জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নবীনবরণে র্যাগিংয়ের অভিযোগ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা র্যাগিংয়ের ভুক্তভোগী হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। রোববার নবীনবরণের প্রথম দিনেই আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ক্লাসরুমে পরিচিত হওয়ার নামে প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয়েছে।
ভুক্তভোগীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। অভিযোগ অনুযায়ী, ৫৩তম ব্যাচের প্রায় ১৮-২০ জন সিনিয়র এবং ৫২তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী এই ঘটনায় যুক্ত ছিলেন। তারা প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের টানা আড়াই ঘণ্টা ক্লাসরুমে আটকে রেখে অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে মানসিক চাপ সৃষ্টি করেছেন।
আরও পড়ুন: ঢাবি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের সঙ্গে চীনা রাষ্ট্রদূতের মতবিনিময়
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা জানান, “আমাদের নবীনবরণ শেষে সিনিয়ররা আমাদের একটি কক্ষে ডেকে আনেন। এসময় ৫৩তম ব্যাচের তানজিম হোসেন, মাহাথির, আজমাইন, শুভ্র আচার্য, সামিউর রহমান সামি, রমজান, সালেহ আহমদ অনিক, রুয়াম নিয়াজ, তানভীর হোসেন, আমিনুলসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে তাদের কয়েকজন নারী সহপাঠী ও ৫২তম ব্যাচের কয়েকজন শিক্ষার্থী ম্যানার শেখানোর নামে আমাদেরকে হুমকি ও ভয় দেখান। দুইজন নারী শিক্ষার্থী কান্নায় ভেঙে পড়ে এবং ছেলেরা ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।”
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্তদের মধ্যে তানজিম হোসেন, তানভীর হোসেন ও শুভ্র আচার্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
আরও পড়ুন: রাকসু নির্বাচন পিছিয়ে ১৬ অক্টোবর, উত্তাল ক্যাম্পাস
একজন শিক্ষার্থী আরও বলেন, “কক্ষে শিক্ষক প্রবেশ করলে তারা বের হয়ে যায়, কিন্তু শিক্ষক চলে যাওয়ার পর পুনরায় ভয় প্রদর্শন শুরু হয়। আমাদের হুমকি দেওয়া হয় যেন কেউ এই ঘটনা কারও সঙ্গে শেয়ার না করে।”
নবীন শিক্ষার্থীদের দাবি, এসব আচরণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ এবং এসব নিয়ে কারও বিচার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলেও অভিযুক্তরা জানিয়েছে।
একজন নারী শিক্ষার্থী বলেন, “শিক্ষকদের বক্তব্য শেষ হলে ৪-৫ জন সিনিয়র আমাদের ডেকে ব্রেকের পর দেড়টায় ডিপার্টমেন্টে থাকতে বলে। এসময় আমাদের ব্যাচের সবাইকে অর্থাৎ ৬৮ জনকে থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর দেড়টার দিকে ১৫-২০ জন সিনিয়র রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দেয়। সবাই উপস্থিত না থাকায় তারা আমাদের শ্রেণি প্রতিনিধিকে ধমক দেয়। একপর্যায়ে তারা আমাদের গালিগালাজ শুরু করে। আমাদের ছেলে বন্ধুদের দাঁড় করিয়ে ‘নেশাখোর’ বলে গালি দেয়। চুল কাটার ধরন নিয়েও তিরস্কার করে। পুরো সময় জুড়ে তারা আমাদের সঙ্গে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে থাকে।”
একপর্যায়ে একজন শিক্ষক কক্ষে প্রবেশ করলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। তিনি আমাদের জিজ্ঞেস করেন, আমাদের সঙ্গে কিছু ঘটেছে কি না। তখন আমাদের একজন বান্ধবী কান্নায় ভেঙে পড়ে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন শিক্ষার্থীর জবানবন্দি, “আজ আমাদের ৫৪তম ব্যাচের নবীনবরণ ছিল। নবীনবরণ শেষে ৫৩তম ব্যাচের প্রায় ১৮-২০ জন সিনিয়র আমাদেরকে বিভাগের একটি কক্ষে ডেকে আনুমানিক দেড়টা থেকে ৪টা পর্যন্ত অকথ্য অশ্লীল গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করে। এতে আমাদের দুইজন নারী সহপাঠী মানসিক চাপে কান্না করে দেয়। আমরা ছেলেরাও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ি। একপর্যায়ে বিভাগের একজন শিক্ষক কক্ষে প্রবেশ করলে তারা বের হয়ে যায়। এসময় স্যার কী হয়েছে জিজ্ঞেস করলে আমাদের সঙ্গে সহপাঠী রূপে থাকা ৫২তম ব্যাচের ৩-৪ জন স্যারকে বলে কিছু হয়নি। স্যার বের হয়ে গেলে তারা পুনরায় রুমে ঢুকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে এবং বলে এসব ক্যাম্পাসের সংস্কৃতির অংশ, কারও কাছে বিচার দিয়ে কোনো লাভ হবে না।”
আরেকজন বলেন, “আমাদেরকে ডেকে রুমের দরজা বন্ধ করে আনুমানিক ২০ জন প্রথমেই বাবা-মায়ের নাম জানতে চায়। তারপর ম্যানার শেখানোর নাম করে আমাদেরকে পরিকল্পিতভাবে হুমকি ও ভয়ভীতি দেখায়। এসময় আমাদেরকে ফুলহাতা শার্ট পরতে ও জিন্স প্যান্ট না পরতে বলা হয়। আমাদের সঙ্গে তাদের সিনিয়রদের (৫২তম ব্যাচ) বসিয়ে রাখে। তাদের গালি ও হুমকি শুনে আমরা তখন ভয় পেয়ে যাই। আমরা তো ক্যাম্পাসে নতুন এসেছি, এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলাম না। এসময় আমরা সবাই বিশেষ করে আমাদের বান্ধবীরা আতঙ্কিত হয়ে কান্না করে।”
"একপর্যায়ে ৫২তম ব্যাচের যে কয়জন ছিল তারা আমাদেরকে এ ঘটনা বাইরে কারও সঙ্গে না বলতে হুমকি দেয়।"
এ বিষয়ে ৫৩তম ব্যাচের শ্রেণি প্রতিনিধি তানভীর হোসেন বলেন, “এরকম কিছুই ঘটেনি। সবকিছু সমাধান হয়েছে। এটাকে বাড়ানোর কিছু নাই, কমানোরও কিছু নাই।”
এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক সজীব বালা বলেন, “আমরা এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। মৌখিক অভিযোগ পেয়েছি। আমরা এটা সমাধানের জন্য চেষ্টা করছি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”