হত্যাকাণ্ডের বীভৎস ভিডিও ভাইরাল করে দেশজুড়ে উত্তেজনা

হঠাৎ শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার বিরুদ্ধে স্লোগানের উদ্দেশ্য কী

Sadek Ali
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ৯:১১ অপরাহ্ন, ১২ জুলাই ২০২৫ | আপডেট: ৩:২৩ অপরাহ্ন, ১২ জুলাই ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

গত বুধবার সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে দিনের বেলায় পুরান ঢাকার মিটফোর্ট হাসপাতালের সামনে ভাঙ্গারী ব্যবসায়ী সোহাগকে ধরে নিয়ে কুপিয়ে পিটিয়ে পাথর মেরে মৃত্যু নিশ্চিত করে। সাম্প্রতিককালের নিষ্ঠুরতা এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় নিহতের বোন বাদী হয়ে ১৬ জনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় কুত্তা মামলা দায়ের করে। ৫ আগস্ট পরবর্তী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ডিলে ডালা টহল পরিস্থিতি এই হত্যাকাণ্ডেরও তেমন কোন পুলিশি তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।  প্রকাশ্যে দিনের বেলায় শতশত মানুষের সামনে এই হত্যাকাণ্ড ঘটলেও তাকে বাঁচাতে কেউ এগিয়ে আসেনি। পুলিশ ও স্থানীয় তদন্তে প্রকাশ স্থানীয় চুরি মালামাল ও তামা তারের ব্যবসা নিয়ে দুই দলের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষ তাকে আদিম অসভ্য কায়দায় এই হত্যাকান্ড ঘটায়।

বুধবারে হত্যাকান্ড ঘটলেও জনমনে বা পুরান ঢাকার ওই মহল্লাতেও প্রতিক্রিয়ার দেখা যায়নি। শুক্রবার বিকাল থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পৈশাচিক এই হত্যাকাণ্ডের ভিডিও ভাইরাল হয়। এর পরই গর্জে ওঠে দেশের প্রধান প্রধান শিক্ষাঙ্গন ও রাজনৈতিক দলগুলো। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বুয়েট জগন্নাথসহ দেশজুড়ে ছাত্র জনতার নামে একদল লোক হত্যাকাণ্ডের বিচার চেয়ে বিক্ষোভে নামে। কিন্তু বিক্ষোভ মিছিলে হত্যাকাণ্ডের বিচারের চেয়ে দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দলের বিশ্ব নেতার বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকে। মিছিলের স্লোগানে চরমভাবে চরিত্রহনন করা হয় রাজনৈতিক নেতাকে। মিছিল স্লোগানের ভিডিও কপি করে ভর্তি ছড়িয়ে দেয়া হয় দেশ বিদেশে। সামাজিক প্রচার মাধ্যমে ভিডিও ক্লিপ ভাইরাল করা হয়। জনমনে এতে সন্দেহের তৈরি হয় পুরাতন এই ব্যবসায়ী হত্যাকাণ্ডের বিচার তাদের দাবি নাকি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যেই ভিডিও ভাইরাল করে উত্তেজনা তৈরি করে এক যুগে সারাদেশে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন। হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় খুনিদের গ্রেপ্তার ও হত্যাকাণ্ডের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মিডফোর্ড হাসপাতালে সামনের সার্বক্ষণিক পুলিশ টহল থাকে। প্রায় আধা ঘন্টা ধরে চলা হত্যাকাণ্ডের সময় কেউ এগিয়ে আসেনি। হত্যাকাণ্ডের পর খুনিদের গ্রেফতারের পুলিশি কোন তৎপরতা নেই। এমনকি নিহত এই ব্যবসায়ীর পরিবারের সদস্যদের সান্তনা দিতেও কেউ যায়নি। তাহলে শীর্ষ রাজনৈতিক নেতার চরিত্রহননে অশ্লীল স্লোগান দেওয়ার উদ্দেশ্য কী। একটি হত্যাকাণ্ডকে পুঁজি করে পরিকল্পিত ভাবে এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতির হোতা কারা।

আরও পড়ুন: ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

ঘটনা পরিক্রমায় আলোচনা করে জানা যায় একটি বিবেকবান রাজনৈতিক দল হিসেবে সাম্প্রতিককালে রাজধানী ঢাকার চকবাজারে সোহাগ হত্যাকাণ্ডে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি তীব্র প্রতিবাদ ও দৃষ্টামূলক শাস্তি দাবি করছে। এই ঘটনার সাথে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলার আলোকে আজীবন বহিষ্কারের মতো সর্বোচ্চ সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বর্তমান সরকারের কাছে এই হত্যাকাণ্ডের বিচারের জন্য দাবি জানিয়েছে।

বিএনপি মনে করে, যেকোনো অপরাধী- আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী, কোনো অপরাধীর দলীয় কোনো পরিচয় নেই। তার দলীয় পরিচয় অপ্রয়োজনীয় এবং তার অপরাধের সাথে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন: আনোয়ার হোসেন মঞ্জুকে বিদেশ যেতে দেয়া হয়নি

তবে আমাদের বেশ-কয়েকটি বিষয় গুরুত্বের সাথে লক্ষ্য রাখা দরকার :

(১) এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য ব্যবহার হচ্ছে কিনা? 

