বাংলাবাজার পত্রিকা কে একান্ত আলাপচারিতায় ডিএমপি কমিশনার

'জনগণের প্রত্যাশার জায়গায় ডিএমপিকে নিয়ে সেবা দিতে চেষ্টা করছি'

Abid Rayhan Jaki
মুস্তাফিজুর রহমান বিপ্লব
প্রকাশিত: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ন, ০৯ অক্টোবর ২০২৪ | আপডেট: ৫:৩৮ পূর্বাহ্ন, ০৯ অক্টোবর ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত
# পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরেছে: নগরবাসী নিরাপদ বোধ করছে 
# কারামুক্ত জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা নজরদারীতে আছে

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মাইনুল হাসান পিপিএম এনডিসি বলেছেন  সম্পূর্ণ ভঙ্গুর অবস্থা থেকে ডিএমপিকে সংগঠিত করে জনগণের প্রত্যাশার জায়গায় নিয়ে সেবা প্রদানে চেষ্টা করছি। নগরবাসী স্বাভাবিক সময়ের মতোই পুলিশের কাছ থেকে সেবা আশা করে। আমরা খুব দ্রুতই পুলিশের স্বাভাবিক সেবা প্রদানের সচেষ্ট হব। ইতিমধ্যে পুলিশের ৫০ টা থানাতে ই স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নগরীর আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি আমাদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে। 

তিনি বলেন, ৫ আগস্টের পর ভেঙ্গে পড়া পুলিশ ব্যবস্থাকে পুনর্গঠন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে। পুলিশের উপর মানুষের আস্থা ও নির্ভরশীলতা বেড়েছে।জামিন পাওয়া জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নজরদারীতে রাখা হয়েছে। ডিএমপি কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনের ২ মাস শেষে বাংলাবাজার পত্রিকা কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন । 

আরও পড়ুন: সেনাবাহিনী প্রধানের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো অ্যাকাউন্ট নেই: আইএসপিআর

গত ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার অভুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান ঢাকা ডিএমপির তৎকালীণ কমিশনার মো. হাবিবুর রহমান। ভেঙ্গে পড়া বাহিনীর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পুলিশের সবচাইতে বড় ইউনিট ডিএমপির ৩৭ তম কমিশনার হিসেবে ৭ আগস্ট দায়িত্ব নেন বিএসএস ১৭ ব্যাচের কর্মকর্তা মো. মইনুল হাসান এনডিসি। সোমাবর সন্ধ্যায় নিজ কার্যালয়ে   কিভাবে ভেঙ্গে পড়া একটি ইউনিটকে পুনর্গঠন করে কার্যকর করে তুলেছেন সেসব কথা। তুলে ধরেন ।যানজট নিরসন ও নগরীর অপরাধ নিয়ন্ত্রণে নানা উদ্যোগের কথা। 

মো. মাইনুল হাসান বলেন, ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভূত্থানে পুলিশ ব্যবস্থা সম্পুর্ণ ভেঙ্গে পড়েছিল। নানা দাবি দাওয়া নিয়ে কর্মবিরতি পালন শুরু করে শ্রমিকরা। ওই অবস্থায় ঝুঁকি নিয়ে আমি কাজ শুরু করি। পুলিশ যারা নিহত হয়েছিল তাদেরকে ধর্মীয় নিয়মে দাফন ও সৎকার করা হয়। কর্মবিরতীতে থাকা সদস্যদের কাউন্সিলিং করে তাদেরকে সাপোর্ট দিয়ে নতুন নেতৃত্ব তৈরি করি। তাদের কিছু দাবী দাওয়া তাৎক্ষনিক মেনে নেওয়া হয় এবং পুলিশ সংস্কারসহ কিছু দাবি দাওয়া পুরুণের আশ্বাস দেওয়া হয়। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের প্রতি অধস্তনদের যে আস্থাহীনতা তৈরি হয়েছিল সেটা দূর করা হয়। ধীরে ধীরে পুলিশে আস্থা ফিরে আসে। বড় ধরনের বিপর্যয়ের পর তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজে যোগ দেয়। সশস্ত্র বাহিনী আমাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও সমর্থণ করেছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানসহ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় থানাগুলোর কার্যক্রম দ্রুত শুরু হয়েছে। আমাদের ২২টি থানা ও ট্রফিক বক্সসহ ২০০ স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া ও ভাংচুর করা থানাগুলো মেরামত ও সংস্কার করা হয়ছে। তবে এখনো যাত্রাবাড়ি ও পল্টন থানার অবকাঠামোগত সংস্কার কার্যক্রম সম্পন্ন করা শেষ হয়নি। ডিএমপির ১৪ জন পুলিশ সদস্য নিহত ও ৫০০ জনের বেশি আহত হয়েছে। 

আরও পড়ুন: দুর্নীতির তদন্তে সাবেক গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নরদের ব্যাংক হিসাব তলব

কমিশনার বলেন, আমরা পিআরবিসহ পুলিশির বিভিন্ন আইন ও প্রবিধান মেনে দায়িত্ব পালন করি। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময় পুলিশের মধ্যে ভীতি ছিল। এই সময় আইন শৃঙ্খলা অবনতির কারনে সাধারণ মানুষও পুলিশের অভাব অনুভব করেছে। 

