ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন

রাজশাহী জেলার হালচাল, বিএনপির দুর্গে জামায়াতের চোখ

Sanchoy Biswas
আমানুল্লাহ আমান, রাজশাহী
প্রকাশিত: ৫:২৫ অপরাহ্ন, ৩০ অক্টোবর ২০২৫ | আপডেট: ৯:১১ অপরাহ্ন, ৩০ অক্টোবর ২০২৫
ছবিঃ সংগৃহীত
ছবিঃ সংগৃহীত

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে পাড়া-মহল্লায় নানা কর্মসূচি শুরু করেছেন রাজশাহীর ৬টি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ইতোমধ্যে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আসনে বড় দ্দুল বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দুজন হেভিওয়েট প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দিতা করার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জামায়াত ছাড়াও প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে এনসিপি, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও এবি পার্টি। তবে প্রতিটি আসনে জয়ের আশা নিয়ে আত্মবিশ্বাসের সাথে মাঠে নেমেছে জামায়াত। আর সতর্ক অবস্থায় জনমুখী কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বিএনপি।

রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) আসনে জামায়াতে ইসলামী থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবেই তাকে দেখছেন ভোটাররা। এছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) থেকে নির্বাচনে থাকতে পারেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজশাহী জেলার সাবেক সদস্য সচিব মোহাম্মদ রহমতউল্লাহ। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির রাজশাহী জেলার সহ সভাপতি মুফতি আরিফুল ইসলাম। আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির রাজশাহী জেলা ও মহানগরের সমন্বয়ক ড. মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান মুহসেনী লড়বেন এ আসন থেকে। এসব দলের একক প্রার্থী চূড়ান্ত হলেও বিএনপির মনোনয়নের দৌঁড়ে রয়েছেন বেশ কয়েকজন নেতা।

আরও পড়ুন: বরগুনা-২ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী কর্নেল হারুন আর রশিদকে ধান উপহার দিলো নুরুল ইসলাম

সূত্র জানিয়েছে, বিএনপির অন্তত হাফ ডজন নেতা রয়েছেন মনোয়নের আশায়। তার হলেনÑ বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিন, সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিষ্টার মাহফুজুর রহমান (মিলন), জেলা বিএনপির সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকার, রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক নিক্সন গ্রুপের চেয়ারম্যান এ্যাডভোকেট সুলতানুল ইসলাম তারেক, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি সাজেদুর রহমান মার্কনি এবং জিয়া পরিষদের রাজশাহী বিভাগীয় কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারি মহাসচিব অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বিপ্লব। দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের নিয়ে এলাকাভিত্তিক গণসংযোগ, সভা, সমাবেশ ও মিছিলসহ বিভিন্ন কার্যক্রম শুরু করেছেন তারা। ধানের শীষের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে প্রত্যেকেই আশা প্রকাশ করছেন।

এ ব্যপারে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য এবং সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী ব্যারিষ্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অবঃ) শরিফ উদ্দিন বলেন, এলাকার লোকজন আমাকেই চাই। বিভিন্ন এলাকায় যাচ্ছি, দেখতে পাচ্ছি তাদের আগ্রহ ও ভালবাসা। ইনশাআল্লাহ দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। আমি আশাবাদি। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ব্যারিষ্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, বিএনপির মতো বড় দলে অনেক প্রার্থী থাকবে এটাই স্বাভাবিক। তবে এবার শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বড় পদে ছিলেন এসব বিষয় নয়, বরং আন্দোলন সংগ্রামে বিগত বছরগুলোতে দলের প্রতি নমিনেশন প্রত্যাশীদের অবদানের কথা বিবেচনা  করা হবে বলে আমি মনে করি।

আরও পড়ুন: বিলাসবহুল গাড়িতে বহন হচ্ছিল গাঁজা, বাধা দিলেন পুলিশ

তবে পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামী জয়ের দৃঢ় আকাঙ্খার কথা জানিয়েছে। এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির এবং সাবেক এমপি ও আগামী নির্বাচনে রাজশাহী-১ আসনের প্রার্থী অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে জামায়াতে ইসলামী বিজয় লাভ করবে। দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে মানুষের কল্যাণের জন্য যে সরকার হওয়া দরকার ছিল, সেটা হয়নি। বিশেষ করে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ, পুঁজিবাদ, সমাজবাদ, জাতীয়তাবাদ, মানবরচিত যত মতবাদ আছে, এই মতবাদগুলো কখনো মানুষের কল্যাণ দিতে পারেনি, এটা একেবারে পরীক্ষিত সত্য। মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ (সা.) আসার পর ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম হলো, তিঁনি ইসলামি সমাজ বিনির্মাণ করলেন, মানুষের আইনের পরিবর্তে আল্লাহর আইন যখন চালু হলো, তখন মানুষের দুঃখ কষ্ট দূর হলো।

অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, আমরা মনে করি, যত চাঁদাবাজি আছে, যত অন্যায় আছে, এগুলো দূর করতে হলে, পিআর সিস্টেমে নির্বাচন দরকার। পিআর সিস্টেম নির্বাচন হলে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামী যেভাবে সংগঠন এতদিন ধরে মজবুত করছে, এতদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে, ইনশাআল্লাহ জামায়াতে ইসলামী বিজয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ। আমাদের চেষ্টা আর সকলের কাছে আমাদের দোয়া, চূড়ান্ত ফায়সালা আল্লাহর কাছে, তিনি যাকে বিজয়ী করবেন, সে বিজয়ী হবেন। তিনি যাকে পরাজিত করবেন, সত্যিকার অর্থে সে পরাজিত হবে।

জনগণের প্রত্যাশার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, দীর্ঘদিন আল্লাহর আইন সমাজ থেকে অনুপস্থিত। আগামী দিনে জাতীয় সংসদে কোরআনকে আমরা পৌঁছাতে চাই। কোরআনের আইন চালু করতে চাই। জনগণ এটা বলে ফেলছে এখন, এটাকেও দেখলাম, ওটাকেও দেখলাম। এখন যাদেরকে দেখা হয়নি, এই ইসলাম। সেজন্য এখন সবাই বলছে, সকলের দেখা শেষ, আগামী দিনে ইসলামের বাংলাদেশ। আমরা বিশ্বাস করি, জনগণ যেভাবে নামছে, সাধারণ জনগণ যেভাবে সাড়া দিচ্ছে, আল্লাহ যদি রহম করেন, ইনশাআল্লাহ জামায়াতে ইসলামী জয়লাভ করবে, দাঁড়িপাল্লা বিজয় লাভ করবে ইনশাআল্লাহ।

রাজশাহী-২ (সদর) আসনকে ‘ভিআইপি আসন’ বলা হয়। এটি সিটি কর্পোরেশন এরিয়া নিয়ে গঠিত। এখানে মোট ভোটার ৩ লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন ভোটার  রয়েছেন। স্বাধীনতার পর রাজশাহীর এ আসন থেকে নির্বাচনে জয় পেয়ে তিনবার সংসদে গেছে বিএনপি। এছাড়া দুবার জাতীয় পার্টি, তিনবার ওয়ার্কার্স পার্টি, একবার জাসদ ও একবার স্বতন্ত্র প্রার্থী জিতে সংসদে গেছেন। ওয়ার্কার্স পার্টি আওয়ামী জোট থেকে হাসিনার আমলের শেষ তিনবারের প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে জয় নিয়ে সংসদে যায়। তবে এবার আওয়ামী লীগের হয়ে অংশগ্রহণের কেউ নেই। ওয়ার্কার্স পার্টিও লাপাত্তা। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপি ও জামায়াতের। সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনুর নাম প্রায় নিশ্চিত।

প্রার্থী চূড়ান্ত হয়েছে জামায়াত, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, এনসিপি ও বিজেপির (পার্থ)। জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী মহানগরীর নায়েবে আমির প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর মনোনয়ন পেয়েছেন। এনসিপি থেকে দলটির রাজশাহী মহানগরের প্রধান সমন্বয়কারী মোবাশ্বের রাজের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের রাজশাহী মহানগরের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মো. ফয়সাল হোসেন মনি পেয়েছেন মনোনয়ন। বিজেপির (পার্থ) রাজশাহী মহানগরের আহবায়ক সরদার জুয়েলও নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশী। এছাড়া আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির রাজশাহী বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহাম্মদ সাঈদ নোমান অংশ নেবেন এ আসনে।

