আন্দোলন প্রত্যাহার করে গণক্ষমা চেয়েও রক্ষা নেই

এনবিআরে আন্দোলনকারীদের গণ বদলি, বিদেশ যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা, মামলার প্রস্তুতি

Sadek Ali
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৬:৪৯ অপরাহ্ন, ১২ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ২:১০ অপরাহ্ন, ১২ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআরে আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ধীরে ধীরে কঠোর একশনে যাচ্ছে সরকার। আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে চেয়ারম্যান এর কাছে গণক্ষমা প্রার্থনা করেও রেহাই নেই আন্দোলনকারীদের। বাধ্যতামূলক অবসর বরখাস্ত, সক্রিয় কর্মকর্তা ও স্বজনদের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান, মামলার প্রস্তুতি সহ বিদেশ যাত্রা নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এতে করে  দেশের অভ্যন্তরীণ জাতীয় অর্থ সংগ্রহে একমাত্র সরকারি দপ্তর এনবিআরে অর্থ বছরের শুরুতে নতুন করে  অস্থিরতায় আশঙ্কা রয়েছে। ভুক্তভোগী কর্মকর্তারা তাকিয়ে আছে প্রধান উপদেষ্টার করা জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বে ৫ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটির পদক্ষেপের  অপেক্ষায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংস্কার কর্মসূচির আওতায়  জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও অভ্যন্তরী সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে সরকার নতুন দুটি বিভাগ গঠন করে। গত মে মাস থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাস্টম ও টেক্স বিভাগের কর্মকর্তারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এনবিআর সংস্কার কমিটি নামে অধ্যাদেশ  বাতিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলনের একপর্যায়ে ট্যাক্স ক্যাডারের কর্মকর্তা এনবিআর এর  বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খানের পদত্যাগ ও দাবি করা হয়। সর্বশেষ সারাদেশে কমপ্লিট শাটডাউনে অচল হয়ে পড়ে দেশের আমদানি রপ্তানি। এক রকম বাধ্য হয়েই সরকার ২৯ জুন উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আমদানি রপ্তানি ও বৈদেশিক বাণিজ্য চলমান রাখার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চাকরিকে অত্যাবশ্যকীয় ঘোষণা করে। 

আরও পড়ুন: ৮ উপদেষ্টার বিরুদ্ধে সাত্তারের দুর্নীতির অভিযোগ দায়িত্বজ্ঞানহীন: মন্ত্রিপরিষদ সচিব

জ্বালানি উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খানকে প্রধান করে এনবিআর এর সমস্যা সমাধানে পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটি গঠন করে।  রাতেই ব্যবসায়ী সাথে এক সংলাপে আন্দোলনরত কর্মচারীরা তাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দেয়। এনবিআরের দুই শতাধিক কর্মকর্তা সংস্থাটির চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খানের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন। চেয়ারম্যানের সাথে সাক্ষাৎ করে ২৮ থেকে ৪০ ব্যাচের কর্মকর্তারা এবং সিনিয়র কর্মকর্তারাও দুঃখ প্রকাশ করেন। 

একাধিক বৈঠকে চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান খান নিজ দপ্তরে কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্য করে বলেছেন, যা কিছু হয়েছে সব কিছু ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রীয় স্বার্থে, দেশের স্বার্থে সবাই একসাথে কাজ করতে হবে। এদিকে আন্দোলনের নামে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র ছিল-গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এমন তথ্য সরবরাহ করে সরকারকে। জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে ৮৪৫ পৃষ্ঠার মেসেজ আদান-প্রদানের বিশদ তথ্য এখন গোয়েন্দা সংস্থার হাতে রয়েছে বলে জানা গেছে। এরপর গত কয়েকদিনে এখন পর্যন্ত আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ১৬ জন কর্মকর্তার অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। এছাড়া আন্দোলনে উস্কানি দেওয়ার তথ্য-প্রমাণ পাওয়ায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তে এনবিআরের তিনজন সদস্য ও একজন কমিশনারকে বাধ্যতামূলক অবসর দেওয়া হয়। একইসঙ্গে কাস্টম হাউস বন্ধ রেখে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম ব্যাহত ও রাজস্ব আহরণে ব্যাঘাত ঘটানোর দায়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

আরও পড়ুন: ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তপ্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

এদিকে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিত্তিতে পদ্মা শতাধিক কাস্টমস ও টেক্স কর্মকর্তার বিদেশ যাত্রা নিষেধাজ্ঞার সুপারিশের প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারী কর্মকর্তাদের বিদেশ যাত্রা নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও তাদের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের ওপর নজরদারি করা হচ্ছে। তাদের পরিবারের সদস্যদের সম্পদের অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের অর্ধশত তালিকাভুক্ত কর্মকর্তার মধ্যে ৩৬ জনকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে পরিবারের সদস্যসহ নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করেছে। এছাড়াও আন্দোলনকারীদের শাস্তিমূলক গণবদলি। গত ১০ জুলাই ৮৭ জন যুগ্ম কমিশনারকে দুটি পৃথক প্রজ্ঞাপনে বদলি করা হয়েছে। আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া মোর্শেদ উদ্দিন খান কে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায়, যুগ্ম কমিশনার মোনালিসা শাহরিন সুস্মিতাকে নোয়াখালী জেলায়, মেজবাহ উদ্দিনকে ফরিদপুরে, ইলোরা পারভিন কে কুমিল্লায়, আসমাউল হুসনা কে নারায়ণগঞ্জে, তানিয়া সুলতানা কে নরসিংদীতে, সরদার আবু হেলালকে কক্সবাজারে, মারুফুল আবেদীন কে রংপুরে, নার্গিস আক্তার কে ফরিদপুরে, আসাদুজ্জামান মাকসুদা ইসলামকে চট্টগ্রাম বদলি করা হয়েছে।  

এনবিআর সূত্র জানায়, তিনশ এক সদস্যের এনবিআর সংগ্রাম কমিটির নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তাদের বদলি সহ  নানা ধরনের হয়রানি করার অভিযোগ উঠেছে। আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের সাথে আলোচনা করে জানা যায় সরকারের গঠিত উপদেষ্টা কমিটির প্রতি তাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। দেশের স্বার্থে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড পুনর্গঠনে কর্মকর্তারা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে কাজ করতে প্রস্তুত আছে। উপদেষ্টা কমিটির প্রথম বৈঠকে তারা বক্তব্য দিয়েছে।  তাদের পক্ষ থেকে একটি সুপারিশ মালা তৈরীর কাজ চলছে। এজন্য একটি কাজ করছে। অতিরিক্ত কর কমিশনার ও উপ- কমিশনার পৃথক দুটি বড় বদলি প্রস্তুত করা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে প্রজ্ঞাপন হতে পারে। এনবিআরের কাস্টমস আয়কর কর্মকর্তাদের মাঝে কাজের চেয়ে এখন বদলি মামলা ও হয়রানিসহ নানা আতঙ্ক কাজ করছে।