ডিএমপি কমিশার বলেন, বিভিন্ন থানা থেকে ১১শ’টির মতো অস্ত্র লুট হয়েছে। এখনও প্রায় ৭শ’ অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। আমাদের ধারণা এসব অস্ত্র বিভিন্ন জনের কাছে আছে। এসব অস্ত্র যাদের কাছে আছে তারা গোপনে হলেও আমাদের কাছে জমা দেওয়ার অনুরোধ করি। অভিযানে কেউ ধরা পড়লে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হবে। থানা থেকে লুন্ঠিত অস্ত্র উদ্ধারে আমরা সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছি।  

ঢাকা মহানগরী এলাকায় বর্তমানে যানজট মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। এই সংকট নিরসনে পুলিশ কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে মো: মাইনুল হাসান বলেন, যানজট কমানোর জন্য তিনটা বিষয় মূখ্য। তাকে বলা যায় থ্রি-ই। এর প্রথমটি হলো ট্রাফিক এডুকেশন, ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং ও ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট। ট্রাফিক এডুকেশন ও ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের বিষয়টি পুলিশের হাতে নেই। লোকজন আইন মেনে চলতে চায় না। হঠাৎ রাস্তায় বসে আন্দোলন শুরু করেছে। সড়ক অবরোধ করে। আমরা তাদেরকে অনুরোধ করে বলছি জনভোগান্তি সৃষ্টি করে বা জনগনকে জিস্মি করে কোন আন্দোলন করবেন না। আপনারা সড়ক অবরোধ ছাড়া দাবী আদায়ের যেসব পদ্ধতি রয়েছে সেগুলো অনুসরণ করুন।  অপরদিকে রাস্তায় খানা-খন্দ থাকে, বিভিন্ন সংস্থা খোঁড়াখুড়ি করে থাকে। গণপরিবহনগুলো যেনো তেনোভাবে রাস্তায় রেখে দেয়। অনেক ভবন মালিকরা গাড়ি পার্রিংয়ের জায়গা অন্যকাজে ব্যবহার করে। বাধ্য হয়ে গাড়ি সড়কে রাখতে হয়। খানাখন্দ ভরা রাস্তায় কোন গাড়ি বিকল হলেও যানজট দেখা দেয়। 

পুলিশের কাছে শুধু এনফোর্সমেন্ট রয়েছে। যানজট নিরসনে ঢাকা মহানগর পুলিশ আগেও অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু সেগুলো পুরোপুরি কার্যকর হয়নি। এখন আমরা ট্রাফিক সিগন্যালগুলো রিমোট কন্ট্রোলের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণের জন্য সেমি অটোমেশন পদ্ধতি চালু করার উদ্যোগ নিয়েছে। এতে ট্রাফিকের জনবল কম প্রয়োজন হবে। সিগন্যালে জনবল কম লাগলে বাকী জনবল এনফোর্সমেন্টে কাজ করতে পারবে। 

চুরি ছিনতাই রোধে পুলিশের পেট্রোলিং বাড়ানো হয়েছে। এলাকাভিত্তিক বিটপুলিশিং, কমিউনিটি পুলিশিংকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ। এতে মানুষ অনেকটা নিরাপদ বোধ করছে। এরপরও অপরাধ ঘটে গেলে মানুষ আইনের সহায়তা নিতে পারে। থানায় মামলা করলে পুলিশ তদন্ত করে অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পত্র দিবে। আদালত পুলিশের মাধ্যমে তাদেরকে প্রসিকিউশন করা হচ্ছে। 

জামিন ও আদালতে থেকে জঙ্গি ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা সাজা শেষে বা জামিনে মুক্তি পাচ্ছে। নতুন করেও জঙ্গিবাদ ও শীর্ষ সন্ত্রাসীরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠার আভাস পাওয়া যাচ্ছে এবিষয়ে পুলিশ কি পদক্ষেপ নিয়েছে জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, জামিন যেকোন ব্যক্তির নাগরিক ও আইনী অধিকার। জঙ্গি বা শীর্ষ সন্ত্রাসী যারা আদালত থেকে মুক্তি পেয়েছে আমরা তাদেরকে আমাদরে সিসিটিসি ইউনিট ও এটিইউর মাধ্যমে নজরদারীতে রেখেছি। হিযবুত তাহরীরসহ নিষিদ্ধ সংগঠন যারা প্রকাশ্যে আসার চেষ্টা করছে তাদের বিষয়েও পুলিশ সতর্ক রয়েছে। ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। জঙ্গি দমনে সাধারণ মানুষ আমাদেরকে সহযোগিতা করছে। তাদের কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে । নেতাদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে।

কমিশনার বলেন, নগরীর অধিকাংশ মানুষই শান্তিপ্রিয়। দুষ্টচক্রের জড়িতদের সংখ্যা কম। সাধারণ মানুষ পুলিশকে সহযোগিতা করলে আইন শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ সহজ হবে। 

কিছুদিন আগে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ হয়েছে। এখন বৈধসব অস্ত্র অবৈধ। তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে কিনা জানতে চাইলে কমিশনার বলেন, অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের অনেকেই পলাতক ও আত্মগোপনে রয়েছে। তাদেরকে খুঁজে পাওযা যাচ্ছে না। যাদের অস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে তাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনে মামলা হচ্ছে এবং তাদের অস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করে দেওয়া হবে।