জামায়াতে ইসলামী নগরীর বিভিন্ন ওয়ার্ডে কর্মসূচি শুরু করেছে। হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের অনুসারীদের সাথে মিটিং করেছেন দলটির প্রার্থী। এ ব্যাপারে সদর আসনে দলটির প্রার্থী ও মহানগরী শাখার নায়েবে আমির প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, আমি জনগণের সেবক হিসেবে কাজ করতে চাই। এ অঞ্চলে অসেক সমস্যা। স্বাস্থ্যসেবায় অনেক বেশি সমস্যায় পড়ে মানুষ। আমি চিকিৎসক হিসেবে এগুলো উপলব্ধি করেছি এবং ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছি। চিকিৎসা নিতে মানুষের ব্যয় কমাতেও আমি কাজ করবো। আশা করি, সমাধান হবে।

তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী থেকে আমাকে রাজশাহী সদর আসনে মনোনীত করা হয়েছে। কর্মসংস্থান চালু, দক্ষ জনবল ও উদ্যোক্তা তৈরি, ইপিজেড স্থাপন, পর্যটন কেন্দ্র তৈরি, গার্মেন্টস শিল্পের বিকাশ, স্টেডিয়ামকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তর, শিক্ষার ব্যাপক প্রসার, নারীদের কাজের পরিবেশ, প্রতিবন্ধী পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ পদক্ষেপ, আইটি খাতে সুযোগ সৃষ্টিসহ একগুচ্ছ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি।

প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আরও বলেন, রাজশাহী রেশমের নগরী। এছাড়া এখানে রয়েছে পদ্মা নদী। কৃষিতেও অপার সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষিপণ্য পচনশীল হওয়ায় কৃষকরা অনেক সময় নায্যমূল্য পান না। এসব সেক্টর নিয়ে আমি কাজ করবো। পদ্মা ঘিরে পর্যটন ও নির্মল বিনোদন কেন্দ্র তৈরি করবো। এছাড়া এখানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সেটি হয়নি। আমি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনেও কাজ করে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা তৈরির উর্বর ক্ষেত্র তৈরি করতে চাই। আমি নির্বাচিত হলে এসব বাস্তবায়ন করে রাজশাহীকে নম্বর ওয়ান সিটি হিসেবে গড়ে তুলবো ইনশাআল্লাহ। সেজন্য জনগণের সমর্থন চাই।

এ ব্যপারে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র ও সাবেক এমপি মিজানুর রহমান মিনু বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, দল যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই আমার সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন আন্দোলন সংগ্রামে রাজশাহীর ঐতিহ্য রয়েছে। আমরা ধানের শীষের হয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে মাঠে নামবো। ৩১ দফা নিয়েই কাজ করবো। রাজশাহীকে যেভাবে গড়ে তোলা দরকার, আমি সেভাবেই গড়ে তুলবো। আসনটিতে এনসিপির প্রার্থী মোবাশ্বের রাজ বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, কেন্দ্র থেকে আমাদের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমাদের নির্বাচনী কার্যক্রমের তৎপরতা শুরু হবে। দ্রুতই পাবলিকলি কার্যক্রমে মাঠে নামব।

রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের প্রার্থীরা বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ আসনে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌঁড়ে রয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সহ-সম্পাদক ও রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রায়হানুল ইসলাম রায়হান, সাবেক ভূমি প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট কবির হোসেনের ছেলে নাসির হোসেন অস্থির, জেলা বিএনপির সাবেক দফতর সম্পাদক শরিফুল হক ও মোহনপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুস সামাদ। সূত্র জানিয়েছে, এ আসনে শফিকুল হক মিলনই হতে পারেন ধানের শীষের প্রার্থী। নেতাকর্মীদের মাঝে তিনি বেশ জনপ্রিয়। ঐতিহ্যবাহী রাজশাহী কলেজ ছাত্র সংসদের নির্বাচিত এজিএস ছিলেন তিনি। এরপর দীর্ঘ সময় রাজশাহী মহানগর ছাত্রদলের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন মিলন। এছাড়া জনগণের মাঝেও তিনি গ্রহণযোগ্য। ফলে মিলনকেই আসনটিতে বিবেচনা করা হচ্ছে বলে সূত্রটি জানিয়েছে। এ বিষয়ে শফিকুল হক মিলন বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, আগামীর রাষ্ট্রনায়ক তারেক রহমান যেটা সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটাই আমরা বাস্তবায়ন করতে প্রস্তুত আছি। আমার অবস্থান কারও অজানা নয়। আমি মনোনয়ন পাব বলে আশা করছি।

