জবি শিক্ষার্থীর উপর বিএনপি নেতার হামলা, আহত ৫

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি'র ৩৮ নং ওয়ার্ডের (ওয়ারী থানা) সাধারণ সম্পাদক শহীদুল হক সহিদের নেতৃত্বে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় পাঁচ শিক্ষার্থী আহত হয়ে ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। সোমবার (৩ মার্চ) রাত ১১টা ৩০ মিনিটের দিকে রাজধানীর ধোলাইখাল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সম্রাট ধোলাইখাল এলাকার একটি মার্কেটের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভুলক্রমে নির্মাণাধীন এক ঢালাইয়ের উপরে পা দেন। এতে স্থানীয় লোকজন এসে তাকে ধাক্কা দিলে সেও প্রতিহত করার চেষ্টা করে। এরপর স্থানীয় লোকজন মিলে এই শিক্ষার্থীকে মারধর শুরু করে। এক পর্যায়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তার সহপাঠীদের কল দিলে হাবিবসহ দুইজন ঘটনাস্থলে আসেন।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র নারী ভিপি মাহফুজা খানমের মৃত্যু
এরপর স্থানীয় লোকজন তাদের উপর হামলা চালায় এবং হাবিবকে গোয়ালঘাট যুুব সংঘ নামে একটি ক্লাবে আটকে রেখে মারধর করে। পরে ওই শিক্ষার্থীকে উদ্ধার করে প্রথমে সালাউদ্দিন মেডিকেলে এবং পরবর্তীতে ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে খবর পেয়ে আশপাশে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ঘটনাস্থলে গেলে তাদের তাদের ওপরও হামলা চালানো হয়।
এ ঘটনায় আহত হয়ে ন্যাশনাল মেডিকেলে চিকিৎসাধীন মামুন বলেন, আমার বন্ধুকে মারধরের ঘটনা শোনার পর আমরা কয়েকজন ঘটনাস্থলে গেলে আমাদের আটকে রেখে মারধর করে। বিএনপি নেতা ও নবাবপুর ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল হক সহিদের নেতৃত্বে ১৫ থেকে ২০ জন প্রায় ২০ মিনিট যাবত আমাদের লাঠি দিয়ে মারধর করে।
আরও পড়ুন: প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষার সুযোগ বাতিলের প্রতিবাদে নাসিরনগরে কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের সংবাদ সন্মেলন
হাবিবকে উদ্ধার করা জবি শাখা ছাত্র অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রায়হান হাসান রাব্বি বলেন, আমি খবর পেয়ে টিপু সুলতান রোডে আসি। সেখানে পেট্রোলিংয়ে থাকা পুলিশকে নিয়ে গোয়ালঘাট লেনে এসে একটি ক্লাবে অনেকজনের ভিড় দেখে সেখানে যাই। সেখানে নিচে ছিলো প্রায় ২০০ জন এবং ক্লাবের দ্বিতীয় তলায় ছিলো ২০-২৫ জন। সেখানে গিয়ে হাবিবকে আহত অবস্থায় পেয়েছি। আমরা জিজ্ঞেস করলে তারা বলে আগে ওকে এখান থেকে হাসপাতালে নিয়ে যান। তখন হাবিবকে নিয়ে সালাউদ্দিন মেডিকেল ও পরে ন্যাশনাল মেডিকেলে আনা হয়। আমি ন্যাশনালে থাকাকালীন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহতবস্থায় চিকিৎসা নিতে দেখি।
এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ তাজাম্মুল হক বলেন, ঘটনা শোনা মাত্রই বংশাল, ওয়ারী ও সূত্রাপুর থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করে ফোর্স পাঠানোর ব্যবস্থা করেছি। আর আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার জন্য মেডিকেল নেওয়া হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে আরও জানা যায়, স্থানীয় লোকজনের মধ্যে কয়েকজন বিএনপি ও যুবদলের লোক ছিলো। তারা স্থানীয়দের নিয়ে শিক্ষার্থীদের মারধর করে। হামলার নেতৃত্বে ছিলো বিএনপি নেতা শহিদুল হক সহিদ। তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ৩৮ নং ওয়ার্ড (ওয়ারী থানা) বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এবং একই সাথে নবাবপুর দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে এঘটনা ফেসবুকে ছাড়ানোর পর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা একত্র হয়ে পুরান ঢাকার নবাবপুর এলাকার একটি ক্লাব ভাংচুর করে। এসময় রাত ১ টার দিকে ওয়ারী থানার পুলিশ আসে ঘটনাস্থলে। জবি শিক্ষার্থীর ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বিএনপি নেতা সহিদের বাড়ির সামনে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের শান্ত করতে ও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পুলিশ ও র্যাব সেখানে মোতায়েন হয়।