খাগড়াছড়িতে অস্থিরতা ও সংঘাতে ডাকসুর গভীর উদ্বেগ প্রকাশ

খাগড়াছড়িতে সম্প্রতি এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ এবং পরবর্তীতে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতা ও অস্থির পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
আরও পড়ুন: চাকসুতে পাঠাগার ও ক্যাফেটেরিয়া সম্পাদক পদে জনপ্রিয়তার শীর্ষে জাবেদ
ডাকসু এক বিবৃতিতে জানায়, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ শয়ন শীল নামে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, মামলার এজাহারে উল্লেখিত সময়ে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, অভিযুক্ত ব্যক্তি বাজারে কেনাকাটা করছিলেন। অন্যদিকে মেডিক্যাল বোর্ডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভুক্তভোগীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই এবং ধর্ষণের কোনো প্রমাণও মেলেনি।
আরও পড়ুন: জুলাই পরবর্তী ছাত্ররাজনীতির মডেল ছাত্রশিবির : সাদিক কায়েম
বিবৃতিতে বলা হয়, পরস্পরবিরোধী তথ্য ও অসঙ্গতির কারণে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে। ডাকসু দাবি জানায়, যদি ঘটনাটি সত্য প্রমাণিত হয়, তবে দোষীর বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। অপরদিকে, যদি এটি সাজানো বা পরিকল্পিতভাবে সংঘটিত হয়, তবে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধেও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ডাকসু জানায়, অভিযোগের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অবরোধ, অ্যাম্বুলেন্সে হামলা, দোকানপাট ভাঙচুর, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া এবং পর্যটক হয়রানির মতো ঘটনা দুঃখজনক। এসব সহিংসতায় তিনজন নাগরিক — আথুই মারমা, আথ্রাউ মারমা ও তৈইচিং মারমা — নিহত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যসহ অনেকেই আহত হয়েছেন। ডাকসু এ হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক ও সমবেদনা প্রকাশ করেছে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, পার্বত্য অঞ্চলে নির্দিষ্ট অপরাধের বিচারের পরিবর্তে একে জাতিগত সংঘাতে রূপ দেওয়া সমীচীন নয়। পার্বত্য অঞ্চলে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর ষড়যন্ত্র এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রাজনৈতিক কর্মসূচি গ্রহণের কারণে প্রায়ই পরিস্থিতি জটিল হয়ে পড়ে। এতে চাকমা, মারমা, ত্রিপুরা ও বাঙালিসহ সব জনগোষ্ঠীর সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং ন্যায়বিচার বাধাগ্রস্ত হয়।
ডাকসু প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, আইনানুগ প্রক্রিয়ায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে ব্যর্থতা এবং সাধারণ নাগরিকদের নিরাপত্তা দিতে অক্ষমতা প্রশাসনের অদক্ষতা ও দায়বদ্ধতার অভাবকে প্রকাশ করে।
বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ধর্ষণের অভিযোগকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ ও সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর অপতৎপরতা ও উস্কানি বিদ্যমান। এই ধরনের উস্কানি জাতিগত সম্প্রীতি নষ্ট করছে এবং পার্বত্য অঞ্চলে সংঘাত উসকে দিচ্ছে। বিশেষ করে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে কিছু রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্টদের ‘গণহত্যার আহ্বান’ গভীরভাবে উদ্বেগজনক বলে মন্তব্য করে ডাকসু।
সংগঠনটি সতর্ক করে জানায়, পার্বত্য চট্টগ্রামে সশস্ত্র গোষ্ঠীর ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি সৃষ্টি করছে।
বিবৃতির শেষে ডাকসু স্মরণ করিয়ে দেয়, জুলাই গণঅভ্যুত্থান অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছে। শহীদ আবু সাঈদ, রিয়া গোপ ও অন্যদের ত্যাগের প্রতি সম্মান জানাতে হলে সেই অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
ডাকসু দৃঢ়ভাবে জানায়, “বাংলাদেশ কোনো একক জাতিগোষ্ঠীর নয়, বরং এটি সকল নাগরিকের সমান অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তার দেশ। দেশের প্রতিটি প্রান্তে প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”