জাতীয় সরকার, শিবির ও সায়ের প্রসঙ্গ

নাহিদ ইসলামের স্ট্যাটাসে রাজনীতিতে নতুন বিতর্ক

Sadek Ali
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ২:৫১ অপরাহ্ন, ০১ অগাস্ট ২০২৫ | আপডেট: ৮:৫১ পূর্বাহ্ন, ০১ অগাস্ট ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

শেখ হাসিনার পতন ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে বহুধাবিভক্ত হয়েছে ফ্যাসিবাদ বিরোধী শক্তি। বিশেষ করে গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে অনুসরণ করে ছাত্রদের নতুন গঠনের পর থেকেই  রাজনীতিতে চলছে ঝড়। সর্বশেষ জাতীয় নাগরিক পার্টির নাহিদ ইসলামের বৃহস্পতিবার ভোরে এক ফেসবুক পোস্টের পর থেকে রাজনীতিতে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। 

 জুলকারনাইন সায়েররা 

আরও পড়ুন: আয়কর রিটার্নে ‘জিরো রিটার্ন’ নামে কোনো ব্যবস্থা নেই: এনবিআর

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গঠন ও এর নেতৃত্ব দেওয়া নাহিদ ইসলাম স্ট্যাটাসে ৫ অক্টোবরের আগে ও পড়ে ঘটে যাওয়া অনেক কিছু যাতে তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে জাতীয় সরকার গঠন নিয়ে তারেক রহমানের না, গণঅভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা শিবির নেতা সাদেক কাইয়ুম এর অবস্থান, ও আল জাজিরার প্রবাসী সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়েরর নানামুখী ষড়যন্ত্রের কথা তুলে ধরা হয়েছে।

ত বছর আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত সরকার ও বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের ভূমিকা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যে এবার নতুন তথ্য সামনে আনলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

আরও পড়ুন: ভোটকেন্দ্রে নিরাপত্তা জোরদার করতে সংগ্রহ করা হচ্ছে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা

বৃহস্পতিবার নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের বক্তব্যসহ তিনটি বিষয়ে কথা বলেন গণঅভ্যুত্থানে ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা নাহিদ।

‘জাতীয় সরকার প্রস্তাবনা নিয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্য সত্য নয়’

পোস্ট নাহিদ বলেন, ‘বিএনপি মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল সম্প্রতি একটা সাক্ষাৎকারে বলেছেন জাতীয় সরকারের কোনো প্রস্তাবনা ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের দেওয়া হয় নাই। তারা অন্য মাধ্যমে এ প্রস্তাবনা পেয়েছিল।’

নাহিদ জানান, ‘এই বক্তব্যটি সত্য নয়।’

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘গত ৫ অগাস্ট রাতের প্রেস ব্রিফিংয়ে আমরা বলেছিলাম আমরা অন্তর্বর্তীকালীন জাতীয় সরকার করতে চাই। সেই প্রেস ব্রিফিংয়ের পরে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের সাথে আমাদের ভার্চুয়াল মিটিং হয় সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। তারেক রহমান এ প্রস্তাবে সম্মত হননি এবং নাগরিক সমাজের সদস্যদের দিয়ে নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সাজেশন দেন। আমরা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কথা বলি প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে।’

নাহিদ আরও বলেন, ‘৭ অগাস্ট ভোরবেলা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলের বাসায় আমরা উনার সাথে অন্তর্বর্তী সরকার ও উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে আলোচনা করি। উপদেষ্টা পরিষদ শপথ নেবার আগে জনাব তারেক রহমানের সাথে আরেকটি মিটিং-এ প্রস্তাবিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যবৃন্দ নিয়ে আলোচনা/পর্যালোচনা হয়।’

 শিবির নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ

নাহিদ তার পোস্টে বলেন, ‘শিবির নেতা সাদিক কায়েম সম্প্রতি একটা টকশোতে বলেছেন ছাত্রশক্তির গঠনপ্রক্রিয়ায় শিবির যুক্ত ছিল, শিবিরের ইনস্ট্রাকশনে আমরা কাজ করতাম। এটা মিথ্যাচার।’

