অভিযানে গিয়ে লুটপাট
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মামলা,গ্রেপ্তার ১

অভিযানে গিয়ে লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় ভাটারা থানায় মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী একজন । মামলায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কথিত সোর্স রাসেলকে ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় অধিদপ্তরে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। ভাটারা থানার মামলার এজাহারে ভুক্তভোগি অভিযোগ করেন, আমি ববি এন ডিয়াজ, ঠিকানা ৯ মিরান্ডা লেন, থানা কোতোয়ালি, জেলা চট্টগ্রাম। বর্তমান বাসা ১৫৪, রোড ৮ ব্লক এফ, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, থানা ভাটারা। এই মর্মে অভিযোগ করছি যে, আমি একজন নিরীহ সংখ্যালঘু খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের সি এন্ড এফ ব্যবসায়ী। বিবাদি ফখরুল ইসলাম রাসেল ওরফে ভাইগ্না রাসেল, সে আমার পূর্ব পরিচিত। ইতোমধ্যে আমাকে মাদক দিয়ে ফাসিয়ে দেবে মর্মে নানা প্রকার হুমকি দিয়ে আসছে এবং আমার কাছ থেকে বিভিন্ন সময় টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। তারই ধারাবাহিকতায় পরিকল্পিতভাবে গত ২৯ ডিসেম্বর আনুমানিক রাত ৮ টায় রাসেলসহ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের খিলগাঁও সাকেলে এসআই শাহ আলম, সিপাহী মো. বাবর, এক মহিলাসহ অজ্ঞাত ৪/৫ জন নিজেদের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক পরিচয় দিয়ে আমার বাসায় এসে কলিংবেল চাপ দেয়। আমি কলিংবেলের শব্দ পেয়ে খুলে দিই এবং তারা আমার ফ্লাটে প্রবেশ করেন। আমার বাসায় কি জন্য এসেছেন? জিজ্ঞেস করলে তারা জানায় আমরা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের লোক। আমাদের কাছে গোপন তথ্য আছে আপনার বাসায় বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ মাদক মজুদ রয়েছে। তখন আমি তাদের বলি আমার বাসায় কোন নিষিদ্ধ মাদক নাই। বিবাদিরা আমার কথায় বিশ্বাস না করে পরিকল্পিতভাবে প্রবেশ করেন। তখন আমি তাদের বলি আমার বাসায় কোন মাদক নাই। তখন তারা আমার বাসায় তল্লাশি করবে বলে জানায়।আমি বলি ঠিক আছে আপনারা আমার বাসায় তল্লাশি করেন। যদি অপরাধী হয়ে থাকি তাহলে আমার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। তখন বিবাদীরা সবাই আমার বাসার ভেতর প্রবেশ করে বাসার সবকিছু ওলটপালট করে রাত অনুমান ৯ টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত তল্লাশি করে। কোথাও কোনো মাদকদ্রব্য পায়নি। তবে তারা তল্লাশি করার সময় আমার আলমারির ড্রয়ারে রাখা ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা অভিযান পরিচালনকারীরা দেখে ফেলেন। মাদক না পেয়ে তারা আমাকে এবং আমার স্ত্রী এলেন রেসেল পেরেরাকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয় এবং আমার কাছে ২০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। আমরা স্বামী-স্ত্রী আমাদের দুই সন্তানের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে বলি আমাদের কাছে এত টাকা নাই। আপনাদের চাহিদা অনুযায়ী এত টাকা দিতে পারবো না বললে একজন পোশাক পরিহিত (নেমপ্লেটে বাবর লেখা) বলেন আপনাদেরতো অনেক টাকা। এই টাকাগুলো আমাদের দিয়ে দেন, অবশিষ্ট টাকা পরবর্তীতে দ্রুত সময়ের মধ্যে দেবেন। এই বলে তারা ড্রয়ার খুলে টাকাগুলো নিতে চাইলে আমি রাজি হই এবং আমার স্ত্রী এলিন রেসেল পেরেরা ৪ লাখ ৩০ হাজার টাকা বিবাদিদের হাতে দিয়ে বলে আমাকে রেখে যান। আমরা পরবর্তীতে আপনাদের দাবিকৃত বাকি টাকা পরিশোধ করবো। এক পযার্য়ে বাবর তাদের দাবিকৃত ২০ লাখ টাকা থেকে আমার আলমারির ড্রয়ারে থাকা নগদ টাকা আমার স্ত্রীর কাছ থেকে গ্রহণ করে নিয়ে যাওয়ার সময় বলেন যে বাকি টাকাটা না দিলে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দেবে এবং বিভিন্ন ধরনের ভয়-ভীতি হুমকি দেয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ও পরিকল্পিতভাবে ঘটনাটি ঘটায়। পরবর্তীতে ২ জানুয়ারি বেলা ৩:৩৮ মিনিটে বাবর তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বর (০১৭৯৩১১০৪৪৭) থেকে আমার ব্যবহৃত (০১৩১০৫৯০০১৮) মোবাইল নম্বরে দাবিকৃত অবশিষ্ট ১৬ লাখ টাকা পুনরায় চায়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপে জানা গেছে, ওই অভিযানের প্রধান নেতৃত্বে ছিলেন খিলগাঁও সার্কেল ইন্সপেক্টর আব্দুর রহিম সহ অন্যরা। মূলত ইন্সপেক্টরের নির্দেশ বা আদেশে ওই বাসায় অভিযান পরিচালনা করা এবং মালামাল জব্দ করে সেখানে করা হয় সিজার লিস্ট। