বর্ধিত সভায় খালেদা জিয়া
সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে সবাইকে কাজ করার আহ্বান

ক্ষুদ্র সংকীর্ণতা ভুলে দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, ‘এখনো ফ্যাসিস্টের দোসররা এবং বাংলাদেশের শত্রুরা গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্জনকে নস্যাৎ করার জন্য গভীর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে। বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের এলডি হল সংলগ্ন মাঠে বিএনপির বর্ধিত সভায় লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘ইস্পাত কঠিন ঐক্যের মাধ্যমে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এই চক্রান্তকে ব্যর্থ করে দিতে হবে। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে। দলকে আন্দোলন, সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংতভাবে গড়ে তুলি।’
আরও পড়ুন: ৮ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সাত্তারের দুর্নীতির অভিযোগ দায়িত্বজ্ঞানহীন: মন্ত্রিপরিষদ সচিব
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘জনগণের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যূনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন সম্পন্ন করতে আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং আপনাদের সকলকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংহত করেছেন।’
আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার অবর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সিনিয়র নেতৃবৃন্দ আপনাদের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে নিরন্তর কাজ করে দলকে সুসংগত করেছেন। আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। আমি বিশ্বাস করি আপনারা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আগামী নির্বাচনে সাফল্যের জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবেন। এমন কোনো কাজ করবেন না, যাতে আপনাদের এত দিনের সংগ্রাম বিফলে যায়। আমাদের সবসময় শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সেই উক্তি মনে রাখার দরকার- ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়।’
আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
বেগম খালেদা জিয়া আরও বলেন, ‘আসুন আমরা আগামী দিনগুলোতে শহীদ জিয়াউর রহমানের স্বপ্নের আধুনিক, সমৃদ্ধি ও গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মাণের জন্য আমাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করি। এত ত্যাগের বিনিময়ে প্রাপ্ত এই অর্জনকে সুসংহত এবং ঐক্যকে আরো বেগবান করি। আমি যুক্তরাজ্য থেকে অসুস্থ অবস্থায় আপনাদের আহ্বান জানাতে চাই-আসুন জনগণকে সম্পৃক্ত করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলকে পূর্বের ন্যায় আন্দোলন সংগ্রাম ও রাষ্ট্র পরিচালনায় নেতৃত্ব প্রদানে আরও ঐক্যবদ্ধ এবং সুসংগতভাবে গড়ে তুলি।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আপনাদের মাধ্যমে ছাত্র ও যুবকসহ দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাতে চাই। আসুন, প্রতিহিংসা প্রতিশোধ নয়, পারষ্পারিক ভালোবাসা ও ভাতৃত্বের মাধ্যমে আমরা সবাই মিলে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে একটি বাসযোগ্য উন্নত ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করি।’
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে খালেদা জিয়া তার বক্তব্য শুরু করেন। তিনি বলেন, আজ দীর্ঘ ছয় বছর পর আপনারা আবার একসাথে ফ্যাসিস্ট মুক্ত বাংলাদেশে একত্রিত হতে পেরেছেন। সেজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদ বিরোধী সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছেন এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসকদের নির্মম ভয়াবহ দমনীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছেন তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা। আমি চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও আমি সবসময় আপনাদের পাশেই আছি।
লন্ডনে নিজের ছেলে তারেক রহমানের বাসায় লন্ডন ক্লিনিকের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে বেগম খালেদা জিয়া চিকিৎসাধীন আছেন। গত ৭ জানুয়ারি তাকে কুয়েতের আমিরের পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে লন্ডন নিয়ে লন্ডন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তারেক রহমান বাসায় চিকিৎসার নেয়ার জন্য ছাড়পত্র দেয়।
বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘ দীর্ঘ ৬ বছর পর নেতৃবৃন্দ আবার একসাথে ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশে একত্রীত হয়েছে। সেজন্য আল্লাহর কাছে হাজার শুকরিয়া আদায় করছি। দীর্ঘ ফ্যাসিবাদী বিরোধী সংগ্রামে যারা শহীদ হয়েছে এবং সম্প্রতি জুলাই-আগস্টের ফ্যাসিবাদী শাসনের নির্মম ভয়াবহ দমননীতির কারণে গণহত্যায় যারা শহীদ হয়েছে তাদের প্রতি আমি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। যারা আহত হয়েছেন তাদের প্রতি জানাচ্ছি আন্তরিক সমবেদনা।”
‘ আমি চিকিৎসার কারণে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলেও আমি সব সময় আপনাদের পাশেই আছি। দীর্ঘ ১৫ বছর গণতন্ত্রের জন্য, আমার মুক্তির জন্য আপনারা যে নিরন্তর সংগ্রাম করেছেন এবং আমাদের অসংখ্য সহকর্মী প্রাণ দিয়েছে, জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং প্রায় সোয়া লক্ষ মিথ্যা মামলায় জর্জরিত হয়েছেন এখনো তারা আদালতের বারান্দায় ন্যায় বিচার পাবার আশায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনাদের শুধু দল নয় জাতি চিরকাল স্মরণ রাখবে।” ২০১৮ সালে ৪ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর লা মেরিডিয়ান হোটেল বিএনপির সর্বশেষ বর্ধিত সভা হয় যেখানে খালেদা জিয়া সভাপতিত্ব করেছিলেন।
‘ন্যুনতম সংস্কার করে দ্রুত নির্বাচনই জনপ্রত্যাশা’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘ দেশ আজ এক সংকট সময় অতিক্রম করছে। আপনাদের এবং ছাত্রদের সমন্বিত আন্দোলনের ফলে ফ্যাসিস্ট শাসকেরা বিদায় নিয়েছে। একটা অন্তবর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাদের কাছে জনগনের প্রত্যাশা রাষ্ট্র মেরামতের ন্যুনতম সংস্কার দ্রুত সম্পন্ন করে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার জন্য সকলের কাছে একটা গ্রহনযোগ্য নির্বাচন সম্পন্ন করা।’