সর্বজনীন পেনশনের উদ্বোধন ১৭ আগস্ট
শুরুতে চার স্কিমের কর্মসূচি, নাগরিকরা যেভাবে প্রিমিয়াম দিয়ে সুবিধা পাবে

আগামী ১৭ আগস্ট উদ্বোধন হতে যাচ্ছে বহুল প্রত্যাশিত সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে এ কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী বাংলাদেশি নাগরিকেরা চারটি স্কিমে যোগ দিতে পারবেন: প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য ‘প্রগতি’, স্বকর্মে নিয়োজিত [অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত] ব্যক্তিদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং অতিদরিদ্রদের জন্য ‘সমতা’। এসব স্কিম সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা উদ্বোধনের দিন থেকেই চালু হবে। ৫০ বছরের বেশি ব্যক্তিরাও এসব স্কিম নিতে পারবেন, তবে ন্যূনতম ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর তারা পেনশন পেতে শুরু করবেন।
প্রবাসী, বেসরকারি কর্মচারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীসহ বিভিন্ন শ্রেণির বয়স্ক নাগরিকদের জন্য একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সরকার সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করতে যাচ্ছে। সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ এবং বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি, এ পেনশন স্কিমে চাঁদা প্রদানকারীরা উল্লেখযোগ্য সুবিধা পাবেন।
আরও পড়ুন: পাম অয়েলের দাম লিটারে কমলো ১৯ টাকা
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট নথি অনুযায়ী, ১৮ বছর বয়সে এ স্কিমে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে বেসরকারি খাতের কর্মচারী বা প্রবাসীরা তাদের ৪২ বছরের চাঁদার তুলনায় ১২ গুণ বেশি লাভবান হতে পারবেন।
যেমন, যদি একজন প্রবাসী প্রবাস স্কিমের অধীনে প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিতে শুরু করেন, তাহলে ৬০ বছর বয়স পর তিনি সরকারি তহবিলে মোট ৫০ লাখ ৪০ হাজার টাকা চাঁদা দেবেন। এরপর ৬০ বছর থেকে ন্যূনতম ৭৫ বছর পর্যন্ত মাসিক তিন লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা করে পাবেন। ফলে তার মোট পাওয়া পেনশনের পরিমাণ দাঁড়াবে ছয় কোটি ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৯০০ টাকায় — যা তাদের দেওয়া মোট চাঁদার প্রায় ১২.৩১ গুণ।
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ভারত
অন্যদিকে, প্রগতি স্কিমের আওতায় বেসরকারি খাতের একজন কর্মচারী প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিলে মোট ২৫ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা দেবেন। ৭৫ বছর বয়সে এসে তার মোট সরকারি পেনশনের পরিমাণ হবে মোট দেওয়া চাঁদার ১২.৩১ গুণ তথা তিন কোটি ১০ লাখ ১৮ হাজার ৮৬০ টাকা।
যদি পেনশনভোগী ৭৫ বছরের আগে মারা যান, তাহলে তার নমিনি সেই বয়স (৭৫) পর্যন্ত একই হারে পেনশন পাবেন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি পেনশন ব্যবস্থা সরকারি রাজস্বের উৎস হিসেবে কাজ করবে, কারণ সরকার প্রাথমিক ১০ বছরের জন্য একটি প্রিমিয়াম পাবে। এ সময়ের মধ্যে কোনো পেনশন দেওয়া হবে না। সরকার এ অর্থ লাভজনক বিভিন্ন উদ্যোগে বিনিয়োগ করবে। এছাড়া, প্রবাসীদের ক্ষেত্রে প্রিমিয়াম বৈদেশিক মুদ্রায় নেওয়া হবে এবং পেনশন স্থানীয় মুদ্রায় দেওয়া হবে। এতে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়বে।
চারটি স্কিমের এ সর্বজনীন পেনশন স্কিম আগামী ১৭ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। একটি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে এ পেনশন স্কিমে যুক্ত হওয়া যাবে।
ইতোমধ্যে পাবনা, গোপালগঞ্জ, খাগড়াছড়ি, বরগুনা, সিলেট, বাগেরহাট, রংপুর ও ময়মনসিংহ — এ আট জেলার জেলা প্রশাসকদের চিঠি পাঠিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। চিঠিতে ১২ আগস্টের মধ্যে পেনশন স্কিমসমূহে আগ্রহী সম্ভাব্য প্রার্থী এবং তাদের নমিনির তালিকা জমা দেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে। তালিকায় প্রার্থী ও নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্র, ছবি এবং নিবন্ধিত মোবাইল নম্বর চাওয়া হয়েছে।
