মা মাছ রক্ষায় নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা বন্ধের আহ্বান উপদেষ্টার

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার মা মাছ রক্ষায় নিষিদ্ধ সময়ে মাছ ধরা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “নদী ও সাগরে যেসব মাছ পাওয়া যায়, তা প্রাকৃতিক সম্পদ। এগুলো যদি এখনই রক্ষা না করি, ভবিষ্যতে মাছ সংকটে পড়তে হবে।”
মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আব্দুস সালাম হলে বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির ১২তম জাতীয় সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
আরও পড়ুন: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা জানালেন ভারতের সঙ্গে শুধুমাত্র একটি চুক্তি বাতিল হয়েছে
উপদেষ্টা বলেন, “মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে আইন মানলে জেলেরা নিজেরাই লাভবান হবেন। জেলেরা দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ জনগোষ্ঠী—তাদের অবদানেই আমরা মাছ খেতে পারি।”
তিনি আরও বলেন, “মাছ ধরা নিষিদ্ধ সময়ে জেলেদের জন্য ভিজিএফ চালের পরিমাণ বাড়ানোর বিষয়ে খাদ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয়ে অনুরোধ করা হয়েছে। ভবিষ্যতে অন্তত ৫০ কেজি চাল দেওয়া যায় কিনা, সেই লক্ষ্যে কাজ চলছে। পাশাপাশি আর্থিক সহায়তা যুক্ত করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।”
আরও পড়ুন: নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ প্রশাসনের দাবি
ফরিদা আখতার বলেন, “দাদন প্রথা জেলেদের দারিদ্র্যের চক্রে আটকে রাখে। এই সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ ব্যাংক প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।” তবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, স্বল্পসুদের বিকল্প পদ্ধতিতে জেলেদের ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে, যাতে দাদনের উপর নির্ভর করতে না হয়।
তিনি বলেন, “প্রতিটি দুর্যোগে বহু জেলে নিখোঁজ হন বা প্রাণ হারান, কিন্তু তাদের পরিবার জানতেই পারে না তারা বেঁচে আছেন কি না। এই সমস্যা সমাধানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে।”
নদীতে চর জেগে ওঠায় মাছের প্রজনন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের নিজস্ব ড্রেজিং সক্ষমতা না থাকলেও নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো হয়েছে। তারা শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং করবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন।”
উপদেষ্টা বলেন, প্রতিটি দুর্যোগে অনেক জেলে নিখোঁজ হন বা প্রাণ হারান। কিন্তু তাদের স্বজনরা জানেন না—তারা জীবিত না মৃত। ফলে এসব পরিবার কোনো সহায়তাও নিতে পারেন না। তিনি আরও বলেন, এই সমস্যা সমাধানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা চলছে, যাতে নিখোঁজ জেলেদের পরিবারের সদস্যদের জন্য একটি কার্যকর সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায়।
নদীতে চর জেগে ওঠায় মাছের প্রজনন ও চলাচলে বাধা সৃষ্টি হচ্ছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমাদের নিজস্ব ড্রেজিং সক্ষমতা না থাকলেও নৌপরিবহন ও পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছি। তারা আশ্বস্ত করেছেন যে, শুষ্ক মৌসুমে প্রয়োজনীয় ড্রেজিং কার্যক্রম সম্পন্ন করবেন।
সম্মেলনে বক্তারা মৎস্যজীবীদের ন্যায্য অধিকার ও কল্যাণ নিশ্চিতের লক্ষ্যে ছয় দফা দাবি উত্থাপন করেছেন। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— ২০১৩ সালের পরিপত্র বাতিল করে ২০০৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহাল করা, খাদ্য ও অন্যান্য ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে তালিকা ও মাস্টার রোলে মৎস্যজীবী প্রতিনিধির স্বাক্ষর নিশ্চিত করা, মৎস্যজীবীদের নামে একটি বিশেষায়িত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করা, ভিজিএফ সহায়তা ৪০ কেজির পরিবর্তে ৬০ কেজি চাল এবং নগদ দুই হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া, নিষেধাজ্ঞাকালীন সময়ে নদীতে মাছ ধরতে গিয়ে কোনো জেলে মৃত্যুবরণ করলে তার পরিবারকে এককালীন পাঁচ লাখ টাকা পুনর্বাসন সহায়তা প্রদান, এবং কোস্টগার্ড, নৌ–পুলিশ ও মৎস্য বিভাগের অভিযানে মৎস্যজীবী সমিতির মনোনীত মাঝিকে অন্তর্ভুক্ত করা। তরা বলেন, এসব দাবি বাস্তবায়িত হলে জেলে সম্প্রদায়ের জীবনমান উন্নত হবে এবং তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।
বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসরাইল খলিল পন্ডিতের সভাপতিত্বে এসময় আরো বক্তৃতা করেন মৎস্য অধিদপ্তরের পরিচালক ড. মো. মোতালেব হোসেন, বিজিবি ট্রাইব্যুনালের সহকারী এটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এম হেলাল উদ্দিন, বরিশাল জজ কোর্টের এডিশনাল পিপি অ্যাডভোকেট মো. হুমায়ুন কবির, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মোসাদেক হোসেন স্বপন, বাংলাদেশ সংযুক্ত শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক মোকাদ্দেম হোসেন, বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মো. বাবুল মীর, জেলে সমিতির সদস্য তাছলিমা বেগম। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত বাংলাদেশ ক্ষুদ্র মৎস্যজীবী জেলে সমিতির সদস্যবৃন্দ এসময় উপস্থিত ছিলেন।