সামিরা-আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ খুনিদের বিচার দাবি

সালমান শাহ ভক্তদের বিক্ষোভ, স্লোগানে মুখর প্রেসক্লাব চত্বর

Sadek Ali
বাংলাবাজার ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭:৫৩ অপরাহ্ন, ০১ নভেম্বর ২০২৫ | আপডেট: ৮:০০ অপরাহ্ন, ০১ নভেম্বর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

 ২৯ বছর আগে রহস্যজনক মৃত্যুবরণ করা জনপ্রিয় চিত্রনায়ক সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের বিচার এখন নতুন মোড় নিচ্ছে। ২৯ বছর পর্যন্ত আত্মহত্যার বিষয়টি এখন আদালতের নির্দেশে মামলা হওয়ায় খুনের মামলায় আসামিদের গ্রেফতার দাবিতে সালমান শাহ ভক্তরা রাজপথে নেমেছেন। গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে কয়েকশো ভক্ত নারী পুরুষ শিশু বিক্ষোভ করেন। তারা সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের জন্য স্ত্রীর সামিরা ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ আসামিদের দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের দাবি জানান। হত্যা মামলার পর থেকে সালমান শাহ মৃত্যুর ঘটনাটি নতুন মোড় নিচ্ছে। এবার সামনে চলে এসেছে হত্যাকাণ্ডের জন্য দায়ী সন্দেহভাজন স্ত্রী সামিরা হোক, বিতর্কিত ব্যবসায়ী লেডি কিলার হিসেবে আলোচিত আজিজ মোহাম্মদ ভাই খলনায়ক ডনসহ চলচ্চিত্রের প্রভাবশালীরা। আদালতের নির্দেশে হত্যা মামলার পর থেকে গা ঢাকা দিয়েছে আসামিরা। ৫ আগস্টের পর আজিজ মোহাম্মদ ভাই দেশে এসে বিভিন্ন স্থানে হুমকি-ধমকি ও বিতর্কিত কর্মকাণ্ড শুরু করলে নতুন করে আলোচনায় আসে। কিন্তু এখন সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় আবারও আলোচনায় এসেছে আজিজ মোহাম্মদ ভাই। মামলাটি নড়াচড়ার পর থেকেই থাইল্যান্ডে বসে কলকাটি নাড়ছে এই লেডি কিলার। এদিকে, হত্যা মামলার পরও পুলিশ আসামিদের ধরতে কোন অভিযান চালায়নি। আসামিরা দম্ভের সাথে বাসায় অবস্থান করছে বলে সংবাদপত্রের বিবৃতি দিয়েছে। স্ত্রী সামিরা তৃতীয় স্বামী নিয়ে উচ্চ আদালতের বারান্দায় ঘুরঘুর করছে আগাম জামিনের আশায়। এতে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সালমান শাহ ভক্তরা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিচার দাবি ও বিবৃতির পর এবার রাজপথে নেমে এসেছেন ভক্তরা। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ সূত্র জানায়, আগে মামলাটি ডিবি তদন্ত করেছিল। তাই বর্তমানে আদালতের নির্দেশে রমনা থানা হত্যা মামলার পর থানা পুলিশের মামলাটি আপাতত তদন্ত করছে। তবে পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, গুরুতর মামলা হওয়ার কারণে মামলাটি অপরাধ তদন্ত বিভাগে তদন্তের জন্য ন্যস্ত হতে পারে। এদিকে, এখনও কোনো আসামি গ্রেফতার অথবা আসামিদের বিরুদ্ধে ফৌজদারী কার্যবিধি মোতাবেক ব্যবস্থা না নেওয়ায় মামলার তদন্ত নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।

সালমান শাহ হত্যা মামলার আসামিরা কে কোথায়?: চিত্রনায়ক সালমান শাহর মৃত্যুর ২৯ বছর পর আদালত তার মৃত্যুর ঘটনায় হত্যা মামলা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার ইস্কাটনের নিজ ফ্ল্যাটে রহস্যজনকভাবে মারা যান তিনি। তার মৃত্যু আত্মহত্যা বলে পিবিআই দাবি করলেও, নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে ২০২১ সালে নারাজি দিয়েছিলেন সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী। শেষে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। দীর্ঘ আইনি লড়াই শেষে গত ২১ অক্টোবর রাজধানীর রমনা থানায় সালমান শাহর মামা চলচ্চিত্র পরিচালক আলমগীর হোসেন কুমকুম বাদী হয়ে হত্যা মামলাটি করেন। হত্যা মামলার এজাহারে সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ী লতিফা হক লুছি ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী এবং অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ১১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন আছেন আসামি তালিকায়। এসব আসামি কে কোথায় আছেন সুনির্দিষ্ট করে জানাতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীগুলো।