একইভাবে, এসব স্কিমে আগ্রহী প্রবাসীদের তালিকা চেয়ে সৌদি আরব, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের বাংলাদেশ দূতাবাসে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
আপাতত, সরকারি এবং স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ পেনশন স্কিমের আওতা-বহির্ভূত থাকবেন। এছাড়া সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের অন্তর্ভুক্ত নাগরিকদের এ ব্যবস্থায় রাখা হবে না। তবে, সর্বজনীন নিরাপত্তা বলয়ের সুবিধাভোগী কেউ তার এসব সুবিধা সমর্পণ করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর চাঁদার হার এবং পছন্দকৃত স্কিম পরিবর্তন করার সুযোগ থাকবে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছেন, ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী সকল নাগরিক তাদের জাতীয় পরিচয়পত্র ব্যবহার করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় যোগ দিতে পারবেন। তবে, যেসব প্রবাসী বাংলাদেশির এনআইডি নেই, তারা বৈধ পাসপোর্টের ভিত্তিতে ব্যাংকিং চ্যানেল, অনুমোদিত মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এক্সচেঞ্জ হাউসের মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রায় চাঁদা দিয়ে যোগদান করতে পারবেন।
সকল স্কিমের জন্য গ্রাহকেরা মাসিক, ত্রৈমাসিক বা বার্ষিকভিত্তিতে চাঁদার কিস্তি পরিশোধ করতে পারবেন। তাছাড়া, চাঁদাদাতা মাসের নাম উল্লেখ করে পেনশন তহবিলে অগ্রিম চাঁদা জমা দিতে পারবেন বলে মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
প্রবাসীদের জন্য প্রবাস স্কিম
প্রবাস স্কিমে মাসিক চাঁদা ধরা হয়েছে ৫,০০০ টাকা, ৭,৫০০ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা। বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানরত যেকোনো বাংলাদেশি নাগরিক বৈদেশিক মুদ্রায় উল্লিখিত যেকোনো পরিমাণ চাঁদা প্রদান করে এ স্কিমে যোগ দিতে পারবেন।
বিদেশ থেকে এ স্কিমে যোগদানের পর দেশে ফিরলে তারা দেশীয় মুদ্রায় চাঁদা পরিশোধ করতে পারবেন অথবা স্কিম পরিবর্তন করতে পারবেন। পেনশন স্কিমের মেয়াদ শেষে সরকার স্থানীয় মুদ্রায় পেনশন প্রদান করবে।
যদি কেউ ১৮ বছর বয়সে প্রবাস স্কিমে যোগ দিয়ে ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দেন, তাহলে তিনি ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতি মাসে এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা পেনশন পাবেন। ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে ৭,৫০০ টাকা চাঁদা দিলে প্রবাসীরা মাসিক দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪৯১ টাকা এবং ১০ হাজার টাকা চাঁদা দিলে মাসিক তিন লাখ ৪৪ হাজার ৬৫৫ টাকা আজীবন পেনশন পাবেন।
বেসরকারি কর্মচারীদের জন্য প্রগতি স্কিম
বেসরকারি কর্মচারীরা মাসিক দুই হাজার, তিন হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিয়ে প্রগতি স্কিমে যুক্ত হতে পারবেন।
কোনো বেসরকারি কোম্পানির এ স্কিমে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে চাঁদার ৫০ শতাংশ কর্মীরা এবং বাকি ৫০ শতাংশ কোম্পানি পরিশোধ করতে পারবে। এমনকি কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠান প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ না করলেও এর কর্মীরা স্ব-উদ্যোগে এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন।
১৮ বছর বয়সে স্কিমে যোগ দিয়ে ৪২ বছর ধরে মাসিক দুই হাজার টাকা চাঁদা দিলে ব্যক্তি ৬০ বছর বয়স থেকে মাসে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা পেনশন পাবেন। একইভাবে, তিন হাজার টাকা মাসিক চাঁদায় এক লাখ তিন হাজার ৩৯৬ টাকা মাসিক পেনশন এবং পাঁচ হাজার টাকা মাসিক চাঁদায় এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা মাসিক পেনশন আজীবনের জন্য পাওয়া যাবে।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের জন্য সুরক্ষা স্কিম
অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিদের জন্য 'সুরক্ষা' নামে স্কিম থাকছে। কৃষক, রিকশাচালক, শ্রমিক, কামার, কুমার, জেলে, তাঁতিসহ সব ধরনের অনানুষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত ব্যক্তিরা এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন। এ স্কিমে মাসিক চাঁদার পরিমাণ এক হাজার টাকা, দুই হাজার টাকা, তিন হাজার টাকা এবং পাঁচ হাজার টাকা।
সুরক্ষা স্কিমে ৪২ বছর ধরে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে চাঁদা দিয়ে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসে ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা করে পেনশন পাওয়া যাবে।
আর ১৮ বছর বয়সে অন্তর্ভুক্ত হয়ে ৪২ বছর ধরে মাসে দুই হাজার টাকা চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে প্রতিমাসে ৬৮ হাজার ৯৩১ টাকা পেনশন পাওয়া যাবে। একইভাবে প্রতিমাসে তিন হাজার টাকা চাঁদা দিলে আজীবন মাসিক এক লাখ তিন হাজার ৩৯৬ টাকা এবং প্রতিমাসে পাঁচ হাজার টাকা চাঁদা দিলে আজীবন মাসিক এক লাখ ৭২ হাজার ৩২৭ টাকা করে পেনশন পাবেন।
অতিদরিদ্রদের জন্য সমতা স্কিম
এই স্কিমে চাঁদার পরিমাণ মাসে এক হাজার টাকা। এর মধ্যে চাঁদাদাতা প্রতিমাসে ৫০০ টাকা করে দেবেন। বাকি ৫০০ টাকা সরকার পরিশোধ করবে।
সময়ে সময়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো পরিচালিত খানা আয় ও ব্যয় জরিপ অনুযায়ী অতিদারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার ভিত্তিতে — যাদের নিজস্ব আয় দ্বারা জীবনধারণের ন্যূনতম উপকরণ জোগাড় করা সম্ভব নয় — তারা এ স্কিমে অন্তর্ভুক্ত হতে পারবেন।
এ স্কিমের আওতায় ১৮ বছর বয়সে অন্তর্ভুক্ত হয়ে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিলে ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক ৩৪ হাজার ৪৬৫ টাকা পেনশন পাওয়া যাবে। আর ৫০ বা তদূর্ধ্ব বয়সীরা অন্তত ১০ বছর ধরে মাসে ৫০০ টাকা চাঁদা দিয়ে, ৬০ বছর বয়স থেকে মাসিক এক হাজার ৫৩০ টাকা করে পেনশন পাবেন।
চাঁদার ৫০ শতাংশ ঋণ নেওয়া যাবে
চাঁদাদাতারা আবেদনের প্রেক্ষিতে তার জমা করা অর্থের ৫০ শতাংশ ঋণ হিসেবে নিতে পারবেন। পেনশনের জন্য নির্ধারিত চাঁদা বিনিয়োগ হিসেবে গণ্য করে কর রেয়াত পাওয়া যাবে এবং মাসিক পেনশন বাবদ পাওয়া অর্থও করমুক্ত থাকবে।
চাঁদাদাতা কমপক্ষে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার আগেই মারা গেলে, তার জমা করা অর্থ মুনাফাসহ তার নমিনিকে ফেরত দেওয়া হবে।
যেভাবে নিবন্ধন করা যাবে
অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, যারা সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে চান, তাদেরকে অবশ্যই নিবন্ধন করতে হবে। ঘরে বসে সবাই যাতে রেজিস্ট্রেশন করতে পারেন, সেজন্য একটি অ্যাপ্লিকেশন থাকবে। এছাড়া, ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে গিয়েও নিবন্ধন করা যাবে। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে অ্যাপ ব্যবহার করে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হলে প্রত্যেকে একটি ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর পাবেন। সরকার আশা করছে, ১০ কোটি নাগরিক সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। সেজন্য ১৮ সংখ্যার ইউনিক আইডেন্টিফিকেশন নম্বর দেওয়া হতে পারে।
সর্বজনীন পেনশন কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট খুলবে। অংশগ্রহণকারীদের প্রত্যেককে তার নির্দিষ্ট অ্যাকাউন্ট নম্বরে মাসিক চাঁদা দিতে হবে। প্রবাসীরা বিদেশ থেকে চাঁদা দিতে পারবেন। আর দেশে বসবাসকারীরা সরাসরি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে কিংবা বিকাশ, নগদসহ যেকোন মোবাইলে আর্থিক পরিষেবার (এমএফএস) মাধ্যমে ওই অ্যাকাউন্টে চাঁদা দিতে পারবেন।
সামাজিক নিরাপত্তায় উপকারভোগী কমবে
অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা কার্যকর হলে ধীরে ধীরে বিদ্যমান সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সুবিধাভোগীর সংখ্যা কমিয়ে আনার সুযোগ সৃষ্টি হবে। কারণ, সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার আওতায় দেশের বয়স্ক জনগণের সামাজিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।
