৪ প্রকৌশলী ও ২ ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
এলজিইডির দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক

এলজিইডির দুর্নীতি তদন্তে মাঠে নেমেছে দুদক। দুদকের উপপরিচালক আজিজুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের তদন্ত টিম গঠন করা হয়েছে। সাবেক প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান, আলী আকতার হোসেন, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মঞ্জুর আলী, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ এর বিরুদ্ধে শত শত কোটি টাকার দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ জমা পড়ে দুদকে। এছাড়াও গত ৫ আগস্টের পর এলজিইডিতে নিয়োগ,বদলী,প্রকল্প পরিচালক নিয়োগে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ আমলে নিয়ে এবং চলমান দুর্নীতি তদন্তে কাজ করছে দুদক।
জানা গেছে ২০১০ সাল থেকে অদ্যাবধি যত নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি ও পদায়ন হয়েছে তার কপি চেয়ে বর্তমান প্রধান প্রকৌশলী আবদুর রশিদ মিয়াকে চিঠি দিয়েছে দুদকের টিম। আজ সোমবারের (২৮ এপ্রিল) মধ্যে সকল ডকুমেন্ট দুদকে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিবাদ হাসিনা সরকারের পতনের পর নির্বাহী প্রকৌশলী, উপজেলা প্রকৌশলী, সহকারী প্রকৌশলী ও উপসহকারী প্রকৌশলীসহ নানা পদে যে-সব বদলি ও পদায়ন করা হয়েছে তারও তথ্য চেয়েছে দুদক।
আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে নিবার্চন: সিইসি
জানা গেছে, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মঞ্জুর আলী, নির্বাহী প্রকৌশলী আবদুর রউফ ও সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী (প্রশাসন) শফিকুল ইসলাম এসব বদলি বাণিজ্যে জড়িত। গত ৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধান প্রকৌশলী আলী আকতার হোসেনকে জিম্মি করে একচেটিয়া বদলি বাণিজ্য করেন তারা। এছাড়াও মঞ্জুর আলীর চাকরির বয়স ৬ মাসের কম থাকলেও মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে তিনি প্রকল্প পরিচালক হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। যা বেআইনি। তিনি প্রকল্প পরিচালক হয়েই ২ থেকে ৩ শ জনকে নিয়োগ দিয়েছেন। এসব নিয়োগেও মোটা অংকের আর্থিক লেনদেন হয়েছে বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সাবেক এপিএস মোয়াজ্জেম হোসেনসহ কয়েকজন উপদেষ্টার ব্যক্তিগত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি খবর গণমাধ্যম বেরিয়ে আসে। জানা গেছে এলজিইডিতে সবচেয়ে বেশি তদবির বাণিজ্য করেছেন মোয়াজ্জেম হোসেন। তার কারণে এলজিইডিতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কোন বদলি বা শাস্তি হয়নি। ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও তাজুল ইসলামের দোসররা এখনও বহাল তবিয়তে রয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের পরিচালক, গুরুত্বপূর্ণ সকল জেলায় ফ্যাসিবাদের কর্মকর্তারা বীর দর্পে চাকরি করে যাচ্ছে। পুলিশ ও প্রশাসনসহ সকল পর্যায়ে ফ্যাসিবাদের দোসরদের পরিবর্তন করা হলেও এলজিইডিতে পরিবর্তনের ছোঁয়া লাগেনি। ফলে বিগত দিন যারা বঞ্চিত ছিলেন তাদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আরও পড়ুন: ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন হজযাত্রীরা
এদিকে টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলায় দুটি রাস্তা উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) চার প্রকৌশলী এবং দুই ঠিকাদারের বিরুদ্ধে দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ রবিবার টাঙ্গাইল জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. বাসেদ আলী টাঙ্গাইলের সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে মামলা দুটি দায়ের করেন। দণ্ডবিধির ৪০৯, ৪২০, ১০৯ ধারাসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে।
একটি মামলার আসামিরা হলেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফ্রেন্ডস কনস্ট্রাকশনের স্বত্বাধিকারী শহীদুর রহমান খান, এলজিইডির টাঙ্গাইলের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী (বর্তমানে এলজিইডি প্রধান কার্যালয়ের মনিটরিং ও মূল্যায়ন শাখায় কর্মরত) রফিকুল ইসলাম, নাগরপুরের সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান (বর্তমানে বিদেশে শিক্ষা ছুটিতে), একই উপজেলার উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম খান এবং মাইনুল হক (বর্তমানে ঘাটাইলে কর্মরত)।
অপর মামলায় আসামি করা হয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স সৈয়দ মজিবর রহমানের স্বত্বাধিকারী সৈয়দ মজিবর রহমান এবং এলজিইডির টাঙ্গাইলের সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম, নাগরপুরের সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান ও উপসহকারী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম খানকে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ময়মনসিংহ রিজিওনাল রুরাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এমআরআরআইডিপি) প্রকল্পের আওতায় নাগরপুরের তেবাড়িয়া জিসি-দপ্তিয়র ইউপিসি অফিস সড়কে বিসি দ্বারা উন্নয়ন কাজে ডাব্লিউবিএম ও সাববেইজের ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫০৯ টাকার কাজ কম করা হয়। এছাড়া, ৭৫ মিটার সড়কের কোনো কাজ না করেই ৩ লাখ ৫৮ হাজার ০৩৬ টাকা অর্থাৎ মোট ১০ লাখ ৯ হাজার ৫৪৫ টাকা আত্মসাৎ করা হয়। একই রাস্তায় প্রাইম কোট এবং ২৫ এমএম থিক কমপ্যাকটেড ডেন্স কার্পেটিংয়ের কোনো কাজ না করেই পরস্পর যোগসাজশে ৩১ লাখ ১ হাজার ৫৯১ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
অপরদিকে, এমআরআরআইডিপি প্রকল্পের আওতায় নাগরপুরের সিংজোড়া-গয়হাটা (ভাররা জিসি-সলিমাবাদ আরডিএস ভায়া গয়হাটা ইউপি) ১১০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সড়কে বিসি সার্ফেস উন্নয়ন কাজে প্রাইম কোট এবং ২৫ এমএম ঠিক কমপ্যাকটেড ডেন্স কার্পেটিংয়ের কোনো কাজ না করেই ২১ লাখ ৫৭ হাজার ৫১০ টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
টাঙ্গাইল জেলা দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ের উপপরিচালক ফখরুল ইসলাম জানান, রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে গত ২০ এপ্রিল একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযান চালানো হয়। এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী, নাগরপুরের উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী, প্রকল্প সংশ্লিষ্ট উপসহকারী প্রকৌশলী, বর্তমানে কর্মরত উপজেলা প্রকৌশলীসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই অভিযান পরিচালিত হয়। প্রকল্পের বাস্তবায়ন দেখানো রাস্তাটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে নিরপেক্ষ প্রকৌশলী দ্বারা পরিমাপ গ্রহণ করা হয়।
তিনি বলেন, তদন্তে কাজ না করেই পরস্পর যোগসাজশে বিল উত্তোলন করে আত্মসাৎ করার অভিযোগ প্রাথমিকভাবে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রমাণিত হয়েছে।