চুয়াডাঙ্গায় কদর বেড়েছে পাটকাঠির

Sadek Ali
সালাউদ্দীন কাজল, জীবননগর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ১২:৫২ অপরাহ্ন, ০৭ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৪:৩৮ অপরাহ্ন, ০৯ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

সোনালি আঁশের রুপালি কাঠিতে আশার আলো দেখছেন চাষিরা। আবহমান কাল থেকে রান্নার জ্বালানি, ঘরের বেড়া, পানের বরজ, গৃহস্থালি সামগ্রীসহ বিভিন্ন শৌখিন পাটজাত পণ্য তৈরির কাজে পাটকাঠির জুড়ি নেই। বর্তমানে বিভিন্ন পার্টিকেল বোর্ড তৈরি ছাড়াও বিভিন্ন কলকারখানায় পাটকাঠি ব্যবহার হচ্ছে। যার ফলে পাটকাঠির মূল্য ক্রমশ বেড়েই চলেছে। এক সময় শুধুমাত্র জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার হতো পাটকাঠি। এখন পাটকাঠির বহুমুখী ব্যবহারের কারণে কদর বেড়েছে কয়েক গুণ।

সরেজমিনে দেখা যায়, চুয়াডাঙ্গা মাথাভাঙ্গা নদী, দামুড়হুদার রাইসার বিল, পদ্ম বিল, দলকালক্ষ্মীপুরের বিল, আলমডাঙ্গার তাসসারের বিল, জীবননগর উপজেলার ভৈরব নদসহ বিভিন্ন খাল-বিল অঞ্চলে রাস্তার দু’পাশে বাঁশ দিয়ে আড়া তৈরি করে তার ওপরে অসংখ্য পাটকাঠি শুকাতে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়াও কয়েকটি পাটকাঠি একত্রিত করে আটি বেঁধে শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন পাটচাষিরা। এ বছর পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় পচা ডোবা-পুকুর, খাল-বিলে পাট জাগ দিয়ে পাটের রঙ ভালো হওয়ার পাশাপাশি পাটকাঠিরও মান ভালো হয়েছে।

আরও পড়ুন: সাতক্ষীরায় মাল্টা চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে

রান্নার কাজে জ্বালানি সংগ্রহ করার জন্য ভোরে বিভিন্ন এলাকার নারী ও পুরুষ মিলে পাটচাষিদের কাছ থেকে পাট চেয়ে আঁশ ছাড়াতে সহায়তা করছেন। বিনিময়ে টাকা না নিয়ে নিচ্ছেন পাটকাঠি। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার গড়াই টুপি, বেগমপুর, জীবননগর উপজেলার গয়েশপুর, হরিয়ান নগর, বেনিপুর, সদরপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখা যায়, খাল-বিল ও নদীর ধার দিয়ে শত শত নারীরা পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। দিন শেষে মজুরি হিসেবে পাটকাঠি নিচ্ছেন। যা ভ্যানে করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজেদের বাড়িতে।

বেনীপুর গ্রামের জবেদা খাতুন জানান, জ্বালানি সংকট থাকার কারণে তিনি পাট বাছতে এসেছেন। বিনিময়ে পাটকাঠি সংগ্রহ করছেন।

আরও পড়ুন: স্লুইসগেটের পানি ছেড়ে দেয়ায় তলিয়ে গেছে ২০০ বিঘা জমির আমন ধান ক্ষেত

সদরপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলাম বলেন, পাটের আঁশ ছাড়াতে অসংখ্য নারীরা কাজ করছেন। যাদের কাজের বিনিময়ে দেওয়া হচ্ছে পাটকাঠি। এতে করে পাটচাষে বিনিয়োগকৃত অর্থ অনেকটাই উঠে আসছে।

মনোহরপুর গ্রামের পাটচাষি রশিদ মিয়া বলেন, পাট চাষের ব্যয় লাঘব করতে পাটের আঁশ ছাড়াতে আসা কৃষাণী ও কৃষকদের অর্থ না দিয়ে পাটকাঠি দেওয়া হচ্ছে।

জীবননগর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামাঞ্চল থেকে ব্যবসায়ীরা চাষিদের কাছ থেকে স্বল্পমূল্যে পাটকাঠি ক্রয় করে ভ্যানযোগে পার্শ্ববর্তী শহরে নিয়ে বিক্রি করছেন চড়া দামে। প্রতিদিনই বেশ কিছু টাকা আয় করছেন তারা।

পাটকাঠি ব্যবসায়ী ছমির আলী বলেন, এখন পাটকাঠি বিক্রির মৌসুম। আমরা পাটচাষিদের কাছ থেকে ৫০-৬০ টাকা প্রতি আঁটি কিনে শহরে গিয়ে ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি করছি। এতে করে ভ্যানপ্রতি আমাদের ৩০০০ টাকা থেকে ৪০০০ টাকা আয় হয়।

চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মাসুদুর রহমান বলেন, এ বছর ৬ হাজার ৭৪০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় ১ হাজার ২৩৫ হেক্টর বেশি। তিনি বলেন, পাট এমন একটি অর্থকরী ফসল যার পাতা জমিতে পড়ে জমির উর্বর ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এবার পাটের দামও ভালো। পাশাপাশি পাটকাঠির চাহিদাও অনেক। সে কারণে চাষিরা এবার ভালো দাম পাচ্ছেন। তিনি বলেন, 

পাটচাষ বৃদ্ধি পেলে পাটকাঠি অবশ্যই কৃষকদের বিনিয়োগকৃত অর্থ উপার্জনপূর্বক অতিরিক্ত অর্থ আয়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি উৎস হতে পারে।

জীবননগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আলমগীর হোসেন বলেন, পাট জাগ দেওয়ার ব্যাপারে প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত পাটের রঙ ও পাটকাঠির মানের বিষয়ে নজর রাখা প্রয়োজন।