বর্তমানে দেশের মানুষের গড় আয়ু ৭২.৩ বছর হলেও ভবিষ্যতে এটি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা। দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ৬২ শতাংশ উল্লেখ করে একজন কর্মকর্তা জানান, গড় আয়ু বৃদ্ধি এবং একক পরিবারের সংখ্যা বাড়ার কারণে ভবিষ্যতে নির্ভরশীলতার হার বাড়বে। তাই ১৮ বছরের অধিক বয়সী জনগোষ্ঠীকে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত করা হলে একটি টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
উল্ল্যখ্য, প্রাথমিক পর্যায়ে পরীক্ষামূলক ভিত্তিতে এ কর্মসূচি চালু করবে অর্থ মন্ত্রণালয়। পেনশন কর্মসূচি বাস্তবায়িত হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে। এর পর কর্তৃপক্ষের জন্য একটি স্বতন্ত্র অফিস প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং এর প্রধান কার্যালয় হবে ঢাকায়। কর্তৃপক্ষের একজন নির্বাহী চেয়ারম্যান ও চার জন সদস্য থাকবেন এবং তারা সরকার কর্তৃক নিযুক্ত হবেন এবং তাদের চাকরির মেয়াদ ও শর্ত বিধি দ্বারা নির্ধারিত হবে। কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হবেন নির্বাহী চেয়ারম্যান। কর্তৃপক্ষসহ সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠানের ব্যয় সরকার বহন করবে। গঠিত কর্তৃপক্ষ স্থাবর বা অস্থাবর উভয় প্রকার সম্পত্তি অর্জন, সম্পত্তি অধিকারে রাখতে ও হস্তান্তর করতে পারবে এবং সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে নিজ নামে ঋণ নিতে পারবে। কর্তৃপক্ষ নিজ নামে মামলা দায়ের এবং আদালতের মাধ্যমে সম্পত্তি ও ব্যাংক হিসাব ক্রোক করতে পারবে। এছাড়া, কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও মামলা দায়েরের সুযোগ রাখা হয়েছে আইনে।
এছাড়া, অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি পেনশন পরিচালনা পর্ষদও গঠন করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর, অর্থসচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সচিব, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, এফবিসিসিআই সভাপতি, বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের সভাপতি, বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি প্রমুখ এর সদস্য হবেন।
বর্তমানে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কবিরুল ইজদানী খানকে নিজ দায়িত্বের বাইরে অতিরিক্ত হিসেবে কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দিয়েছে অর্থ বিভাগ। চলতি ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেছিলেন যে, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাই থেকেই দেশে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা চালু করা হবে। নানা জটিলতার কারণে অর্থমন্ত্রী ঘোষিত সময়ে তা কার্যকর করা না গেলেও কিছুটা দেরি হলেও সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি চালু হচ্ছে।
জানা গেছে, পেনশন কর্মসূচি চালুর আগে পাঁচটি সংস্থার সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি (এমওইউ) হবে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের। এগুলো হচ্ছে নির্বাচন কমিশন, ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদপ্তর, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয়, সোনালী ব্যাংক এবং বাংলাদেশ ডেটা সেন্টার কোম্পানি লিমিটেড। ইতিমধ্যেই এসব এমওইউর খসড়া তৈরি করা হয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, শুধু এমওইউর মাধ্যমেই এ কর্মসূচির বাস্তবায়ন করা যাবে না। দরকার অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই) করার কাজটিও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। এপিআই হচ্ছে এক ধরনের সফটওয়্যার, যার মাধ্যমে একটির সঙ্গে একাধিক কম্পিউটার কর্মসূচির যোগাযোগ স্থাপন করা যায়। পেনশন ব্যবস্থায় নগদ টাকায় কোনো লেনদেন হবে না। সব কাজ হবে অনলাইনে।
দেশের সর্বস্তরের জনগণকে টেকসই পেনশন কাঠামোয় অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে ‘সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন ২০২৩’ প্রণয়ন করেছে সরকার। গত ৩১ জানুয়ারি আইনটিতে সম্মতি দিয়েছেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।