আর জামায়াতে ইসলামী থেকে দলটির রাজশাহী মহানগরীর ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক ও পবার হড়গ্রাম ইউনিয়নের ৫ বারের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদকে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। তিনি প্রতিটি এলাকায় গিয়ে কর্মসূচি করছেন। আবুল কালাম আজাদ বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, ইনসাফের প্রতীক হিসেবে পবা-মোহনপুরের জনগণ দাঁড়িপাল্লায় ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করবে। ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের আমলে ভোট চুরির মহাযজ্ঞ চলেছিল, তখনও আমাকে কেউ হারাতে পারেনি। ৫ বার ইউপি চেয়্যারম্যান ছিলাম। জনগণের জন্য কাজ করেছিলাম বলেই তারা বারবার আমাকে নির্বাচিত করেছিল। এবার আল্লাহ চাইলে সংসদে গিয়ে দুই উপজেলার মানুষের জন্য কাজ করব। এনসিপি থেকে প্রার্থী হচ্ছেন দলটির রাজশাহী জেলার ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু। তিনি বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, দেশের পরিবর্তন হয়েছে। ফ্যাসিস্ট পালিয়েছে। নির্বাচিত হওয়ার ব্যাপারে আমরা আত্মবিশ্বাসী। নির্বাচন ফেয়ার হলে আরেকটি বড় পরিবর্তন ঘটবে। এছাড়া এবি পার্টি থেকে আফজাল হোসেন অংশ নেবেন নির্বাচনে। তিনি বলেন, আমরা সাংগঠনিক কাজ করছি। চূড়ান্ত আরও পরে জানাতে পারবো।

রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসন জেলার সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ ও ভয়ংকর হিসেবে পরিচিত। জেএমবির বাংলা ভাইয়ের উত্থান এখান থেকেই। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে আসনটি থেকে অংশ নিতে চান বিএনপির অন্তত ৭ জন নেতা। তবে জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাশে তাদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। জানা গেছে, ডা. আবদুল বারী সরদার জামায়াতে ইসলামী থেকে ও মো. আবু মুসা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশিদের মধ্যে রয়েছেন রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি তোফাজ্জল হোসেন তপু, জেলা যুবদলের সদস্য সচিব ও জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল, বাগমারা উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব কামাল হোসেন, উপজেলা বিএনপির আহবায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ডিএম জিয়াউর রহমান জিয়া, সাবেক ছাত্রদল নেতা ও আমেরিকা প্রবাসী ড. জাহিদ দেওয়ান শামীম, অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম, ড্যাব নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য বিষয়ক সহ-সম্পাদক ডা. আশফাকুর রহমান শেলী, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সদস্য ব্যারিস্টার সালেকুজ্জামান সাগর। তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ অবস্থান থেকে মনোনয়নের আশায় মাঠে কাজ করছেন।

আসনটিতে বিএনপির শক্ত প্রতিদ্বন্দী হয়ে উঠেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটির প্রার্থী ডা. আব্দুল বারী, যিনি একজন চিকিৎসক উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ভবানীগঞ্জে তার ক্লিনিকে দীর্ঘিদন ধরে চিকিৎসা সেবার মাধ্যমে জনসমর্থন তৈরি করেছেন। তাকে শক্ত প্রার্থী হিসেবে দেখছে অন্য দলগুলো। এ আসনেও জয় প্রত্যাশা করছে জামায়াতে ইসলামী। যদিও এই আসনটি বিগত আওয়ামী লীগ আমলের বিতর্কিত নির্বাচন ছাড়া বিএনপিই জয়ী হয়ে আসছিল। এ বিষয়ে ডা. আবদুল বারী সরদার বলেন, মানুষ গত ১৫ বছরের পুনরাবৃত্তি চায় না। আগে যা কিছু হয়েছে এসব থেকে মানুষ শিক্ষা নিয়েছে। আমি দীর্ঘ ৩০ বছর এ জনপদে মানুষের চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছি, তারা আমাকে ভালবাসেন, দলমত নির্বিশেষে ভোট দেবেন বলে আমার বিশ্বাস।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী রেজাউল করিম টুটুল বলেন, আমি রাজনীতির জন্য চাকরি ছাড়তে বাধ্য হয়েছি ও আমার একমাত্র ছোট ভাইকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে। মামলা-হামলার শিকার হয়েছি জেল খেটেছি। ৩১ দফা নিয়ে কাজ করছি। আশা করি, দল আমাকে মূল্যায়ন করবে। 