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে ওই ইন্সপেক্টরের নাম বাদ দিয়ে তার অধীনস্থদের আসামি করায় নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ইন্সপেক্টর নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য এ কাজ করেছেন বলে অনেকেই সন্দেহ করছেন। কেননা কোন জায়গায় অভিযানে গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিদেশে সেখানে ওই বাড়ির মালিক কিংবা আশপাশের ফ্লাটের লোকজনের উপস্থিতিতে অভিযান পরিচালনা করা। কিন্তু ইন্সপেক্টর তার নিজের দৌদণ্ড প্রতাপ এবং প্রভাবের কারণে এসব না করেই তিনি নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য অভিযান পরিচালনা করেন।
আরও পড়ুন: আশুলিয়ায় ছয় আন্দোলনকারীকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশ ২১ আগস্ট
অভিযোগ আছে, ঘটনা জানাজানি হলে ইন্সপেক্টর রহিম আগে থেকে নিজেকে বাচাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। তারই অংশ হিসেবে মামলা থেকে ইতোমধ্যে তার নাম বাদ দিয়েছেন। পদাধিকার বলে এ ঘটনার দায় সে কোনভাবেই এড়াতে পারেন না। আবার তিনি খিলগাঁও সার্কেলে যোগদান করার পর থেকে এসব এলাকায় যত ফাইভ, থ্রি স্টার হোটেল এবং বার বা রেস্টুরেন্ট আছে সেগুলো থেকে নিয়মিত মাসোয়ারা আদায় করে আসছেন। আর এই মাসোহারার ভাগবাটোয়ারা যেন অধীনস্থদের যেন দিতে না হয় সে কারণে নানাভাবে হয়রানি করে আসছেন তিনি।
অন্যদিকে ভাটারা থানায় মামলা দায়ের হওয়ার পর থেকে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে। তারই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সকালে গেন্ডারিয়া বিভাগীয় কার্যালয়ে অতিরিক্ত পরিচালক সহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সন্দেহ্বাজনদের নিয়ে ঘটনার প্রকৃত কারণ জানার চেষ্টা করছেন। এদিকে একই অভিযোগ তুলে ভুক্তভোগী ওই ব্যবসায়ী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) বরাবর গেল বছরের ৩১ ডিসেম্বর একটি লিখিত অভিযোগ করেন। সেখানেও তিনি অভিযানের নামে লুটপাট করে টাকা নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের 'গোপন বৈঠকে' অংশ: মেজর সাদিকুলের স্ত্রীর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি
এ বিষ য়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে সদ্য নিয়োগ পাওয়া মহাপরিচালক মুনতাসির বিল্লাহ ফারুকির সঙ্গে। তিনি বলেন, 'ঘটনাটি আমি এখনো জানি না, তবে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কারো সংশ্লিষ্ট পাওয়া গেলে বা কোন অপরাধ হলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মামলার সন্দেহভাজন আসামিদের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নে বৃহস্পতিবার দুপুরে ভাটারা থানার ওসিদাস বলেন, ' মামলায় একজন তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তিনি পরবর্তীতে আসামিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন।
শনিবার ১৩( জানুয়ারি) দুপুরে এ বিষয়ে কথা হয় মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ভাটারা থানার এসআই শামীম হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, এক নম্বর আসামি রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাকে একদিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। বাকি আসামিরদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামির দেওয়া তথ্য ও প্রাপ্ত তথ্য-প্রাপ্ত বিশ্লেষণ করে অপর আসামিদের সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এ জন্য কাজ করে যাচ্ছি।