নাহিদ আরও বলেন, ‘ “গুরুবার আড্ডা” পাঠচক্রের সাথে জড়িত একটা অংশ এবং ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগ করা একটা অংশ মিলে ছাত্রশক্তি গঠিত হয়। সাথে জাবির একটা স্টাডি সার্কেলও যুক্ত হয়। একটা নতুন ছাত্র সংগঠন প্রতিষ্ঠার জন্য গুরুবার আড্ডা পাঠচক্রে দীর্ঘসময় ধরে কাজ করা হয়েছে। আমরা ক্যাম্পাসে আট বছর রাজনীতি করছি। ফলে প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সব সংগঠন ও নেতৃত্বকে আমরা চিনতাম এবং সকল পক্ষের সাথেই আমাদের যোগাযোগ ও সম্পর্ক ছিল। সেই কারণে ঢাবি শিবিরের সাথেও যোগাযোগ ছিল। যোগাযোগ, সম্পর্ক বা কখনো সহযোগিতা করা মানে এই না যে, তারা আমাদের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল।’

নাহিদ আরও বলেন, ‘সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিল না। কিন্তু ৫ অগাস্ট থেকে এই পরিচয় সে ব্যবহার করেছে। অভ্যুত্থানে শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কারণে সাদিক কাইয়ুমকে প্রেস ব্রিফিং এ বসার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু সাদিক কাইয়ুমরা অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে ঢালাও প্রচারণা করেছে, এই অভ্যুত্থান ঢাবি শিবিরই নেতৃত্ব দিয়েছে, আমরা সামনে শুধু পোস্টার ছিলাম। অভ্যুত্থানে শিবিরের ভূমিকা কেউ অস্বীকার করে নাই। কিন্তু এই অভ্যুত্থান শিবিরের একক নয়, শিবিরের ইনস্ট্রাকশন বা ডিরেকশনেও হয় নাই। আমরা সব পক্ষের সাথে যোগাযোগ করেই সিদ্ধান্ত নিতাম।’

 ২ আগস্ট রাতে সমন্বয়কদের চাপ সৃষ্টি

নাহিদ তার পোস্টে আরও জানান, ‘২ অগাস্ট, ২০২৪ রাতে জুলকারনাইন সায়েররা একটা আর্মি ক্যু করে সামরিক বাহিনীর এক অংশের হাতে ক্ষমতা দিতে চেয়েছিল। এ উদ্দেশ্যে কথিত সেইফ হাউজে থাকা ছাত্র সমন্বয়কদের চাপ প্রয়োগ করা হয়, থ্রেইট করা হয় যাতে সে রাতে ফেসবুকে তারা সরকার পতনের একদফা ঘোষণা করে আর আমাদের সাথে যাতে আর কোনো যোগাযোগ না রাখে।’

নাহিদ আরও জানান, ‘রিফাতদের বিভিন্ন লেখায় এ বিষয়ে বলা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল একদফার ঘোষণা মাঠ থেকে জনগণের মধ্য থেকে দিতে হবে। আর যারা এভাবে চাপ প্রয়োগ করছে তাদের উদ্দেশ্য সন্দেহজনক। আমাদের ভেতর প্রথম থেকে এটা স্পষ্ট ছিল যে ক্ষমতা কোনোভাবে সেনাবাহিনী বা সেনাবাহিনী সমর্থিত কোনো গ্রুপের কাছে দেওয়া যাবে না। এতে আরেকটা এক-এগারো হবে এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হবে এবং আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এটাকে জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত গণঅভ্যুত্থান হিসেবে সফল করতে হবে এবং রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সামনে আগাতে হবে। ৫ অগাস্ট থেকে আমরা এ অবস্থান ব্যক্ত করে গিয়েছি।’

ওই পোস্টে নাহিদ আরও বলেন, ‘সায়েররা ৫ অগাস্টের পর বারবার চেষ্টা করেছে আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা নেতৃত্ব দাঁড় করাতে। সেক্ষেত্রে সাদিক কায়েমদের ব্যবহার করেছে এবং তারা ব্যবহৃতও হয়েছে। সায়ের গংদের এ চেষ্টা অব্যাহত আছে। কল রেকর্ড ফাঁস, সার্ভাইলেন্স, চরিত্রহনন, অপপ্রচার, প্রোপাগান্ডা হেন কোনো কাজ নাই হচ্ছে না। বাংলাদেশে সিটিং মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে যত অপপ্রচার হচ্ছে এ দেশের ইতিহাসে এরকম কখনো হয়েছে কিনা জানা নাই। কিন্তু মিথ্যার উপর দিয়ে বেশিদিন টেকা যায় না। এরাও টিকবে না।’