আরেক মনোনয়ন প্রত্যাশী কামাল হোসেন বলেন, দলের চরম দুঃসময়ে আমি সরকারি চাকরি ছেড়ে নেতাকর্মীদের সাহস জুগিয়েছি, নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করেছি। হামলা-মামলার শিকার হয়েছি, জেলে গেছি। দল যদি বিবেচনা করে আমাকে মনোনয়ন দেবে। আমি মানুষের পাশে ছিলাম। মানুষও আমাকে চায়। তৃণমূলে আমার জনপ্রিয়তা আছে। তাই মনে করি দল আমাকে ধানের শীষের হাল ধরার সুযোগ দেবে।

রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) আসনে তিনটি বড় ইসলামী দল নিজেদের প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। তবে বেশ কয়েকজন রয়েছেন বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী। তারা মাঠেও নেমেছেন। যোগাযোগ করছেন হাইকামন্ডের সাথে। বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশীরা হলেনÑ রাজশাহী জেলা বিএনপির আহব্বায়ক কমিটি সদস্য পুঠিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মন্ডল, কৃষক দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য মাহবুবা হাবিবা, দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাসান ফারুক ইমাম সুমন, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক কোষাধ্যক্ষ গোলাম মোস্তাফা, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিক, রাজশাহী জেলা শ্রমিকদলের সভাপতি রোকুজ্জামান আলম, পুঠিয়া উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি খাইরুল হক ইস্পা শিমুল, জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক এমপি প্রয়াত এডভোকেট নাদিম মোস্তফার ছেলে জুলফার নাঈম মোস্তফা বিষ্ময় এবং শিল্পপতি মোহাম্মাদ আব্দুস সাত্তার। এ ব্যাপারে আবু বকর সিদ্দিক বলেন, আমি দীর্ঘ তিন যুগ দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের দুঃশাসনকালে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে দল মূল্যায়ন করবে।

রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান মাহমুদা হাবিবা বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হন ২০০৫ সালে। টকশো ব্যক্তিত্ব হিসাবে তার পরিচিত রয়েছে। হাবিবার পিতা প্রয়াত আয়েন উদ্দিন রাজশাহী-৫ আসনের দুই বারের সাবেক এমপি। মাহমুদা হাবিবা বলেন, এলাকায় আমার অবস্থান ভাল। যখনই আসি, তখন মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ হই। দল চাইলে আমাকে মনোনয়ন দেবে। আমি জনগণের আশা আকাঙ্খা পূরণে  সর্বোচ্চ ভূমিকা রেখে যাব। তিনি আরও বলেন, নতুন সময়ের প্রত্যাশা পূরণে রাজশাহী-৫ আসনে আমি নিঃসন্দেহে আমার দলের জন্য সেরা পছন্দ হব বলে আস্থা রাখি। আমি বিশ্বাস করি, দলের শীর্ষ নেতৃত্ব দলের জন্য আমার সুদীর্ঘ নিরলস পরিশ্রমের মূল্যায়ন করবে। বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী অধ্যাপক নজরুল ইসলাম মন্ডল বলেন, দলের হাইকমান্ড আমাকে বিবেচনায় রেখেছে। এলাকায় মানুষের সাথে কথা বলছি, তারা আমার প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছে। আমার বিশ্বাস দল আমাকে মনোনয়ন দেবে। নির্বাচিত হব বলে আশা করছি। 

আসনটিতে জামায়াতের মনোনয়ন পেয়েছেন দলটির জেলা কমিটির সহকারী সেক্রেটারি মু. নুরুজ্জামান লিটন। আর ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হচ্ছেন দলটির পুঠিয়া থানার সভাপতি হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন। এছাড়া আসনটিতে প্রার্থী দিয়েছে বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিস। দলটির রাজশাহী জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ এ আসন থেকে নির্বাচনে লড়বেন। এ ব্যাপারে জামায়াতের প্রার্থী মু. নুরুজ্জামান লিটন বলেন, দল থেকে আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে। আমরা জয়ী হব ইনশাআল্লাহ। জনগণ এবার দাঁড়িপাল্লায় ভোট দেবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলে দাঁড়িপাল্লায় মানুষ ভোট দেবে। জামায়াতে ইসলামীই একমাত্র জনগণকে সুখের নিশ্চয়তা দিতে পারে।

