সচিবালয় অগ্নিকাণ্ড পরিকল্পিত নাশকতা?

টার্গেট দুই ছাত্র উপদেষ্টার অফিস

AK Azad
বাংলাবাজার রিপোর্ট
প্রকাশিত: ১:২০ অপরাহ্ন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ | আপডেট: ১০:২০ পূর্বাহ্ন, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গভীর রাতে সরকারের  প্রাণকেন্দ্র বাংলাদেশ সচিবালয়ের সাত নং ভবনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড নিয়ে রহস্য সৃষ্টি হয়েছে। এই ভবনেই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও যুব উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের অফিস। অগ্নিকাণ্ড টি ঘটেছে দুই উপদেষ্টার কার্যালয়ে অর্থাৎ ৭ নম্বর বিল্ডিংয়ের দুই পাশে।

আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সরকারের অনেক গুরুত্বপূর্ণ দলিল। এই ভবনেই এলজিআরডি, যুব  এবং ডাক ও টেলি যোগাযোগ মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এলাকাটি ঘিরে রেখেছে। সর্বত্রই কৌতুহল ও আলোচনা আগুন কিভাবে লাগলো। এতে কি কোন মহলের নাশকতা না পরিকল্পিত অগ্নিকাণ্ড না দুর্ঘটনা তা নিয়ে রহস্যের সুষ্টি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সহ গোয়েন্দারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা ধরণের মন্তব্য ভাইরাল হচ্ছে।

আরও পড়ুন: বিএনপি নেতৃবৃন্দের শোক, মালয়েশিয়া বিএনপির সভাপতি বাদলুর রহমানের মায়ের ইন্তেকাল

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহাম্মদ জাহেদ কামাল  বলেন, আগুনে সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আট ও নয় তলা। সেখানে থাকা নথিপত্র পুড়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা হচ্ছে।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্যমতে, সচিবালয়ের সাত নম্বর ভবনে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহণ ও সেতু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিভাগ রয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, তারা আগুন লাগার খবর পায় দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে। ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। প্রথমে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য আটটি ইউনিট কাজ করলেও, পরে ইউনিটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। পরে আগুন প্রায় ৬ ঘন্টা পর নিয়ন্ত্রণে আসে। তবে তার আগে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকা আগুনে ভবনটির ছয়, সাত, আট, নয় তলা পুড়ে যায়।

আরও পড়ুন: মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের বৈঠক

এদিকে সচিবালয়ের যে ৭ নম্বর ভবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে, সেখানে বসতেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ভূঁইয়া। আগুনের ঘটনায় তিনি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, সরকারকে ব্যর্থ করার ষড়যন্ত্রে কেউ জড়িত থাকলে তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।

বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) সকালে নিজের ফেসবুকে একটি পোস্টে তিনি এই হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।

পোস্টে তিনি লিখেছেন, বিগত সময়ে হওয়া অর্থলোপাট, দুর্নীতি নিয়ে আমরা কাজ করছিলাম। কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের প্রমাণও পাওয়া গিয়েছিল। আগুনে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে এখনো জানা যায়নি। আমাদেরকে ব্যর্থ করার এই ষড়যন্ত্রে যে বা যারাই জড়িত থাকবে তাদের বিন্দু পরিমাণ ছাড় দেওয়া হবে না।

আসিফ মাহমুদ আরও লেখেন, এই মুহূর্তে আছি নীলফামারিতে, যত দ্রুত সম্ভব ঢাকা ব্যাক করছি।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, তারা আগুন লাগার খবর পায় বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) দিবাগত রাত ১টা ৫২ মিনিটে। ১টা ৫৪ মিনিটে ঘটনাস্থলে পৌঁছান ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। শুরুতে আগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য ৮টি ইউনিট কাজ করলেও পরে আরও ১১টি ইউনিট যুক্ত হয়।

অগ্নিকাণ্ডের ফলে পুরো সচিবালয় এলাকা কালো ও ঘন ধোঁয়ায় ঢেকে যায়। সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম ও নবম তলায় ছড়িয়ে পড়ে আগুন। তাৎক্ষিণকভাবে আগুন লাগার কারণ বা ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি কাজ করছে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি, র‍্যাব ও এপিবিএন সদস্যরা।

এদিন সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে আগুন লাগার পর ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের সঙ্গে সহায়তায় নৌ-বাহিনীর একটি টিম মোতায়েন করা হয়।

সচিবালয়ে লাগা আগুন পরিকল্পিত হতে পারে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে নৌ-বাহিনীর সিনিয়র চিফ পেটি অফিসার (পিও) আমিনুল ইসলাম বলেন, শর্ট সার্কিট থেকে সাধারণত একাধিক স্থানে আগুন ছড়িয়ে পড়ে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ছয়তলা, নয়তলা একসঙ্গে আগুন লেগেছে, যা পরিকল্পিত হতে পারে।

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আমিনুল ইসলাম বলেন, যেখানে আগুন লেগেছে, সবকিছু পুড়ে গেছে। আমরা এখনো সবকিছু সঠিকভাবে চিহ্নিত করতে পারিনি, তবে তা করব। নৌ-বাহিনীর টিম এখানে কাজ করছে।
শর্ট সার্কিটের আগুন সাধারণত এক জায়গা থেকে শুরু হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে আগুন একসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে লেগেছে, যা অস্বাভাবিক।