ওষুধ থেকে শুরু করে সবকিছুর খরচ বেড়েছে। পরিশ্রম অনুসারে আয় না হওয়ায় অনেকেই পেশা বদলাতে শুরু করেছেন।’

পান চাষি নিখিল চন্দ্র বলেন, ‘কৃষিকাজে সরকার প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থ, সার-বীজসহ নানা উপকরণ ও বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে থাকে। কিন্তু পান চাষিরা এ সবকিছু থেকে বঞ্চিত। আমাদের সঙ্গে কেন এই বৈষম্য? আমাদের দাবি, পান চাষিদের বাঁচিয়ে রাখতে সরকার যেন প্রণোদনাসহ সার্বিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করে।জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আইয়ুব মাহমুদ ,দৈনিক বাংলাবাজার পত্রিকাকে  বলেন কুমিল্লার ১৭ উপজেলায় কম-বেশি পান চাষ হয়। তবে ধীরে ধীরে চাষাবাদ কমছে। আগে ১১৬ হেক্টর জমিতে চাষ হলেও গত এক বছরে কমেছে ৩৬ হেক্টর। বর্তমানে ৮০ হেক্টর জমিতে পান চাষ চাষ হচ্ছে। আমরা নিয়মিত পান চাষিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করি। অন্য কৃষিকাজে পরামর্শ ও প্রণোদনা দেওয়া হলেও পান চাষিদের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। আগামীতে সহায়তার জন্য কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।’কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘উৎপাদনশীল সেক্টরের সঙ্গে বিশাল একটা অংশ যুক্ত রয়েছে। সেখান থেকে যদি তারা সরে যায়, তা হলে বেকারত্ব বাড়বে। একই সঙ্গে অর্থনীতিতে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। সে জন্য সরকারের উচিত পান চাষিদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থার করা। সঠিক পরামর্শ দিয়ে পাশে থাকা

আরও পড়ুন: চুয়াডাঙ্গায় কদর বেড়েছে পাটকাঠির