পাবিপ্রবিতে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৮ নেতাকর্মীর সনদ বাতিল

পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (পাবিপ্রবি) ক্যাম্পাসে বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের অভিযোগে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১০ নেতাকর্মীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার এবং ১৮ জনের সনদ বাতিল করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বুধবার (৬ আগস্ট) বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।
আরও পড়ুন: রাতের মধ্যে ছাত্রদলের কমিটি স্থগিত না হলে কঠোর পদক্ষেপ: উমামা ফাতেমা
রেজিস্ট্রার অফিস থেকে জানা যায়, গত ২৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭৩তম রিজেন্ট বোর্ডে এ সিদ্ধান্ত হয়। সেখানে ২১ নম্বর আলোচ্যসূচিতে এটি অন্তর্ভুক্ত ছিল।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের সঙ্গে জড়িতদের বিচারের জন্য চলতি বছরের ১১ জানুয়ারি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এরপর ২৪ মে পর্যন্ত তদন্ত কমিটি শিক্ষার্থীদের থেকে অভিযোগগুলো সংগ্রহ করেন। পরবর্তীতে ২৪ জুলাই তদন্ত কমিটি তদন্ত শেষ করে এর রিপোর্ট বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জমা দেন।
আরও পড়ুন: গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষায় ‘প্রক্সি’ জালিয়াতি: নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে আটক ৩
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটির কাছে ৩৫ এর অধিক শিক্ষার্থীর নামে ৯টি অভিযোগ জমা পড়ে। এর মধ্যে ৬টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়, ২টি অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি এবং ১টি অভিযোগ অভিযোগকারী এবং অভিযুক্ত নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে নেন।
রিজেন্ট বোর্ডে চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের শাস্তি দেওয়া হয়। এগুলো হলো আজীবন বহিষ্কার (৬ জন), ৩ বছরের জন্য বহিষ্কার (৪ জন), আজীবনের জন্য সনদ বাতিল (১১ জন), ৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত (৭ জন)।
যেখানে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হওয়া ছয়জন হলেন— ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১১-১২ শিক্ষাবর্ষের ফরিদুল ইসলাম বাবু, স্থাপত্য বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের আশিক আরমান সোভন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মো. নাইমুর নাহিদ ইমন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. তৌফিক হাসান হৃদয়, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আল-মাছুর রহমান অয়ন, ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের তানশু দাস।
৩ বছরের জন্য বহিষ্কার হওয়া ৪ জন হলেন- ইতিহাস বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শ্রী অনিক পোদ্দার, ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. শাহ আলম, গণিত বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. খালিদ সাইফুল্লাহ ভূইয়া।
আজীবন সনদ বাতিল ও ৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত এ দুই ক্যাটাগরিতে ১৯ জনের সনদ বাতিল করা হয়েছে। এর মধ্যে আজীবন সনদ বাতিল করা হয়েছে ১১ জনের। তারা হলেন- বাংলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের লিংকন হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের মো. নুরুল্লাহ, সমাজকর্ম বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মিনহাজুল ইসলাম প্রান্ত, বাংলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মো. ইকরামুল ইসলাম, পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের হামিদুর রহমান শামীম, গনিত বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মাসুদ রানা সরকার, বাংলা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের রাসেল হাসন রিয়াদ, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের বিল্লাল হোসেন, ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শেহজাদ হাসান, গণিত বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের সুরুজ মিয়া আপেল, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিবু দাস।
৩ বছরের জন্য সনদ স্থগিত করা হয়েছে ৭ জনের। তারা হলেন- গণিত বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের নাজমুল ইসলাম আবীর, বাংলা বিভাগের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের সাব্বির হোসেন সবুজ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শাহেদ জামিন হিরা, লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের মো. শেখ রাসেল হোসেন, ইংরেজি বিভাগের ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের মো. সোহানুর রহমান সোহান, অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের মো. জহুরুল ইসলাম পিয়াস, বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জাহির রায়হান।
এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বিজন কুমার ব্রহ্ম বলেন, যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করেই বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তদন্ত কমিটি অত্যন্ত পেশাদারিত্ব ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে। যেসব ২৮ জনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাদের প্রত্যেককে আত্মপক্ষ সমর্থনের যথেষ্ট সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এ বিষয়ে বারবার নোটিশ পাঠানো হয়েছে তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে। তবে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রমাণ মেলেনি, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এখানে কারও প্রতি অবিচার করা হয়নি।