বঞ্চিতদের ক্ষোভ হতাশা বাড়ছে

অতিরিক্ত আইজিপি পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ

Sanchoy Biswas
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:৪০ অপরাহ্ন, ১৯ মে ২০২৫ | আপডেট: ৮:০৫ পূর্বাহ্ন, ১২ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

বাংলাদেশ পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি পদোন্নতিতে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের সময়ে বঞ্চিত ও বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের সুপারসিডেড করে সুবিধাভোগী কয়েকজনকে পদোন্নতির খবরে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সমর্থন করা কর্মকর্তাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের পুলিশ এক শাখার উপসচিব মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনে সোমবার ১২ পুলিশ কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি প্রদান করা হয়। 

আরও পড়ুন: ৮ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সাত্তারের দুর্নীতির অভিযোগ দায়িত্বজ্ঞানহীন: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, গত ৮ মে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সুপিরিয়র  সিলেকশন বোর্ডের  মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১২ জন অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। প্রধান উপদেষ্টা সুপিরিয়র ইলেকশন বোর্ডের সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। এরপর সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পদোন্নতি সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে। 

পদোন্নতি প্রাপ্তরা হলেন এসবির চলতি দায়িত্ব অতিরিক্ত আইজিপি গোলাম রসুল, টেলিকমের চলতে দায়িত্ব অতিরিক্ত আইজিপি আওলাদ হোসেন, পুলিশ সদর দপ্তরের চলতি দায়িত্ব অতিরিক্ত আইজিপি আকরাম হোসেন, সিএমপি কমিশনার ডিআইজি হাসিব আজিজ, শিল্প পুলিশের গাজী জসীমউদ্দীন,পুলিশ সদর দপ্তরের চলতি দায়িত্ব আইজিপি আবু নাসের মোহাম্মদ খালেদ, সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার রেজাউল করিম, পুলিশ সদর দপ্তরের  খন্ধকার রফিকুল ইসলাম পিবিআই প্রধান ,মোস্তফা কামাল পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি চলতি দায়িত্ব মোসলেহ  উদ্দিন, সিআইডির প্রধান  ছিবগাতুল্লাহ, কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালের  তত্ত্বাবধায়ক সরদার নুরুল আমিন। পদোন্নতির এই প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পরই পুলিশের সিনিয়র কর্মকর্তাদের মাঝে শুরু হয় নানা গুঞ্জন। 

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

বিশেষ করে বিগত সরকারের সময়ে বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়া আর্মড পুলিশের ডিআইজি আলী হোসেন ফকির ও সারদা পুলিশ অ্যাকাডেমির ডিআইজি ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান কে অতিরিক্ত আইজিপি পদোন্নতি প্রদানে বঞ্চিত করায় নানা আলোচনা চলছে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে এই দুই কর্মকর্তাকে পুলিশ সুপার থেকে বাধ্যতামূলক অবসরের প্রদান করা হয়। সরদার নুরুল আমিন ও রেজাউল করিমের আগে পুলিশের গ্রেডেশন অনুযায়ী সিনিওরিটি  থাকলেও রহস্যজনক কারণে তাদের বাদ দেয় সর্বত্র আলোচনায় এসেছে। 

পুলিশের বিসিএস ১৫ তম ব্যাচের মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ও পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডক্টর নাজমুল করিম খান, আলী হোসেন ফকির ও ব্যারিস্টার জিল্লুর রহমান পুলিশ বিভাগ দক্ষ মেধাবী কর্মকর্তা হিসেবে পরিচিত।  অতিরিক্ত আইজিপি পদোন্নতির ক্ষেত্রে তাদের বঞ্চিত করা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে।  অভিযোগ উঠেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধা ভোগি পদোন্নতি প্রাপ্তদের কেউ কেউ নির্বাচনকালীন পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত ডিআইজি, র‍্যাবের কমান্ডিং অফিসার, ডিএমপি, স্পেশাল ব্রাঞ্চও সিআইডির মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে ঢাকায় কর্মরত ছিলেন। পদোন্নতিবাত্য দুজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাঠ পর্যায়ে চাকুরিকালীন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে প্রতিবেদনও দিয়েছে। তাদের নামে নানা কেলেঙ্কারির অভিযোগও আছে।

অতিরিক্ত আইজিপি পদোন্নতিতে জৈষ্ঠতার লঙ্ঘনের বিষয়ে পুলিশের সাবেক আইজিপি নুরুল হুদা বলেন, পদোন্নতিতে সিনিয়র কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রে মেধা ও জ্যেষ্ঠতাকে গুরুত্ব সহকারে দেখা হয়। এক ক্ষেত্রে সুপিরিয়র  সিলেকশন বোর্ড বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বঞ্চিত মেধাবী কর্মকর্তাদের বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের মাধ্যমে এস এস বি তে অগ্রাধিকার হিসেবে পাঠানো উচিত।

এদিকে বিসিএস ক্যাডারের বাংলাদেশ পুলিশ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন  সভাপতি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ডক্টর নাজমুল করিম খানের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি জানান বিগত ফেসিস্ট সরকারের আমলে যারা বঞ্চিত বাধ্যতামূলক অবসরে যাওয়ার শিকার হয়েছে এবং যারা জুলাই আগস্ট আন্দোলনে সমর্থনে ভূমিকা রেখেছে মেধা দক্ষতা যোগ্যতা সিনিয়র একটি অনুযায়ী তাদের অগ্রাধিকার দেয়া উচিত। বিশেষ করে আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর জনারোসে পালিয়ে যাওয়া পুলিশকে কাজে ফিরিয়ে আনা ও স্বৈরাচারীর দোসরদের ইন্দনে পুলিশে কর্ম বিরতি সহ বিদ্রোহের চেষ্টা প্রতিরোধ করতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা এগিয়ে এসে পুলিশকে সু সংঘটিত করে বর্তমান অবস্থায় নিয়ে এসেছেন তাদের সঠিক মূল্যায়ন করা উচিত।