(২) জাতীয় নির্বাচনের পরিবেশকে বিঘ্নিত করার জন্য এই ঘটনাটিকে অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা?

(৩) দেশের অনত্র স্থানে সংগঠিত, যেমন- কুমিল্লায় মসজিদের ইমাম হত্যা, খুলনায় হত্যা ও রগকাটা; এমন হত্যাকাণ্ডের বিপরীতে আমাদের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর সমমানের কিনা? নাকি পক্ষপাতদুষ্টু?

(৪) প্রকাশ্য দিবালোকে অসংখ্য মানুষের সামনে, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার নিকটবর্তী অবস্থান থাকা সত্ত্বেও এই রূপ ঘটনার কোনো প্রতিরোধ না হওয়া কোনো প্রশ্নের উদ্রেক করে কিনা?

(৫) জনসম্মুখে এই রূপ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ এবং প্রতিরোধ ছাড়া বিনা বাঁধায় ভিডিও ধারণ কোনো ষড়যন্ত্রের বার্তা বহন করে কিনা?

(৬) মাত্র গুটিকয়েক সন্ত্রাসী দ্বারা প্রকাশ্যে এমন হত্যাকাণ্ড সংগঠিত হওয়ায়- এক বছর আগে সংগঠিত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সম্পূর্ণ বিপরীতে পুনরায় আইনের শাসন ধ্বংসের ষড়যন্ত্র কিনা?

(৭) সরকার পরিচালনার দায়িত্বে না থাকা সত্ত্বেও কোনো রাজনৈতিক দল ও নেতাকে দায়ী করে বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন জাতীয় নির্বাচনের জনআকাক্সক্ষাকে নস্যাৎ করার পরিকল্পনা কিনা?

(৮) দেশে সুস্থধারার রাজনীতি প্রতিষ্ঠার দৃঢ়তার বিরুদ্ধে পরিকল্পিত অপপ্রচারের মাধ্যমে আবারো ফ্যাসিস্ট হাসিনা ও আওয়ামী লীগের কণ্ঠস্বররের প্রতিধ্বনি শুনতে পাচ্ছি কিনা? 

(৯) শেষকথা, অপরাধীর জন্য কোনো অনুকম্পার সুযোগ নেই। পক্ষ অবলম্বনের প্রশ্নই উঠে না। এই রূপ অনমনীয় দৃঢ় পদক্ষেপকে স্বাগত না জানিয়ে পরিকল্পিতভাবে চরিত্র হনন; দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে কিনা?

(১০) ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং তাদের আইনী সহায়তা প্রদানের অঙ্গীকার থেকে আমাদের বিরত হবার সুযোগ নেই। সেটা সোহাগ আমাদের দলীয় কর্মী বলে নয় বরং দেশের একজন নাগরিক যিনি সন্ত্রাসের নির্মম শিকার।

হত্যাকাণ্ডের দ্রুত বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দ্রুত কার্যকর করার বিষয়ে দলীয় অবস্থান সুদৃঢ় এবং অপরিবর্তিত। 

কিন্তু এটা নিয়ে যারা রাজনৈতিক পরিবেশ নষ্ট এবং জাতীয় নির্বাচনকে বাধাগ্রস্থ ও অনিশ্চিত করতে চান এবং প্রকারন্তে ফ্যাসিবাদ উত্থানের পথ কারা সৃষ্টি করতে চান, তাদেরকে চিহ্নিত করা প্রয়োজন। 

শতবাধা অতিক্রম করে জনগণকে সাথে নিয়ে বাংলাদেশের মালিকানা বাংলাদেশের মানুষের কাছে ফেরত দেওয়াই একমাত্র অগ্রাধিকার। বিগত ১৭ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামে অর্জিত সফলতা ব্যর্থ করার সুযোগ নেই।

সামান্য কিছু রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রকারীর অপচেষ্টায় বাংলাদেশ ব্যর্থ হতে পারে না। যে তারুণ্য ফ্যাসিবাদের পতনে অগ্রসৈনিক ছিল, আজকে দেশের প্রয়োজনে তাদের সাথে আমাদের সকলকের ঐক্যবদ্ধ চেষ্টা যেকোনো মূল্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষা করবে। ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশে ষড়যন্ত্র কোনো বাধা হতে পারেনা।▫️