কোস্ট গার্ড বহরে যুক্ত হল সমুদ্রগামী ৫ নৌযান

MIZANUR RAHMAN
বাংলাবাজার পত্রিকা রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১১:৩৩ পূর্বাহ্ন, ২১ জুন ২০২৩ | আপডেট: ৭:২৫ পূর্বাহ্ন, ২১ জুন ২০২৩
ছবি : সংগৃহীত
ছবি : সংগৃহীত

সমুদ্রসীমা রক্ষায় নিয়োজিত বাহিনী কোস্ট গার্ডের বহরে যুক্ত হল দুটি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল, দুটি টাগ বোট এবং একটি ফ্লোটিং ক্রেন, যেগুলো তৈরি হয়েছে বাংলাদেশেই। 

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার চট্টগ্রামের পতেঙ্গা কোস্ট গার্ড বার্থে এই পাঁচ সমুদ্রগামী নৌযানের কমিশনিং করেন। সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি কমিশনিং অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

আরও পড়ুন: বাধ্যতামূলক অবসরে ডিএমপির সাবেক ৯ ওসি

নতুন নৌযানগুলোর  ‘শুভ কমিশনিং’ ঘোষণা করে তিনি বলেন, ‘গেল ১৪ বছরে কোস্ট গার্ডের বহরে সংযুক্ত হয়েছে ১৫৪টি আধুনিক নৌযান। ভবিষ্যতে এর দায়িত্ব আরো বাড়বে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলা হচ্ছে কোস্ট গার্ডকে। ২০৪১ সালের মধ্যে কোস্টগার্ড হবে নিজস্ব জনবলে স্বয়ংসম্পূর্ন একটি স্মার্ট বাহিনী। দেশপ্রেমে উদ্ধুদ্ধ হয়ে সার্বভৌমত্ব রক্ষায় কোস্ট গার্ডকে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানাই।’

এই পাঁচ সমুদ্রগামী নৌযানের মধ্য ইনশোর পেট্রোল ভেসেল বিসিজিএস জয় বাংলা ও বিসিজিএস অপূর্ব বাংলা তৈরি হয়েছে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালিত রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস লিমিটেডে।

আরও পড়ুন: হাসিনার প্রিজম দিয়ে বাংলাদেশকে দেখায় ভারতকে মূল্য দিতে হচ্ছে

আর টাগ বোট বিসিজিটি প্রত্যয়, বিসিজিটি প্রমত্ত এবং ফ্লোটিং ক্রেন বিসিজিএফসি শক্তি তৈরি হয়েছে খুলনা শিপইয়ার্ডে। 

কমিশনিং অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অনুমতির পর নৌযানগুলোর অধিনায়কদের হাতে কমিশনিং ফরমান তুলে দেন জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফিজুর রহমান।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের মহাপরিচালক রিয়ার অ্যাডমিরাল আশরাফুল হক চৌধুরী।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান অনুষ্ঠানে বলেন, ‘দুটি ইনশোর পেট্রোল ভেসেল, দুটি টাগ বোট এবং একটি ফ্লোটিং ক্রেন যুক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড আরও আধুনিকায়নের মাধ্যমে এগিয়ে যাবে। বহিঃনোঙ্গরে বাণিজ্যিক জাহাজে চুরি রোধ, সমুদ্রপথে মানব ও মাদক পাচার নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক সমুদ্র সীমানায় টহল প্রদান এবং যে কোনো প্রাকৃতিক দূর্যোগ ও নৌ যান দূর্ঘটনায় উদ্ধার অভিযান পরিচালনায় সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি কোস্ট গার্ডের অপারেশনাল কার্যক্রম বেগবান হবে বলে আমি মনে করছি।’

বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড ইতোমধ্যে পরিশ্রম, দক্ষতা ও সততার মধ্য দিয়ে ‘জনগণের অস্থা অর্জন করেছে’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ইনশোর পেট্রোল ভেসেল বিসিজিএস জয় বাংলার অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কমান্ডার জিয়া উদ্দিন মঙ্গলবার বলেন, ‘আমাদের এই জাহাজগুলো অত্যাধুনিক। ১৯৯৫ সালে আমরা যে জাহাজগুলো নিয়ে শুরু করেছিলাম, সেগুলা ছিল নৌবাহিনীর পুরনো জাহাজ। আমরা এখন যে জাহাজগুলো পেয়েছি, সেগুলোতে আধুনিক মেশিনারিজ, সেন্সর, সার্ভেইলেন্স রেডার, নেভিগেশন ইকুইপমেন্ট এবং স্বয়ংক্রিয় কামান রয়েছে। আমাদের নিজেদের রক্ষা করার পাশাপাশি অপারেশন কর্মকাণ্ডে এসব কামান বিশেষ ভূমিকা রাখবে। আমাদের সার্ভেইলেন্স রেডারের রেঞ্জ ৯৬ নটিক্যাল মাইল। এই রেঞ্জের মধ্যে কোনো জাহাজ, কোনো শত্রু এলে আমরা চিহ্নিত করতে পারব। এই জাহাজগুলো উচ্চ গতিসম্পন্ন। আমরা ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ২৬ নটিক্যাল মাইলে গতিতে চলতে পারি। বাণিজিক জাহাজের গতি এর চাইতে বেশি হয় না। যারা অপরাধ কার্যক্রমে জড়িত থাকে, তারা আমাদের সাথে গতিতে পারবে না।’

বিসিজিএস অপূর্ব বাংলার কর্মকর্তারা জানান, মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে মানবপাচার, মাদক পাচার, গভীর সমুদ্রে অবৈধভাবে মৎস্য আহরণসহ বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা কাজে ব্যবহৃত হবে এই ইনশোর পেট্রোল ভেসেল। সাগরে ৪৫ থেকে ৫০ কিলোমিটার পর্যন্ত গতির যে কোনো নৌযানকে তাড়া করে ধরতে পারবে এ নৌযান।

টাগ বোট বিসিজিটি প্রত্যয়ের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট এম শাহীন আলম বলেন, ‘এ নৌযান দিয়ে তিন ধরনের কাজ করা যাবে। সমুদ্রে দুর্ঘটনা কবলিত জাহাজকে উপকূলে টেনে নিয়ে আসা, ধাক্কা দিয়ে সরানো এবং ১০০ মিটার দূরে থেকে অন্য জাহাজের আগুন নেভানো সম্ভব হবে। ৩৫০০ টন ধারণ ক্ষমতার জাহাজকে এই বোট টেনে নিয়ে যেতে পারবে। এটাই দেশের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি টাগবোট। বিসিজিটি প্রমত্ত বোটটিও একই ক্ষমতার।’

ফ্লোটিং ক্রেন বিসিজিএফসি শক্তির চিফ পেটি অফিসার (সিপিও) মো. মহাসিন আলী বলেন, ‘এটি কোস্ট গার্ডের প্রথম নিজস্ব ভাসমান ক্রেন। এর আগে আমাদের প্রয়োজন পড়লে নৌবাহিনী অথবা অন্য কারো কাছ থেকে নিয়ে আসতে হত। এই ক্রেন ৭০ টন ওজনের জাহাজ বা যে কোনো পণ্য খাড়াভাবে ওঠানামা করতে পারে। সমান্তরালে ৩০ মিটার প্রসারিত অবস্থায় ১২ টন লোড নিতে পারে। নদীপথে বাংলাদেশে এটা সবচেয়ে উন্নত ভাসমান ক্রেন।’

দুর্ঘটনাকবলিত ডুবে যাওয়া জাহাজ ও নৌযান উদ্ধার করা যাবে বিসিজিএফসি শক্তি ব্যবহার করে। জাহাজটির ক্রেনের অংশটি ইতালীর কোম্পানি হেইলা থেকে আমদানি করা হয়েছে। বাকি অংশ তৈরি করা হয়েছে দেশে।

বাংলাদেশ সরকারের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালে বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ‘বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড বিল’ উত্থাপন করেন। যার ধারাবাহিকতায় ১৯৯৫ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি এ বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।  

পরে এ বাহিনীতে নতুন নতুন প্ল্যাটফর্ম ও অবকাঠামো সংযোজিত হয়েছে। এর ফলে বাহিনীর কাজে গতি এসেছে, অর্জিত হয়েছে নানা সাফল্য।