জুলাই গণহত্যার দোষ স্বীকার করে সাবেক আইজিপি মামুন রাজসাক্ষী হলেন

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ১:১৪ অপরাহ্ন, ১০ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৫:১১ অপরাহ্ন, ১০ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায় স্বীকার করেছেন সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন। ট্রাইব্যুনালে তিনি বলেছেন, আমি জুলাই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।

আরও পড়ুন: বাধ্যতামূলক অবসরে ডিএমপির সাবেক ৯ ওসি

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন— বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।

এই আদেশের মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে বিচার শুরু হলো। এর আগে, আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ থেকে অব্যাহতির আবেদন করা হয়েছিল। কিন্তু আদালত সেই আবেদন খারিজ করে দেয়।

আরও পড়ুন: হাসিনার প্রিজম দিয়ে বাংলাদেশকে দেখায় ভারতকে মূল্য দিতে হচ্ছে

মামলার অন্য দুই আসামি হলেন—সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন।

আদালতে প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান বর্তমানে পলাতক। তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

অপরদিকে, গ্রেফতার হয়ে কারাগারে থাকা তৃতীয় আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে আইনজীবী জায়েদ বিন আমজাদ শুনানি করেন।

গত ১ জুলাই এই মামলার অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত শুনানি শেষ করে ট্রাইব্যুনাল। সেদিন প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বক্তব্য দেন। এরপর আদালত ৭ জুলাই আদেশের জন্য ১০ জুলাই তারিখ নির্ধারণ করে।

অভিযোগপত্রে শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং চৌধুরী মামুনের বিরুদ্ধে পাঁচটি অভিযোগ আনা হয়েছে।

১ জুন এই পাঁচটি অভিযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে নতুন করে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়।

এরপর ১৬ জুন আদালত এক সপ্তাহের মধ্যে তাদের আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন এবং পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আদেশ দেন। ১৭ জুন ট্রাইব্যুনালের রেজিস্ট্রার এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা আদালতে হাজির না হলে তাদের অনুপস্থিতিতেই বিচার চলবে। এই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য ২৪ জুন তারিখ ধার্য করা হয়েছে।

মামলায় অভিযোগ গঠন সংক্রান্ত শুনানিতে প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার ও মিজানুল ইসলামও অংশ নেন। তাদের মাধ্যমে শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ আদালতে পড়ে শোনানো হয়। এ সময় আদালত গণমাধ্যমে শুনানির বিষয়টি সম্প্রচারের অনুমতি দেয়।

এই মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, গত জুলাই-আগস্ট মাসে সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে তৎকালীন সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর ভূমিকা ছিল অমানবিক ও পরিকল্পিত।

তাদের বিরুদ্ধে গণহত্যা, রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড, গুম, নির্যাতন, ধর্ষণ এবং শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারীদের উপর দমনপীড়নের অভিযোগ আনা হয়েছে।

প্রসিকিউশনের ভাষ্যমতে, অভিযুক্তরা এসব মানবতাবিরোধী অপরাধের নির্দেশদাতা, পরিকল্পনাকারী এবং প্রত্যক্ষভাবে দায়ী।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এই মামলাটি বর্তমানে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবতাবিরোধী অপরাধবিষয়ক বিচারিক কার্যক্রম হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।