ভেনিজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর অনুমোদন, স্থল হামলারও ইঙ্গিত ট্রাম্পের

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন যে তিনি ভেনিজুয়েলায় গোপন অভিযান চালানোর জন্য সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (সিআইএ)-কে অনুমোদন দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, দেশটিতে স্থলপথে সামরিক অভিযান চালানোর বিষয়টিও তাঁর প্রশাসন বিবেচনা করছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
আরও পড়ুন: গাজায় অভিযান পুনরায় শুরু করবে ইসরায়েল: ট্রাম্প
ওয়াশিংটনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্প এই তথ্য দেন। সেখানে এক সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন, আপনি কেন সিআইএকে ভেনিজুয়েলায় পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছেন?
জবাবে ট্রাম্প বলেন, দুটি কারণে। প্রথমত, তারা (ভেনিজুয়েলা সরকার) তাদের কারাগার খালি করে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠিয়েছে। দ্বিতীয়ত, ভেনিজুয়েলা মাদক চোরাচালানের বড় কেন্দ্র।
আরও পড়ুন: গাজায় যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করলে ফল হবে ভয়াবহ: ইরানের হুঁশিয়ারি
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে বিপুল পরিমাণ মাদক ভেনিজুয়েলা থেকে আসছে, বিশেষত সমুদ্রপথে। আমরা সমুদ্রপথে তাদের থামিয়েছি, এবার স্থলপথেও থামাব।
এই মন্তব্যের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনের ভেনিজুয়েলা-বিরোধী অবস্থান আরও তীব্র হলো। দেশটির প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরো দীর্ঘদিন ধরে ট্রাম্পের টার্গেটে রয়েছেন।
ভেনিজুয়েলার সরকার ট্রাম্পের এই পদক্ষেপের কড়া নিন্দা জানিয়ে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ ও আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করছে। মাদুরো সরকারের বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের এসব পদক্ষেপ আসলে ভেনিজুয়েলায় সরকার পরিবর্তনের বৈধতা তৈরি করার চেষ্টা, যার মূল লক্ষ্য দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ দখল করা।
এক টেলিভিশন ভাষণে মাদুরো বলেন, আমরা কোনো শাসন পরিবর্তনের ষড়যন্ত্র মেনে নেব না। ইতিহাসে এমন অনেক প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে—আফগানিস্তান, ইরাক, লিবিয়া—সব জায়গায়।
সংবাদ সম্মেলনে ট্রাম্পকে যখন জিজ্ঞাসা করা হয়, সিআইএ কি মাদুরোকে সরিয়ে দেওয়ার অনুমতি পেয়েছে?—তখন তিনি সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, এমন প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হাস্যকর হবে। তবে আমি মনে করি, ভেনিজুয়েলা এখন চাপ অনুভব করছে।
ট্রাম্প আরও দাবি করেন যে, ভেনিজুয়েলা যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধী ও মানসিক রোগীদের পাঠাচ্ছে—যদিও এ বিষয়ে কোনো প্রমাণ দেয়নি তাঁর প্রশাসন।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে ভেনিজুয়েলা উপকূলে অন্তত পাঁচটি বিমান হামলা চালিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম। এসব হামলায় ২৭ জন নিহত হয়েছেন, যাদের অনেকেই মাছ ধরার নৌকায় ছিলেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদকবাহী সন্দেহে ছোট নৌকায় মিসাইল হামলা চালানো আন্তর্জাতিক আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন। যুক্তরাষ্ট্র এখন পর্যন্ত এসব নৌকায় মাদক থাকার কোনো প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
ট্রাম্প অবশ্য এসব হামলাকে ন্যায়সঙ্গত দাবি করে বলেন, যখন তারা মাদকভর্তি থাকে, তখন তারা ন্যায্য লক্ষ্যবস্তু। এই হামলাগুলো আমেরিকানদের জীবন বাঁচাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, আমরা এখন সমুদ্রপথ প্রায় পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে এনেছি। এবার স্থলপথে অভিযান শুরু হবে।