আরও পড়ুন: নির্বাচন কঠোর নিরাপত্তার চাদরে ডেকে ফেলার নির্দেশ

এ হত্যা মামলায় যাদের আসামি করা হয়েছে তারা হলেন, সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক, শাশুড়ী লতিফা হক লুছি, বিতর্কিত ব্যবসায়ী অলিম্পিক ইন্ড্রাস্ট্রিজের মালিক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, বাংলা চলচ্চিত্রের খলনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল হক ওরফে ডন। ডেভিড, জাভেদ ও ফারুক নামের ৩ জনকে আসামি করা হয়েছে, যাদের ঠিকানা দেওয়া হয়েছে রাজধানীর বিএফডিসি। এছাড়া আরও চারজনকে আসামি করা হয়েছে। তারা হলেন- ফরিদপুরের রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ, রুবী, আ. ছাত্তার ও সাজু। মামলা পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৩ অক্টোবর আদালতে শুনানির সময় এ প্রথম উপস্থিত ছিলেন সালমান শাহর স্ত্রী সামিরা হক। এর এক সপ্তাহ পরই আদালতের নির্দেশে রাজধানীর রমনা থানায় হত্যা মামলাটি করা হয়। প্রশ্ন উঠেছে- আসামিরা এখন কে কোথায় আছেন? অনেক আগে থেকেই ব্যবসায়ী আজিজ মোহাম্মদ ভাই দেশের বাইরে অবস্থান করছেন বলে দায়িত্বশীল সূত্রগুলো জানিয়েছে। আসামি রেজভী আহমেদ ওরফে ফরহাদ অবস্থান করছেন লন্ডনে। সালমানের স্ত্রী সামিরা হক, তার মা লতিফা হক লুছি ও অপর খলনায়ক ডন দেশেই অবস্থান করছিলেন। ১৩ অক্টোবর আদালতেও উপস্থিত ছিলেন সামিরা। তবে ২০ অক্টোবর আদালত থেকে হত্যা মামলা দায়েরের নির্দেশ দিলে তারা গা ঢাকা দিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। অন্য আসামিদের অবস্থান এখনও নিশ্চিত করে জানাতে পারেনি পুলিশ। মামলাটি তদন্ত করে পুলিশের চারটি সংস্থা। প্রথমে রমনা থানার এসআই মাহবুবুর রহমান এ মামলার তদন্ত করেন। পরে মামলাটি ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তখন মামলাটি পর্যায়ক্রমে ডিবির দুই কর্মকর্তা তদন্ত করেন। তারা হচ্ছেনÑ সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হুমায়ুন কবীর ও এএসপি মো. মজিবুর রহমান। এরপর পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগে (সিআইডি) স্থানান্তর করা হয়। সেখানে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন এএসপি খালেক-উজ-জামান। এরপর আদালতের নির্দেশে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। এ সংস্থায় মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ছিলেন ইন্সপেক্টর মো. সিরাজুল ইসলাম বাবুল। এ তদন্তে তদারকি কর্মকর্তা ছিলেন পিবিআইর পুলিশ সুপার শফিউল আজম ও বশির আহমেদ। প্রত্যেকটি সংস্থার প্রতিবেদনেই চৌধুরী মোহাম্মদ শাহরিয়ার ওরফে ইমন ওরফে সালমান শাহ’র মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করা হয়।

সালমান শাহর মৃত্যুর ঘটনাটির জুডিসিয়াল (বিচারিক) তদন্তও করা হয়। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) কোর্টের বিচারক ইমদাদুল হক মামলাটির জুডিসিয়াল তদন্ত করেন। তার তদন্তেও তখন একই চিত্র উঠে আসে। গত ২১ অক্টোবর হত্যা মামলার পর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে রমনা থানার ইন্সপেক্টর আতিকুল আলম খান্দকারকে। এ বিষয়ে তিনি বলেন, নতুন করে মামলার তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। পাশাপাশি আসামিদের অবস্থান শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে। আসামিরা দেশে আছেন, নাকি দেশের বাইরে পালিয়ে গেছেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, জানলে তো ধরেই ফেলতাম। তারা কে কোথায় আছেন, সেটা জানার চেষ্টা চলছে। আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সে জন্য ইমিগ্রেশনে মামলার তথ্য পাঠানো হয়েছে।

আরও পড়ুন: দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ৭০ হাজার ছাড়িয়েছে