পেট্রোবাংলা ভাঙচুর, তিতাসে অস্থিরতা
নেপথ্যে বিপু সিন্ডিকেটের পিডি কায়সার

তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ নিয়ে বিক্ষুব্ধ ভাঙচুর করে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শনাক্ত করা হচ্ছে। মূল উস্কানি দাতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সাবেক জ্বালানি মন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপুল সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগী আড়াই হাজার কোটি টাকার প্রকল্পের পিডি আবুল কায়সারকে। কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অন্যান্যদের সাথে আলোচনা এবং ভিডিও ফুটেজ দেখে জানা যায় তার নেতৃত্বেই কর্মচারীদের উস্কানি দিয়ে বিক্ষুব্ধ করা হয়। তার নেতৃত্বেই হামলা করা হয় পেট্রোবাংলা। কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুমকির মুখে গতকালও তিতাসে যোগদান করতে পারেনি নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির একদল কর্মকর্তা-কর্মচারী গত মঙ্গলবার সকাল ৯.৩০ ঘটিকায় কাওরান বাজার তিতাস গ্যাস প্রধান কার্যালয়ের মূল ফটকে ও ভবনের ভিতরে বিক্ষোভ করে এবং পরবর্তিতে ১১টার দিকে পেট্রোবাংলায় সামনে ও ভেতরে বিক্ষোভ ও ভাঙচুর করেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। তিতাস গ্যাসে নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের প্রতিবাদে তাদের বিক্ষোভ বলে জানিয়েছে। বিক্ষোভকারীরা তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ আবুল কাওসারের (বর্তমানে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক -এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত প্রিপেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক) নেতৃত্বে বাঁশের লাঠিসোঠা নিয়ে পেট্রোবাংলার প্রধান কার্যালয় পেট্রো সেন্টারের নিচতলার বিক্ষোভ করে ও রিসিপশনের গ্লাস ভাঙচুর করে বলে সূত্র জানিয়েছে। পরবর্তীতে তারা তিতাস গ্যাসে ফিরে যান। বিগত সরকারের সময়ে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগ পাওয়া তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন এন্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ মোল্লাহর চুক্তি ৯ সেপ্টেম্বর বাতিল করে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহনেওয়াজ পারভেজকে তিতাস গ্যাসে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়। জানা যায় প্রাক্তন জালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং হারুনুর রশীদ মোল্লাহর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোঃ আবুল কাওসার। সেই সুবাধে ব্যবস্থাপক হয়েও তিনি বিগত সরকারের আমলে দুই ধাপ উপরে জেনারেল ম্যানেজারের পদ মর্যাদাসম্পন্ন প্রকল্প পরিচালকের পদটি বাগিয়ে নিতে সক্ষম হন। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রতিমন্ত্রীর ইচ্ছানুযায়ী গোপনে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করা হয়। উক্ত এডিবি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা। প্রকল্পের পরামর্শক ফি ছাড়া প্রকল্পের অপর দুইটি অংশ হচ্ছে আইটি/ডাটা সেন্টার স্থাপন একটি অংশ এবং সাড়ে ছয় লক্ষ মিটার স্থাপন অপর অংশ। পরামর্শক ফার্ম নিয়োগ এবং প্রকল্পের অপর উভয় অংশের কাজগুলি তাহাদের পছন্দের ঠিকাদারদেরকে পাইয়ে দিতে উক্ত সিন্ডিকেট কাজ করে যাচ্ছিল। সে মতে উক্ত চক্র তিতাস বোর্ডের অনুমোদন ছাড়া এবং পরামর্শক নিয়োগ ব্যতিরেকে আইটি/ডাটা সেন্টার অংশের কাজের জন্য তাড়াহুড়ো করে তৃতীয় পক্ষের মাধ্যমে দরপত্র দলিল প্রস্তুত করতঃ দরপত্র আহবান করে। যা তিতাসের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
তিতাস গ্যাস সূত্র জানিয়েছে, শাহনেওয়াজ পারভেজকে দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে তিতাসের দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তার বিরুদ্ধে অন্যদের উসকানি দিতে থাকে। তারা প্রকল্প পরিচালকের নেতৃত্বে পেট্রোবাংলায় গিয়ে হামলা করে। পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার বলেছেন, তিতাসের লোকজনের দাবি হচ্ছে তাদের কর্মকর্তাদের মধ্যে থেকে এমডি করতে হবে। তিনি জানান, তিতাস গ্যাসের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এটা করে একশ্রেণির লোকজন দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে তিতাস গ্যাস কোম্পানিতে কর্মরত অনেক সৎ, যোগ্য ও কর্মঠ কর্মকর্তা আছেন যাদের বিরুদ্ধে বিগত সরকারের আমলে মিথ্যা, ভিত্তিহীন এবং হয়রানিমূলক অভিযোগ করে বছরের পর বছর পদোন্নতি বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে। কারো কারো তদন্তে নির্দোষ প্রমাণিত হওয়ার পরও পদোন্নতি বঞ্চিত রয়েছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নীতি হচ্ছে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো
টলারেন্স। শৃঙ্খলাভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এদিকে গতকাল প্রকৌশলী কায়সার নেতৃত্বে উস্কানিতে তিতাসে উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজ করছে। তিতাসের সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি ছিল তাদের কোম্পানি থেকে একজন অভিজ্ঞ সিনিয়র কর্মকর্তাকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ করা। কিন্তু বিগত ১৬ বছরে কখনো তিতাসের থেকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগ হয়নি। তিতাস বিতরণ কোম্পানি হলেও এখানে অনেক অভিজ্ঞ কর্মকর্তা আছেন। তাদের নিয়োগ দলে কোম্পানির দুর্নীতি বন্ধ করে আরো লাভজনক অবস্থানে নিয়ে আসতে পারবে। এই বিষয়টিকে পুঁজি করে তিতাসে অস্থিরতা তৈরি করার জন্য প্রকৌশলী কায়সার কৌশলে কর্মকর্তা কর্মচারীদের উসকে দেয়। অনুসন্ধানে জানা যায়, নতুন নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও পেট্রোবাংলার একজন সিনিয়র ও সৎ কর্মকর্তা।