ঢাবিতে সেমিনারে মাহমুদুর রহমান: আবরার শহীদ হতে পেরেছেন, আমি পারিনি

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) মেধাবী শিক্ষার্থী শহীদ আবরার ফাহাদকে স্মরণ করে ‘আমার দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক ড. মাহমুদুর রহমান বলেছেন, “ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে কথা বলার অপরাধে আবরার ফাহাদ শহীদ হয়েছেন। একই ইস্যুতে আমিও আক্রান্ত হয়েছিলাম, কিন্তু বেঁচে গেছি। আল্লাহ আমাকে শহীদের মর্যাদা দেননি, আবরারকে দিয়েছেন।”
মঙ্গলবার (৭ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর.সি. মজুমদার আর্টস অডিটরিয়ামে “ভারতীয় আধিপত্যবাদ ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব: স্মরণে শহীদ আবরার ফাহাদ” শীর্ষক সেমিনার ও “স্মরণে মননে শহীদ আবরার ফাহাদ” চিত্রপ্রদর্শনীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: শিক্ষা ভবনের সামনে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড
ডাকসুর আয়োজনে অনুষ্ঠানে উদ্বোধক ছিলেন শহীদ আবরারের পিতা মো. বরকত উল্লাহ। সভাপতিত্ব করেন ডাকসুর ভিপি সাদিক কায়েম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রেজাউল করিম রনি, আবরারের ভাই আবরার ফায়াজ, মানারাত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রব প্রমুখ।
ড. মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমার সঙ্গে আবরারের অনেক মিল আছে— আমরা দুজনেই বুয়েটের ছাত্র, দুজনেই শেরেবাংলা হলে থাকতাম, দুজনেই ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ ছিলাম। তবে পার্থক্য হলো— আবরার শহীদ হয়েছেন, আমি নই।”
আরও পড়ুন: রাজধানীতে ‘জুলাই শহীদ ও যোদ্ধাদের’ স্বীকৃতির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, দাবি করছেন আজীবন ভাতা
তিনি বলেন, “২০১৮ সালে কুষ্টিয়ায় আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা করা হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর ইচ্ছায় আমি রক্ষা পাই। আবরার শহীদ হয়েছেন, আর তাঁর রক্ত আজ দেশের তরুণ প্রজন্মকে জাগিয়ে তুলেছে।”
সেনাবাহিনীর কিছু কর্মকর্তার ভারতমুখী আচরণ নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, “সম্প্রতি দেখা গেছে, কিছু প্রাক্তন জেনারেল ভারতে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। এমনকি তাদের মধ্যে একজন ছিলেন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান। প্রশ্ন হলো— কারা প্রকৃত দেশপ্রেমিক? তারা, নাকি আবরারের মতো তরুণরা?”
‘প্রগতিশীলতা’ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “এ দেশে প্রগতিশীলতার নামে ইসলামবিদ্বেষ আর ভারতের প্রতি আনুগত্য প্রচার করা হয়। অথচ প্রকৃত প্রগতিশীলতা হলো সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ন্যায়ের পক্ষে দাঁড়ানো।”
বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক অবস্থান উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একদিকে হিন্দুত্ববাদী ভারত, অন্যদিকে অস্থিতিশীল মিয়ানমার— এই বাস্তবতায় আমাদের সংগ্রাম দীর্ঘ হবে। তবে আশার কথা, আজকের তরুণ প্রজন্ম জেগে উঠেছে।”
তিনি আরও বলেন, “জুলাই বিপ্লবে আমরা যে চেতনার উত্থান দেখেছি, তা প্রমাণ করে— জাতি এখন সত্যিকারের স্বাধীনতার অর্থ বুঝতে শুরু করেছে। আবরার সেই জাগরণের প্রতীক।”
ড. মাহমুদুর রহমান অনুষ্ঠানের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “এ ধরনের আলোচনা আমাদের জাতীয় চেতনা বিকাশে ভূমিকা রাখবে। সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই চলমান, তাই এই উদ্যোগ অব্যাহত রাখতে হবে।”
অনুষ্ঠানের শুরুতে আবরার ফাহাদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করা হয়। পরে “স্মরণে মননে শহীদ আবরার ফাহাদ” শীর্ষক চিত্রপ্রদর্শনী উদ্বোধন করা হয়, যেখানে তরুণ শিল্পীরা আবরারের দেশপ্রেম ও আত্মত্যাগকে শিল্পরূপে ফুটিয়ে তোলেন।
বক্তব্যের শেষাংশে মাহমুদুর রহমান বলেন, “আমার বয়স হয়েছে, কিন্তু আজ তরুণদের দেখে নতুন আশায় উজ্জীবিত হয়েছি। আমি আবরারের পথের সঙ্গী— সেই পথেই বাংলাদেশের মুক্তি।”