আমরা জনগণকে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমুক্ত পুঠিয়া-দুর্গাপুর উপহার দেব। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হাফেজ মাওলানা রুহুল আমিন বলেন, আমরা মাঠে নামব। মানুষের আস্থা রয়েছে আমাদের দলের প্রতি। সব দল দেখা শেষ, এবার হাতপাখার বাংলাদেশ। শান্তির প্রতিক হাতপাখায় ভোট দেবে জনগণ। আমরা জয় পাব ইনশাআল্লাহ। বাংলাদেশ খেলাফতে মজলিসের রাজশাহী জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল হামিদ বলেন, আমরা ফ্যাসিস্ট বিরোধী আন্দোলনে ছিলাম, আমরা নির্বাচনে অংশ নেব। তবে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে সবার আগে। তবে নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা ও প্রশ্ন থাকবে না।

এদিকে, ইতোমধ্যে চরম উত্তপ্ত রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) সংসদীয় এলাকা। আসনটিতে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মাঝে সংঘর্ষ ও মামলা পাল্টা মামলার ঘটনা ঘটেছে। প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। জামায়াত, এনসিপি ও ইসলামী আন্দোলন । তবে বিএনপির কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন মনোনয়নের দৌঁড়ে। তারা হলেনÑ জেলা বিএনপির আহবায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা যুবদলের সাবেক আহবায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল, জেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান খাঁন মানিক ও যুবদল মালয়েশিয়া মালাক্কা শাখার সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম বিলাত। এদের মধ্যে আবু সাঈদ চাঁদের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে বিএনপির কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে।

এ বিষয়ে আবু সাঈদ চাঁদ বাংলাবাজার পত্রিকাকে বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার আমলে এমন কোনো নির্যাতন নেই, যেটা আমার ওপর করা হয়নি। মামলা, হামলা, জেল, রিমান্ড সব হয়েছে আমার। আমি জেলে থাকা অবস্থায় আমার মা ও স্ত্রী মারা গেছেন। আমি দলের নেতৃত্বে থেকে নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করেছি। বন্যার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছি। তারেক রহমানের ৩১ দফা নিয়ে কাজ করেছি। আমার মূল্যায়ন হবে এটা বিশ্বাস করছি। বাঘা ও চারঘাটের জনগণ আমার সাথে আছে। তারা ধানের শীষের চাঁদকে ভোট দেবে। জেলা যুবদলের সাবেক আহবায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল বলেন, মানবিক সহায়তা নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি, সহযোগিতা করছি। জনগণ আমাকে পছন্দ করে। নির্বাচনে আমি মনোনয়ন পাব। নির্বাচিত হলে জনগণের সেবক হয়ে কাজ করব। 

আসনটিতে জামায়াতে ইসলামী থেকে দলটির জেলা কমিটির সহকারি সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক নির্বাচনে লড়বেন। তিনি বলেন, জনগণ আমাদের সাথে আছে। অনেক সরকার আসলো, গেল, জনগণ কিছুই পেল না। জনগণ এবার জামায়াতকে নির্বাচিত করবে। আর এনসিপি থেকে প্রার্থী হবেন দলটির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন। তিনি বলেন, সংগঠন গোছাচ্ছি। বাঘা-চারঘাটের অবস্থা ভিন্ন কিছু বলব না। এখানকার রাজনীতি দেশের অন্য অঞ্চলের চেয়ে ভিন্ন কিছু নয়। হাসিনার পতনের পর মানুষ উদ্বুদ্ধ হয়েছে, আশা নিয়ে আছে। এছাড়া এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত হাতপাখা প্রতীকের প্রার্থী দলটির বাঘা উপজেলার সভাপতি আমিনুল ইসলাম।

এনসিপির সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান ইমন বাংলাবাজার পত্রিকাকে, আমরা কোনো ফ্যাসিস্ট প্রতিষ্ঠিত হতে দেব না। হাসিনার পতনের পর মানুষ আশা নিয়ে আছে। আমাদের কাজ চলছে। উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে আমাদের নেতাকর্মীদের নিয়ে গুছিয়ে নিচ্ছি। সামনে ভাল নির্বাচন হবে।