প্রাথমিক শিক্ষকদের শাস্তিতেও বৈষম্য
ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর বৈষম্যবিরোধী সরকারের আমলে প্রাথমিক শিক্ষকদের শাস্তি দিতেও বৈষম্য করা হয়েছে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ৩ দফা দাবি আদায়ে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের যৌথ উদ্যোগে ১৬ জন নেতার স্বাক্ষরে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করলেও মন্ত্রণালয় শুধু একটি সংগঠনের নেতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। গত ৩০ নভেম্বর থেকে ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরীক্ষা বর্জন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা।
দাবিগুলো হলো-সহকারী শিক্ষকদের বর্তমান বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে উন্নীত করা, শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান এবং সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি। সরকারের পক্ষ থেকে দুটি সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১৩তম গ্রেড থেকে ১১তে উন্নীত করে অর্থ বিভাগে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে বলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে। তবে শিক্ষকদের দাবি প্রজ্ঞাপন না হওয়া পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে। আর সেকারণে তারা ধারবাহিক কর্মসূচি পালন করে আসছিল। তবে ডিসেম্বরে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা থাকায় সে সময়ে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি পালন করায় বেকায়দার পরে সরকার। অভিভাবকরাও কয়েকটি স্থানে শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার করে। এরই মধ্যে সরকারের সঙ্গে বৈঠকও হয়। ফলে ৪ ডিসেম্বর থেকে শিক্ষকরা আন্দোলন প্রত্যাহার করে। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে ৪জন শিক্ষককে শোকজও করা হয়। কিন্তু শিক্ষকরা শোকজের জবাব দেওয়ার আগেই ৪জন শিক্ষকসহ মোট ৪৩জন শিক্ষককে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে নিজ জেলার বাইরে বদলি করা হয়। এর মধ্যে ৪২জন সহকারী শিক্ষক ও ১জন প্রধান শিক্ষক রয়েছেন। তাদের বদলিতে বদলি ও নিয়োগ বিধি মানা হয়নি। নীতিমালা লঙ্ঘন করে তাদের বদলি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সহকারী শিক্ষক খায়রুন নাহার লিপি ও মাহবুবুর রহমান।
আরও পড়ুন: চবি ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আরিফ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত
তারা জানান, আন্দোলন করেছে দুই সংগঠন। একটি সংগঠনের নেতা উপদেষ্টার ছেলে-মেয়ের গানের শিক্ষক হওয়ায় ঐ সংগঠনের কাউকে বদলি বা শাস্তি দেওয়া হয়নি। অথচ তারা আমাদের সাথে একসাথে আন্দোলন করেছে । কমপ্লিট শাটডাউনের কর্মসূচিও তারা ঘোষণা করেছিল। খায়রুন নাহার লিপি জানান, আমরা যে দাবিতে আন্দোলন করেছি তা যদি অযৌক্তিক হতো তাহলে সরকার আমাদের দাবি মেনে নিল কিভাবে। আমরা সারাদেশের শিক্ষকদের যৌক্তিক দাবি দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছি।
তিনি বলেন, বর্তমান বৈষম্য বিরোধী সরকারের সময় শাস্তিতেও বৈষম্য করা হয়েছে। আমরা দুই পক্ষ মিলে আন্দোলন করলাম আমাদের ৪জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও তাদের ১১জন নেতার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। শিক্ষক নেতা মাহবুবুর রহমান প্রাথমিক শিক্ষক বদলি ও নিয়োগ নীতিমালায় নিজ জেলা ও উপজেলায় বদলির বিধান থাকলেও তা মানা হয়নি। আমাদের বদলি করা হয়েছে নিজ জেলা বা থানার বাইরে। এমনকি বিভাগের বাইরে। শুধুমাত্র হয়রানি করার জন্য বেআইনিভাবে আমাদের বদলি করা হয়েছে। এ বিষয়ে আমরা মাননীয় উপদেষ্টা ও সচিব মহোদয়ের কাছে আবেদন করেছি, দু:খ প্রকাশ করেছি। মহাপরিচালক মহোদয় তাদের আন্দোলন করার কথা বলে এখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে বলে জানান মাহবুব।
আরও পড়ুন: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন ও শ্রম অভিবাসন নিয়ে দিনব্যাপী সেমিনার





